25.6 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড়

আরও পড়ুন

তানভীর আহমেদ ||

প্রতিদিন বিকেল হলেই চট্টগ্রাম মহানগর ,আনোয়ারা, কর্ণফুলী, বাঁশখালী, চন্দনাইশ,পটিয়াসহ আশেপাশের সব উপজেলা থেকে টানেলের দৃষ্টিনন্দন সংযোগ সড়কে এসে ভীড় জমাচ্ছে দর্শনার্থীরা। সংযোগ সড়কের আকর্ষনীয় কারুকার্য সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেই আকৃষ্ট হয়ে এই সড়কে আসছেন তারা। ছুটির দিনে এই ভীড় বেড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়ে যায়। শরৎ এর সুন্দর বিকেলে পরিবার-পরিজন ও প্রিয়জনদের নিয়ে সময় ব্যয় করতে এই সড়কটিকেই এখন বেছে নিয়েছেন অনেকেই।

অনেকের ফেইসবুক প্রোফাইলে শোভা পাচ্ছে টানেল এবং সংযোগ সড়কের ছবি।

টানেলের রক্ষণাবেক্ষণের সার্বিক দায়িত্বে যারা :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামে নামকরণ করা এই টানেলের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২৮ শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টানেলটি উদ্বোধন করবেন।  উদ্বোধন পর্বের জোর প্রস্তুতি চলছে। কারিগরি সিভিল ও ইলেক্ট্রনিকস সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে গত জুলাই মাসে। আর এরই মধ্যে প্রকল্পে প্রিকমিশনিং, কমিশনিং ও ট্রায়াল রানের  কাজও সফলতার সঙ্গে সমাপ্ত হয়েছে। সেতু বিভাগের কাছে হস্তান্তরিত করা হয়েছে এই প্রকল্প । আবার সেতু বিভাগ প্রকল্পের মেইনটেনেন্স ও অপারেশনাল কাজের জন্য চায়না কমিউনিকেশনস অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনস কোম্পানি লি. (সিসিসিসিএল)-এর সঙ্গে চুক্তিও সম্পাদন করেছে।

উল্লেখ্য, সিসিসিসিএল এ টানেল নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত সিসিসিসিএল টানেল অপারেশন অর্থাৎ টোল আদায় মেইনটেনেন্স কাজের দায়িত্ব পালন করবে।

আজ ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের। এ বাংলাদেশ সেতু বিভাগ (বিবিএ) উদ্বোধন পর্বের বিভিন্ন রূপরেখা বাস্তবায়ন করছে। টানেলের দক্ষিণ অর্থাৎ আনোয়ারা প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হচ্ছে এবং এই টানেলের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে তিনি আনোয়ারা উপজেলার প্রান্তে কেইপিজেড মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন ।

অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচন:

এফবিসিসিআই এর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা-কর্ণফুলী পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের স্বপ্নদুয়ার। এটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এগিয়ে নেওয়ার রোডম্যাপ। তাই টানেলের আশপাশের এলাকায় নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের নতুন শাখা খোলাসহ ব্যাপক বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চলছে। এর মাধ্যমে শুধু চট্টগ্রাম বা বাংলাদেশ সুবিধা পাবে তা নয়, টানেলের ফলে এশিয়ান সড়ক নেটওয়ার্ক ও পূর্বমুখী বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। ‘

টানেল সম্পর্কে কর্ণফুলী ও আনোয়ারাবাসী যা বলছেন :

টানেল নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বসিত এই দুই উপজেলার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, টানেল নির্মাণের ফলে আনোয়ারা উপজেলার চাতরী-কালাবিবির দীঘি ও আশপাশের এলাকা এখন দেখে চেনার উপায় নাই। পূর্বে যেখানে প্রতি গন্ডা জমির দাম ছিল ২ থেকে ৩ লাখ, তা এখন ৩০ লাখের উপরে। এই কেন্দ্রিক বিভিন্ন ব্যবসায়িক অফিসের জন্য লাখ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হচ্ছে। টানেলের ছোয়ায় এই এলাকাটি এখন স্বর্ণ পরিণত হয়েছে। টানেল নির্মাণের ফলে কর্ণফুলী- আনোয়ারা তথা দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের যাতায়াত ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এখন মানুষ খুব স্বল্প সময়ে শহরে আসা-যাওয়া করতে পারতেছে। এছাড়াও এই সড়ককে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করছে৷ পণ্য আনা নেওয়া সহজ হয়েছে।

সওজ যা বলছে :

টানেল সংযুক্ত শিকলবাহা ওয়াই জংশন সড়ক থেকে কালাবিবির দিঘির মোড় পর্যন্ত সড়কের কাজ সম্পর্কে দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগ কর্তৃপক্ষ বলছে, টানেল যেহেতু ৪ লেনের সেহেতু টানেল সংযুক্ত শিকলবাহা ওয়াই জংশন সড়কের ৬ লেনের কাজের মধ্যে আপাতত চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু পয়েন্টে জমি সংক্রান্ত কিছু সমস্যা। সেটিও প্রায় সমাধানের পথে । আর টানেলের গাড়ি আনোয়ারা থেকে ক্রসিং হয়ে পটিয়া বাইপাস দিয়ে চন্দনাইশের মধ্যদিয়ে কক্সবাজার যাবে। আপাতত আনোয়ারা কিংবা বাঁশখালি দিয়ে রাস্তা নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নাই৷ কোনো ধরনের বিঘ্নতা ছাড়া এই রোডে নির্বিঘ্নে যান চলাচল করবে।

টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘ ইতিহাসের অংশ হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি । বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে ।’ 

বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গবন্ধু টানেলের সুফল এই দুই উপজেলার বাসিন্দারাসহ চট্টগ্রাম তথা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ অনুধাবন করবে এবং এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সমৃদ্ধ করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর