25.3 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

কেউ কথা রাখেনি

আরও পড়ুন

রাহাত আহমেদ ::

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি দম্পতি খুনের এগারো বছর আজ । বিচারের দাবিতে সাংবাদিক সমাজ বিভিন্ন সময় মানবন্ধনসহ নানা কর্মসূচী দিয়ে আসলেও বিচার হয় নি নির্মম এই হত্যাকান্ডের । সরকারের তরফ থেকে বিচারের আশ্বাস শুধু আশ্বাসই হয়ে রয়েছে , কথা কেউ রাখে নি । দীর্ঘ এগারোর বছরের রেজাল্ট জিরো। এমনকি সাংবাদিক নেতারাও এখন কেবল মৃত্যুবার্ষিকী পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নৃশংসভাবে খুন হন। হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করে। চার দিন পর ডিবিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে তদন্তের ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। সেই দিন আদালত র‌্যাবকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তখন থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র‌্যাব।

এ মামলায় এ পর্যন্ত ১৬০ জন সাক্ষীর বক্তব্য গ্রহণ করেছে র‌্যাব। সন্দেহভাজনদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। র‌্যাব বলছে, ‘এখনও তদন্ত চলমান রয়েছে। মামলাটি সরকার, র‌্যাব অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সেই প্রতিবেদন জমা দেব।’

বার বার তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করা হয়েছে ,  তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ নির্মম এই হত্যাকান্ডের পর মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় তদন্ত শেষ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুন। তবে এরই মধ্যে ১১ বছরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন এসেছে তিনবার। একাধিক সংস্থার হাত বদলে আদালত থেকে ৯৫ বার সময় নেয়া হলেও শেষ হয়নি তদন্ত। সর্বশেষ গত ৪ জানুয়ারি এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। সেদিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রশিদুল আলম আগামী ৫ মার্চ প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ধার্য করেন।

বার বার সময় পেছানোর কারণ তদন্ত এখন আর দেশে নেই। ঝুলে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকে কবে ফরেনসিক ও ডিএনএ প্রতিবেদন আসবে তা কেউ বলতে পারছেন না।

র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন ,সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার নানা তথ্য এখনও ‘চুলচেরা বিশ্লেষণ’ চলছে ।

এই মামলার যেহেতু কোনো চার্জশিট হয়নি তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পিপিও নিয়োগ দেয়া হয়নি। আদালতে মামলাটি দেখছেন জেনারেল রেকর্ড অফিসার (জিআরও)। মামলার তদন্তকারী যেমন বদলি হয় তেমনি জিআরও বদলি হয় বারবার। তদন্তকারীরাও আদালতে যান না। জিআরও সময় চেয়ে একটি মুখস্থ আবেদন করেন । আর নতুন সময় ধার্য হয়ে যায়। তারিখের পর তারিখ বাড়ে।এখন এই মামলার জিআরও হলেন, সাব ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দিন।

তিনি জানান,

“আমার কাছে যে মামলাগুলো আছে তার মধ্যে এই মামলাটিতেই সবচেয়ে বেশি সময় নেয়া হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, এই খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটনের। অনেক বছর তো হয়ে গেছে। আমরাও চাই এ রহস্য উন্মোচিত হোক। সাংবাদিক নেতাদেরও বলেছি, আপনাদের কাছেও যদি কোনো তথ্য থাকে, সেগুলো আমাদের জানালে আমরা সেটিও দেখব।’

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করে স্মারকলিপি দিয়েছেন । ডিআরইউর এই স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা দেখেছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বড় বড় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে। অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। সাগর-রুনি হত্যার কোনো কূলকিনারা তারা করতে পারবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। তাই আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ে সাগর-রুনি হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রকৃত খুনিদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা আবারও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। এ হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ডিআরইউ দাবি থেকে সরে যাবে না।’

সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবিতে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত সমাবেশে সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি হত্যা, নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব অপরাধের বিচারের আশ্বাস দিলেও তিনি আদতে গুরুত্ব দেন না ।

এই মামলায় আটজনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে মিন্টু, কামরুল হাসান, বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম আবু সাঈদ ও এনাম আহম্মেদ কারাগারে রয়েছেন। পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।

২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত সংক্রান্ত এক রুলের আদেশে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মন্তব্যসহ এ আদেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে র‌্যাব।যাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিএনএ পরীক্ষার যে প্রতিবেদন এসেছে, তাতে দু’জন অপরিচিত পুরুষের ডিএনএ মিলেছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, নিহত সাগর সারওয়ারের হাত পেছন থেকে যে চাদরে বাঁধা হয়েছিল, তাতে একজন অপরিচিত পুরুষের ডিএনএ রয়েছে। আর মেহেরুন রুনির টি শার্টে আছে আরেকজন অপরিচিত পুরুষের ডিএনএ। সেই সঙ্গে মামলা বাতিল চাওয়া তানভীর রহমানের আচরণকে রহস্যজনক বলছে র‌্যাব। তাদের দাবি এই মামলায় তানভীরকে বাদ দেয়া যুক্তিযুক্ত হয়নি।

 

প্রসঙ্গত বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনিকে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে তাদের ভাড়া বাসায় হত্যা করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর