গুল নাহার :::
আইজিডব্লিউ লাইসেন্স ব্যবহার করে টেলেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান নামের দুই তরুন দুইশো চল্লিশ কোটি ৯৪ লাখ ৪২ হাজার পাঁচশত নিরানব্বই (২৪০,৯৪,৪২,৫৯৯) টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। বিটিআরসি থেকে টেলেক্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে আইজিডব্লিউ ( ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটর)লাইসেন্স সংগ্রহ করে ভয়েস ব্যবসার আড়ালে বিপুল অংকের অর্থ পাচারের তথ্য মিলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে।
রবিবার (২২ শে অক্টোবর) দূর্নীতি দমন কমিশন চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জালাল উদ্দীন আহমেদ আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটর টেলেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে দুইশত এক চল্লিশ কোটি (প্রায়) পাচারের অভিযোগ এনে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বিটিআরসির নথি পর্যালেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। আব্দুর রহমান (৩৫) ও মুজিবুর রহমান (৩০) নামের দুই সহোদর মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২(ক) (২) ধারা লংঘন করে এক বছরে (২০১২-১৩) ৩,০৬,৩১,৪০৭ ডলারের মধ্যে এক লাখ চৌষট্টি হাজার নয়শত চৌদ্দ মার্কিন ডলার দেশীয় ব্যাংক হিসেবে ফেরত আনা হলেও বাকি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সেই হিসাবে কল পরিসেবার মুল্যবাবত তিন কোটি চার লাখ ৬৬ হাজার চারশত তিরানব্বই (৩,০৪,৬৬,৪৯৩ ডলার) মার্কিন ডলার মুল্যামানের অর্থ বা সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন। বাংলাদেশী মুদ্রায় এই টাকার পরিমান দুইশো চল্লিশ কোটি ৯৪ লাখ ৪২ হাজার পাঁচশত নিরানব্বই (২৪০,৯৪,৪২,৫৯৯) ।
দুদকের নথি অনুযায়ী, ওই সময়ে আব্দুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এবং মুজিবুর রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
দুদক সুত্রে জানা যায় , আইজিডব্লিউ সেবাদানকারী এই প্রতিষ্ঠানের সেবার বিপরীতে তাদের ব্যাক ব্যাংক বনানী শাখার এফসি হিসাবে ( ফরেন কারেন্সি) যে পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আসার কথা তার বড় একটি অংশই সংশ্লিষ্ট রয়ে গেছে। প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর হিসাব বিবরনী বিটিআরসিরকে ( বাংলাদেশ টেলি যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) দেয়ার কথা থাকলেও, প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত (তের) ১০২,১০,৪৬,৮৯৭ মিনিট কল সেবা রপ্তানি করেছিলো। এই রপ্তানিকৃত সেবার মুল্য বাবত প্রতিষ্ঠানটি ৩ কোটি ছয় লাখ একত্রিশ হাজার চারশত সাত মার্কিন ডলার (৩,০৬,৩১,৪০৭ ডলার ) ফরেন রেমিট্যান্স হিসাবে দেশে আনার কথা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে এক লাখ চৌষট্টি হাজার নয়শত চৌদ্দ মার্কিন ডলার জমা হয়।
মামলার এজাহারে, প্রতি মিনিট ০.০৩০ ডলার হিসেবে সর্বমোট ৩,০৬,৩১,৪০৭ ডলার পাচার করার অভিযোগ আনা হয়েছে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে অপারেটর টেলেক্সের ( লাইসেন্স নং btrc/aa/igw(8) telex/2012-8) দুই কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, টেলেক্সের নিবন্ধিত ঠিকানা উত্তরা বাণিজ্যিক এলাকার ৪৬ নং রোড়ে। ওই এলাকার ৩৪ নং হোল্ডিং এর বাড়ি থেকে ভয়েসের ( ভিওআইপি) ব্যবসা পরিচালনা করা হতো৷ ব্যবসায়ী আবদুল্লাহর দুই ছেলে আব্দুর রহমান ও মুজিবুর রহমান তরুন বয়সেই অর্থ পাচারে হাত পাকিয়েছেন। রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিলাসবহুল বাড়িতে বসবাস করছেন অভিযুক্ত দুই ব্যবসায়ী।