নিজস্ব প্রতিবেদক :::
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে শেষ পর্যন্ত তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত থেকে সরে যেতে পারে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সুত্রমতে, দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র চিঠির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি অস্বীকার করার কারণে সংলাপ চেয়ে চিঠির কার্যকারীতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ মেটানোর চেষ্টায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সোমবার বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কাছে কাছে ডোনাল্ড লু’র একটি চিঠি পৌঁছে দেন। দলগুলো চিঠি পাওয়ার তথ্যও নিশ্চিত করেছে। ওই চিঠিতে শর্তহীনভাবে সংলাপে বসার তাগিদ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের কাছেও চিঠিটি পৌঁছানোর কথা। তবে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া কোনো চিঠি পাননি বলে জানান।
এদিকে, তফসিল ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র চিঠি কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, কমিশনের প্রস্তুত করা রোডম্যাপ অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
জাহাংগীর আলম বলেন, কখন, কীভাবে তফসিল ঘোষণা হবে, তা আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টায় সাংবাদিকদের জানানো হবে।
শর্তহীনভাবে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু যে চিঠি রাজনৈতিক দলগুলোকে দিচ্ছেন তেমন কোনো চিঠি এখনো পায়নি আওয়ামী লীগ।
এদিকে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎ ও ডোনাল্ড লু’র চিঠির বিষয়ে বিবৃতি দেয় ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে। এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার দিকে যাবে কিনা সে বিষয়ে নানা কানাঘুঁষা চলছে।
তবে ডোনাল্ড লুর চিঠির তফসিল ঘোষণায় কোনো প্রভাব ফেলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ, চিঠি কমিশনের কাছে আসেনি। প্রথমত, এটি সংলাপের চিঠি কি না এটা তো কমিশন অবহিত নয়। সুতরাং কমিশন তার নিজস্ব গতিতে সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার আলোকে ঘোষিত রোডম্যাপ (পথনকশা) অনুযায়ী এগিয়ে যাবে।
এদিকে, হোয়াইট হাউসের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র পাঠানো সর্বশেষ চিঠির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদের মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন ডোনাল্ড লু। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোন পক্ষ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে৷ ‘
সংলাপের কথা বলা হলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের বেশির ভাগ নেতা জেলে, কমপক্ষে ৫ জন গার্মেন্ট শ্রমিককে হত্যা, এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে সংলাপ হবে? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান গণতন্ত্র ও শান্তির পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিবেশের উপর নজর রাখছে। ‘
এদিকে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য অপেক্ষায় আছে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া দলগুলোও। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর অসহযোগের মতো কর্মসূচির সিদ্ধান্ত অনেকটাই চুড়ান্ত।
বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সরকার দমনপীড়ন, মামলা – ধরপাকরের মধ্যে নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কিনা সেটির উপর পরবর্তী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় পার্টির মতো সরকারের সাথে জোটবদ্ধ দলগুলোও।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দমন পীড়ন, মামলা – ধরপাকড়ের মধ্যে সংলাপের কোন পরিবেশই নেই। এই অবস্থায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দায় সরকারকেই নিতে হবে। বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম দেশ। এখানকার শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষে। ‘
এছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন যেদিনই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে সেদিনই নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন। এর মাধ্যমে প্রথম দল হিসেবে তারাই তফসিল ঘোষণার দিনকে সামনে রেখে কোন কর্মসূচি ঘোষণা করলো।
নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সুত্রমতে, তফসিল ঘোষণা করার প্রস্তুতির মাঝখানের দুইদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রাথমিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে।
এইবাংলা/ তুহিন