25.2 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

ঘুষের টাকার সিন্ডিকেট, শতকোটি টাকার সম্পদ চার কাস্টমস কর্মকর্তার

আরও পড়ুন

গুলনাহার ::

চারজনের প্রত্যেকেই কাস্টমস কর্মকর্তা। মিলেমিশে ঘুষ নেন, ঘুষের টাকায় বাড়িগাড়ি করেছেন একসাথেই। রাজধানী ঢাকার উত্তরায় বসবাসও করেন একসাথে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের দুই জোড়া কর্মকর্তা ব্যবসায়ীইদের জিম্মি করে ঘুষ আদায় করেন।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ছাইফুল ইসলাম,  এক্সাইজ এন্ড ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকার রাজস্ব কর্মকর্তা  তৈয়বুর রহমান,  ভুইয়া মফিজুর রহমান,  মানিকগন্জের ( ১)  এক্সাইজ এন্ড ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুস সামাদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ছাইফুল ইসলামের পরিবার বসবাস করছে উত্তরার ১১ নং সেক্টরে। উত্তরার ৬নং সেক্টরে বসবাস করছে তৈয়বুর রহমানের পরিবার। আর ভুইয়া মফিজুর রহমান দক্ষিণ খানের মোল্লার টেক ও আব্দুস সামাদ একই এলাকার ফায়দাবাদ ট্রান্সমিটার এলাকায়।

ঘুষের টাকায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার ফয়দাবাদ মৌজায় পাঁচকাঠা জমির উপর যৌথ মালিকানায় সাত তলা বাড়ি নির্মাণ করেছে এই চার কর্মকর্তা। নথি অনুযায়ী পাঁচ কাঠার মধ্যে  আড়াই কাঠা জমির মালিক তৈয়বুর রহমানের স্ত্রী উম্মে তুরিন। সুত্রমতে,  ছয় কোটি টাকা মুল্যের এই বাড়ি তোলা হয়েছে ঘুষের টাকায়।

মসজিদ রোড়ের পাঁচ কাঠা জমি কিনে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার। ২০ টি দুধাল গরুর এই খামারের বাজার মুল্য ২ কোটি বিশ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, আব্দুর রউফ মসজিদ সংলগ্ন আরেকটি ১৫ কাঠা জমি রয়েছে এই চার কর্মকর্তার যৌথ মালিকানায়। এই প্লটের বাজার মুল্য সাড়ে সাত কোটি টাকা। এই জমির পাশে লাল মসজিদ সংলগ্ন দশ কাঠা জঙ্গল রয়েছে একই চক্রের আয়ত্তে।

অভিযোগপত্র অনুযায়ী,  উত্তরায় অন্তত পাঁচটি ফ্লাট রয়েছে ওই চার কর্মকর্তার। তৈয়বুর রহমানের স্ত্রী উম্মে তুরিন আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিলেও তিনি একজন গৃহিণী। তিনিই মুলত দেখাশোনা করেন চার কর্মকর্তার ঘুষের টাকার সাম্রাজ্য। উত্তরার ছয় নং সেক্টরে বসবাসরত উম্মে তুরিন তার পরিবারের সদস্যদের নামে দক্ষিণখানের ফাইদাবাদ পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় আরও চারটি ফ্লাট ক্রয় করে করে ভাড়া দিয়েছেন। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে রয়েছে দোকানঘর।

উম্মে তুরিন বলেন, ‘ অভিযোগের প্রথম দুটি সত্য। কিন্তু পনের কাটা জমি কেনার বিষয়টি সত্য নয়। ‘

দুদক জমা পড়া অভিযোগ অনুসারে তৈয়বুর রহমান বর্ডার শুল্ক শাখায় চাকরিরত অবস্থায় আটক করেছিলেন ৩০০ টি স্বর্ণের বার। এরমধ্যে একশ স্বর্ণের বার সরকারি কোষাগারে জমা পড়লেও, বাকি দুইশো স্বর্ণের বার হাপিশ করেন তৎকালীন শুল্ক তৈয়বুর রহমান।

যে চারজনের নামে অভিযোগ জমা পড়েছে প্রত্যেকেই ৯ম-১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা। নিজেদের উপার্জন করা অবৈধ টাকা বিনিয়োগ করেই ধাপে ধাপে পদোন্নতি বাগিয়ে প্রত্যেকে এখন রাজস্ব কর্মকর্তা। এর মধ্যে সম্প্রতি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা থেকে মফিজুর রহমান অবসরে গেছেন। বাকি তিনজন বর্তমানে কাস্টমসে কর্মরত রয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট সার্কেল জামালপুরের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুস ছামাদ  বলেন, ‘ পারলে নিউজ করেন আপনি আপনার কাজ করুন। আমি আমার কাজ করেছি। এই বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না।’

এ বিষয়ে জানতে কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকার (পূর্ব) রাজস্ব কর্মকর্তা তৈয়বুর রহমানকে মুঠোফোনে কল করা হলে রিসিভ করেন তার স্ত্রী। পরে প্রতিবেদককে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আরেকজন ফোন করে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশনা দেন।

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর