গোপাল হালদার, পটুয়াখালী:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসনের নৌকার মাঝি হতে চায় স্বামী-স্ত্রী, পিতা পুত্র ও আপন দুই ভাই। এ আসনে মোট ২০ জন প্রার্থী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন হেবিওয়েট প্রার্থী ছাড়া অধিকাংশই তরুন। তবুও তারা এমপি হওয়ার প্রার্থীতা পোষন করছেন। তবে একই পরিবারের একাধিক সদস্যের প্রার্থী হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে চলছে নানা ধরনে গুঞ্জন।
জানা গেছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বর্তমান এমপি অধ্যক্ষ মো. মহিব্বুর রহমান ও তার সহধর্মিনী উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক অধ্যক্ষ ফাতেমা আক্তার রেখা। একই আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো.মাহবুবুর রহমান ও তাঁর ছোট ভাই বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) মো.হাবিবুর রহমান।
পিতাপুত্রের মধ্যে রয়েছে বর্তমান পৌরসভা মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার ও তাঁর পুত্র কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য বিকাশ চন্দ্র হাওলাদার, আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ আখতারুজাম্মান কোক্কা ও তাঁর পুত্র যুবলীগ নেতা সৈয়দ মশিউর রহমান শিমু।
এছাড়া বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসান, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সৈয়দ নাসির উদ্দীন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব তালুকদার, আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার মিল্টন, আব্দুল্লাহ আল ইসলাম লিটন, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. শামীম আল সাইফুল সোহাগ, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা ব্যারিষ্টার জুনায়েদ হাসিব, ইঞ্জিনিয়ার মো.নাসির উদ্দিন, শহিদুল্লাহ ওসমানী, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বাবুল, মো. বাশেদ সিমন, গৌতম চন্দ্র হাওলাদার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন।
এ বিষয় বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান মহিব বলেন, আমি গত পাঁচ বছরে কলাপাড়া- রাঙ্গাবালী এলাকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে ছিলাম। দলের ভাবমূর্তি ও সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে চাই। দল পুনরায় আমাকে নৌকার হাল ধরার দায়িত্ব দেবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী আমার সমর্থনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, এর আগে তিনি গতবারেও ফরম কিনেছিলেন।’
এ বিষয় তার স্ত্রী অধ্যক্ষ ফাতিমা আক্তার রেখা বলেন, আমি আমার স্বামী অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান মহিবের পরামর্শেই নৌকার মনোনয়ন কিনেছি। এই পরিবার সারাজীবন নৌকার সঙ্গে ছিল, আছে এবং থাকবে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন।
জানতে চাইলে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর তালুকদার বলেন, আমার ভাইয়ের মনোনয়নপত্র কেনা ও চাওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। তবে কে দলের মনোনয়ন পাবেন সে সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই নৌকার প্রার্থী হবেন।
জানতে চাইলে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর তালুকদার বলেন, আমার ভাইয়ের মনোনয়নপত্র কেনা ও চাওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। তবে কে দলের মনোনয়ন পাবেন সে সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই নৌকার প্রার্থী হবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কয়েকজন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক জানান, পারিবারিকভাবে জোটবদ্ধ হয়ে যেভাবে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনছেন নেতারা, তাতে মনে হয় আওয়ামী লীগ তাদের পারিবারিক সম্পত্তি। পারিবারিকভাবে তারা সব ভোগ করেন। এ ব্যাপারে ৩ জন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ করলে তারা কোনো মন্তব্য করতেই রাজি হয়নি। তবে নেতাদের এই পারিবারিক মনোনয়ন যুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীরা বিব্রত।
এ বিষয় জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামিলীগ সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুল মন্নান বলেন, ‘এতে করে নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হয়, টাকা থাকলেই মনোনয়ন কিনতে হবে এক পরিবার থেকে একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন কিনবে এটা ঠিক না’।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার শেষ দিন। শনিবার এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডেকেছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে এই সভা করার কথা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
এইবাংলা /নাদিরা শিমু/Ns