24.3 C
Dhaka
Friday, October 3, 2025

চট্টগ্রামে বিএনপির হুংকার

আরও পড়ুন

নিজস্ব প্রতিবেদক ||

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরেপক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে রোড়মার্চে বিএনপি বিপুল শো ডাউন করেছে। নেতাকর্মীদের পদচারণায় চট্টগ্রাম শহর কার্যত অচল ছিলো। গত ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ১৫ দিনের রোডমার্চ কর্মসূচি চট্টগ্রাম দিয়ে শেষ হয়েছে। কুমিল্লা থেকে শুরু হয়ে ফেনী, মিরসরাই হয়ে ১৪৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে নেভাল সড়কে এসে শেষ হয় রোডমার্চ কর্মসূচি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা কুমিল্লা থেকে গাড়িবহর নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সিটি গেইট অতিক্রম করে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ। ওই সময় নগর বিএনপির নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানান। সেই সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বরণ করে নিতে নগরীর প্রবেশপথে বিপুল নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে।

এতে জনতার ভিড় সরিয়ে গাড়িবহরকে এগিয়ে দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী রোডমার্চের বহরে যোগ দেন। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে রোডমার্চের বহরকে স্বাগত জানান।

পরে সেখান থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা সরাসরি সমাবেশস্থলে আসেন রাত সাড়ে ৯টায়। বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও তাদের মধ্যে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ।

এদিকে,  বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পৃথক পৃথক মিছিল ছিলো দেখার মতো। রোড মার্চে যোগ দেবার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে নিজেদের সক্ষমতা দেখাতে ব্যস্ত ছিলো মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতারা।

উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সরওয়ার আলমগীর ফটিকছড়ি থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে যোগ দিয়েছেন রোড় মার্চে। প্রত্যেকদর্শিদের মতে সেই সংখ্যা অতিক্রম করবে দশ হাজারের ঘর৷ হাটহাজারী থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার অনুসারীদের অংশগ্রহনও ছিলো চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও ব্যাপক শো ডাউন করার উদ্দ্যেগ নিয়েছে তার সমর্থকরা। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা এসএম ফজু, মীর হেলাল উদ্দীনের অনুসারীরা পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে শহরে প্রবেশ করেছেন।

রোড় মার্চে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে রাঙ্গুনিয়া, রাউজান থেকে জনসমাগম ঘটিয়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন বিএনপির প্রয়াত নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ( ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত)  ছেলে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য  হুমাম কাদের চৌধুরীও।

পরে দলের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা ছিলেন  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

৮টা ৫৫ মিনিটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য রাখতে মঞ্চে উঠেন। রাত ৯টা ১০ মিনিটে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য শুরু করেন এবং ৯টা ২৪ মিনিটে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।রোডমার্চ কর্মসূচি শেষে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনের নেভাল মোড়ে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিয়ে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।

ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তাঁর বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ৯ অক্টোবর সারাদেশে মহানগর এবং জেলায় সমাবেশ ও মিছিল, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ১২ অক্টোবর ঢাকায় ছাত্র কনভেনশন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবিতে ১৪ অক্টোবর জেলা ও মহানগরে অনশন কর্মসূচি, ১৬ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগে এক দফা দাবিতে ঢাকায় যুব সমাবেশ এবং ১৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ। এই সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ  নেতারা।

মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের শো ডাউন :

দিনভর বিএনপির তারুণ্যের রোডমার্চের সমাবেশস্থল চট্টগ্রামের লাভলেইন মোড়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিলে–শ্লোগানে জড়ো হয়েছেন দুপুরের পর থেকে। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির রোডমার্চকে ঘিরে বিএনপির বৃহত্তর চট্টগ্রামের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপক শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো ধরনের নির্বাচনে আসবে না বলে ঘোষণা দিলেও গতকালের বিএনপির রোডমার্চের আড়ালে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিএনপি সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী শোডাউন করেছেন।

পুরো সমাবেশের আশপাশের এলাকা জুড়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, ডা. শাহাদাত হোসেন, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনসহ অসংখ্য নেতার ব্যানার ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশ জুড়ে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অনেক বিএনপি নেতা সংসদীয় আসন উল্লেখ করে ডিজিটাল ব্যানার লাগানোর দৃশ্য গুলো।

এছাড়াও ট্রাকে–পিকআপে এসব নেতাদের ব্যান্ডপার্টি এবং সাউন্ডবঙে শোডাউন সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। পুরো নূর আহম্মদ রোডসহ লাভ লেইন মোড়, কাজীর দেউড়ি, স্টেডিয়াম এলাকা, ওয়াসা মোড়, সিটি গেইট, কর্ণেলহাট একেখান গেইট ছেয়ে ফেলেছে ব্যানারে–ফেস্টুনে। এছাড়াও ছোট মিনি ট্রাক, পিকআপে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সম্ভাব্য বিএনপির প্রার্থীদের ছবিসহ ডিজিটাল ব্যানার লাগিয়ে নেতাকর্মীরা শ্লোগানে শ্লোগানে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। অনেকেই চালিয়েছেন নির্বাচনী শোডাউনও। বিশেষ করে  সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুমাম কাদের চৌধুরীর কর্মী–সমর্থকরা ব্যাপক শোডাউন করেছেন। ফটিকছড়ি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সরওয়ার আলমগীর, ককসবাজার–১ সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ (বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত), আনোয়ার সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, বাঁশখালী থেকে প্রয়াত সংসদ সদস্য জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছবিসহ তার ছেলে, বাঁশখালী থেকে লেয়াকত আলী, সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, খাগড়াছড়ি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া, হাটহাজারী থেকে সাবেক সংসদ সদস মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল, একই আসন থেকে সাবেক প্রয়াত সংসদ সদস্য ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, পটিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েল এবং আসনের দক্ষিণ জেলা বিএনপির এনামুল হক এনাম, লোহাগাড়া থেকে নাজমুল মোস্তাফা আমিনের অনুসারীরা ব্যাপক শো ডাউন করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর