25.3 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

সেচ পাম্প চুরি নিয়ে বিপাকে কৃষক, চোর ধরতে পুরস্কার ঘোষনা

আরও পড়ুন

আল আমিন,নাটোর প্রতিনিধি:-

মাঠে কৃষকের ধানের জমিতে সেচ দেওয়া পাম্প (মোটর) চুরি যাচ্ছে একের পর এক। এ কারণে ধান ক্ষেতে সময় মতো পানি দেওয়া যাচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে সেচ সংকটে ধানের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। প্রশাসনিক সহায়তা না পেয়ে কৃষকেরা চোর ধরতে বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন।

চুরিরোধে কৃষকদের পক্ষ থেকে গ্রামে গ্রামে চলছে মাইকিং। চোর ধরতে ঘোষণা করা হয়ে ৫০ হাজার টাকা পুরষ্কার। কিন্তু কিছুতেই রোধ হচ্ছে না ধান ক্ষেতের সেচ পাম্প চুরি।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ধান ক্ষেত থেকে চুরি হয়েছে অন্তত ৩০টি সেচ পাম্প। রাতের আঁধারে এভাবে অগভীর সেচ পাম্প চুরির হিরিক লাগলেও এখন পর্যন্ত চোরচক্রের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। উদ্ধার হয়নি চুরি যাওয়া সেচ পাম্পও।

সেচ পাম্প (মটর) মালিক সমিতি জানিয়েছে, রোপা আমনের ভরা মৌসুম চলছে। এসময় ধানে পাক ধরে। এখন ক্ষেতে নিয়মিত সেচ দিতে হচ্ছে। কিন্তু প্রায়ই তাদের সেচ যন্ত্র চুরি হচ্ছে। বিলের গহীনে ধানের জমি হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে কৃষকের পক্ষে সেচ যন্ত্র পাহারা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এভাবে একের পর এক সেচ যন্ত্র চুরি হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই সমিতির পক্ষ থেকে চুরি রোধে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করা হচ্ছে। চোর ধরতে পারলে কৃষকের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা পুরষ্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।

কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি আমন মৌসুমে গুরুদাসপুর উপজেলাজুড়ে ৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিলশা, রুহাই, পিঁপলা, যোগেন্দ্রনগর, বিয়াঘাট, খুবজিপুর, শ্রীপুর, সাবগাড়িসহ ছোট বড় অন্তত ২০টি বিলে রোপা আমনের চাষ হয়েছে।

গুরুদাসপুর কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তথ্যে জানা গেছে, সেচ নির্ভর কৃষির জন্য বিএডিসির সেচ প্রকল্পের আওতায় ১৪৪টি গভীর সেচ যন্ত্র আছে। অগভীর সেচ যন্ত্রের মধ্যে ৪ হাজার ৯০০টি শ্যালো মেশিন রয়েছে ডিজেল চালিত। নদী থেকে পানি ব্যবহারে (ললিট) সেচ যন্ত্র ৮০টি এবং বিদ্যুৎচালিত সেচ যন্ত্র রয়েছে ১ হাজার ২০০টি। সরকারি এই হিসেবের বাইরেও বিদ্যুৎ চালিত সেচ যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে।

এ অঞ্চলের কৃষক জানান, মূলত কৃষকদের ব্যক্তি পর্যায়ের বিদ্যুৎচালিত অগভীর সেচ যন্ত্র (জলমটর) চুরির ঘটনা ঘটছে। বিলশা, রুহাই, পিঁপলা, যোগেন্দ্রনগর, বিয়াঘাট, খুবজিপুর, শ্রীপুর, সাবগাড়ি এবং অনন্দনগর বিল থেকে মাটির প্রায় ৩০ ফিট নিচের জলমটর চুরি হচ্ছে। সবশেষ চলতি অক্টোবর মাসেই আনন্দ নগর এবং হাঁড়িভাঙ্গা বিল থেকে কৃষক রিপন মণ্ডল, হাসিনুর রহমান হাসু, রাজা হাজী, রবিউল করিম ও স্বপনের বিদ্যুৎ চালিত ৫টি সেচযন্ত্র চুরি হয়েছে।

ভুক্তভোগী কৃষক হাসিনুর রহমান জানান, চলতি মাসে তার দুই দফায় সেচ পাম্প চুরি গেছে। তার এই সেচ পাম্পের আওতায় নিজের ১৮ বিঘা ছাড়াও আরো ২৫ বিঘা জমির ধানে সেচ দেওয়া হচ্ছিল। মাসের শুরুর দিকে ৫ হর্স ক্ষমতার সেচ পাম্পটি চুরি হয়। সেচ ঠিক রাখতে ২৫ হাজার টাকা ব্যায়ে আরও একটি সেচ পাম্প বসিয়ে ছিলেন তিনি। সপ্তাহখানেক আগে সেটিও চুরি হয়ে গেছে।

সেচ পাম্প হারানো কৃষকদের মধ্যে রিপন মণ্ডল, রাজা হাজী ও রবিউল করিমসহ দশজন কৃষক জানান, সেচ পাম্প চুরির পর ধান ক্ষেতে সেচ কাজ স্বচল রাখতে কৃষকেরা চাঁদা তুলে সেচ পাম্প বসাচ্ছেন। সেচ পাম্প চুরির ঘটনায় তারা থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় কৃষি অফিসেও।

সেচযন্ত্র মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মতিন জানান, ধারাবাহিকভাবে সেচযন্ত্র চুরি হওয়ায় তারা ধানের ফলন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অর্শ শক্তি ও মানভেদে নতুন সেচযন্ত্রের মূল্য ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু কৃষকদের পক্ষে ওই টাকা যোগান দেওয়া কষ্টসাধ্য। সেচ পাম্প চুরি রোধে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. মোনোয়ারুজ্জামান জানান, সেচ পাম্প চুরির বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চুরি রোধে পুলিশ কাজ করছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশীদ জানান, সেচযন্ত্র চুরির বিষয়টি নিয়ে উপজেলা থানা পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। চুরিরোধে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

এইবাংলা /নাদিরা শিমু/Ns

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর