25.3 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

চট্টগ্রামে মাঠে নেই বিএনপি নেতারা, বিবৃতি নির্ভর অবরোধ

আরও পড়ুন

মেজাম্মেল মেহেদী  :::

বিএনপির ডাকা অবরোধে দলটির চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলার শীর্ষ নেতাদের দেখা মেলেনি মাঠে৷ চট্টগ্রামে থেকে  কেন্দ্রীয় বিএনপিতে স্থান পাওয়া কোন নেতাকেই মাঠে দেখা যায় নি। তবে গণমাধ্যমে  নিয়মিত বিবৃতি পাঠিয়ে অবরোধ পালনের আহবান জানানোতে সক্রিয় রয়েছে বিএনপির ডাকসাইটে এই নেতা। 

দলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও উত্তর জেলার আহবায়ক  গোলাম আকবর খন্দকার, ভাইস চেয়ারম্যান  মীর মোহাম্মদ নাসিন উদ্দিন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর,  দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা মাঠে নেই। 

তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, অবরোধ চলাকালীন সময়ে মামলা ও গ্রেপ্তার আতন্কে ঘরছাড়া ছাত্রদল-যুবদল-স্বেচ্চাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রাম শহর ও চট্টগ্রামের পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে মামলা ও পুলিশি তল্লাশির কারণে একপ্রকার মাঠেছাড়া বিএনপি-জামাত। 

 ২৮ অক্টোবর  ঢাকার মহাসমাবেশের পর বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে গত দুই সপ্তাহে চট্টগ্রাম মহানগর,  উত্তর ও  দক্ষিণ জেলায় এ পর্যন্ত ৪৮ টি মামলায় ৭০০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার হয়েছে পুলিশের হাতে ।

শনিবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মহানগর বিএনপির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে,  মহানগরীর ১১ থানায় ১৬ মামলায় গ্রেপ্তার ৩৪০ জন, উত্তর জেলার আওতাধীন বিভিন্ন থানায় ১৯টি মামলায় ১৮০ জন এবং দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় ১৮০ জন নেতা-কর্মী।

শনিবার (১১ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. ইদ্রিস আলী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৫ দিনে নগরীতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এসময়ে মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ইকবাল চৌধুরীসহ এ পর্যন্ত ৩৪০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।গত বৃহস্পতিবার রাতে সদরঘাট থানায় দায়ের করা মামলায় একই পরিবারের চার ভাইকে আসামি করা হয়েছে। তা ছাড়া গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপির আরও ২০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এই ২০ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৩৪০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, যুগ্ম আহ্বায়ক এস কে হুদা তোতন, মো. শাহ আলম, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল হাশেম, মনজুর আলম চৌধুরী মঞ্জু ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দীপ্তিসহ বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বিভিন্ন থানায় মামলাগুলোর মধ্যে চান্দগাঁও থানায় একটি, পাঁচলাইশ থানায় একটি, বায়েজিদ থানায় ৩টি, আকবর শাহ থানায় ২টি, খুলশী থানায় ৩টি, পাহাড়তলী থানায় একটি, ইপিজেড থানায় একটি, কোতোয়ালি থানায় একটি, হালিশহর থানায় একটি, প‌তেঙ্গা থানায় একটি ও সদরঘাট থানায় একটিসহ মোট ১৬টি মামলা হয়েছে। 

এদিকে উত্তর জেলায় শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রাতে হাটহাজারী থানায় দায়ের করা মামলাসহ মোট মামলা হয়েছে ১৯টি।  গ্রেপ্তার হয়েছেন ২১০ জনের বেশি নেতাকর্মী। দক্ষিণ জেলায় ১৩টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় ১৮০ জন নেতা-কর্মী।

এদিকে এক বিবৃতিতে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শান্তিপূর্ণ অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের গণগ্রেপ্তার, মামলা ও গণবিরোধী আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারা।নেতারা  রবিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিএনপি’র ডাকা চতুর্থ দফা অবরোধ কর্মসূচি পুলিশের গণগ্রেপ্তার উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করার জন্য চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের গণগ্রেপ্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মো. নাছির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল সমাবেশের মধ্য দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। বিন্দুমাত্র বল প্রয়োগ না করেই ধৈর্য্যের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এ কর্মসূচি সফল করছেন। জনগণ বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়েছে দেখে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা আগের কায়দায় তাদের পেটোয়া বাহিনী পুলিশকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। ভূয়া, গায়েবি অভিযোগ তুলে পুলিশের সদস্যরা এখন বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিরাতে তল্লাশির নামে হয়রানি করছে, পরিবারের সদস্যদের অকথ্য নির্যাতন করছে। পুলিশের কারণে বিএনপি নেতা-কর্মীরা এখন ঘরে থাকতে পারছে না। পেলেই গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন গায়েবি মামলার আসামি করে দিচ্ছে। সক্রিয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিএনপির সমর্থকরা পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

গণগ্রেপ্তার ও মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) স্পিনা রানী প্রামাণিক বলেন, হরতাল অবরোধের নামে যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে সম্পদ নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।ঘটনাস্থল থেকে যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদের স্বীকারোক্তি ও পুলিশের তদন্তে যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে নাশকতা মামলায় আসামি করছে পুলিশ। কাউকে রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে কোনো অভিযান পরিচালনা কিংবা গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

এইবাংলা/হিমেল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর