নাদিরা শিমু :::
চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বাপ্পী (৩৩) হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত স্ত্রী রাশেদা বেগমকে পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারলেও অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। তবে গ্রেপ্তারের পরপরই ওয়ারেন্ট না মেলার কারণে আসামি রাশেদাকে নিয়ে নতুন করে বিপাকে পড়ে সংস্থাটি।
২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর নগরের চকবাজার থানার কে বি আমান আলী রোডে বড় মিয়া মসজিদের সামনে একটি ভবনের নিচতলার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর চকবাজার থানায় হত্যামামলা দায়ের করার ‘ছয় বছর’ সময়কাল চকবাজার এলাকায় নিরাপদে বসবাস করেছিলেন তিনি।
পুলিশের দাবি, কারণ মাত্র কয়েকদিন আগে রায় ঘোষণা হওয়ায় রাশেদার সাজা পরোয়ানা স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজারে চকরিয়া থানায় পৌঁছায়নি। কিন্তু সিএমপির চকবাজার থানায় দীর্ঘদিন থেকে ওমর ফারুক বাপ্পী হত্যাকান্ডটি তদন্তাধীন ছিলো। সুত্রমতে, আদালত ফাঁসির দন্ড দেবার আগে বেশ কয়েকদফা চকবাজার ও বাকলিয়া থানায় দেখা যায় রাশিদাকে। তবে শেষ পর্যন্ত র্যাব ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক এই আসামিকে গ্রেফতার করার পর চকবাজার থানায় সোপর্দ করে। আর পুলিশও ওয়ারেন্ট না মেলায় ‘৫৪ ‘ ধারায় (সন্দেহজনক) আদালতে চালান দিয়েছে।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ আসামি রাশেদাকে র্যাব গ্রেপ্তার করে রোববার সকালে চকবাজার থানায় হস্তান্তর করে। তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা না থাকায় আমরা সংশ্লিষ্টদের পরামর্শে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছি।’
জানা যায় , পুলিশকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলো রাশিদা। এর আগেও আসামি রাশেদা চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানার একটি মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কৌশলে জামিন নিয়ে পলাতক ছিলেন। মাদক মামলায় কারাগারে থাকার সময় তিনি বাপ্পী হত্যা মামলায় কাগজে-পত্রে পলাতক থাকলেও পুলিশের আস্কারায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন।
সুত্রমতে, চকবাজার থানায়ও যাতায়াত ছিলো রাশিদার। চকবাজার এলাকায় পুলিশের সখ্যতায় দেদারসে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছিলেন তিনি। এমন একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং মাদক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেনেও থেকেছেন না জানার ভান করে। চকবাজার থানাও তাকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেননি। এমনকি ঢাকা পোস্ট নামের একটি অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতিবেদক এইবিষয়ে সংশ্লিষ্ট দুজনকে জানানোর পরও তারা রাশিদাকে গ্রেফতার করার কোনো ব্যবস্থা নেননি।এ বিষয়ে গত ২৬ জুলাই ঢাকা পোস্টে ‘জানাজানির পরও ফসকে গেল ফাঁসির আসামি!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পরই মুলত চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে অভিযান চালিয়ে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাপ্পী ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বারের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। তার গ্রামের বাড়ি বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার চৌমুহনী এলাকায়। তার বাবার নাম আলী আহমেদ। মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বাপ্পী। হত্যাকাণ্ডের আগ পর্যন্ত তিনি অবিবাহিত ছিলেন বলে জানতেন আত্মীয়-স্বজনরা।২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর নগরের চকবাজার থানার কে বি আমান আলী রোডে বড় মিয়া মসজিদের সামনে একটি ভবনের নিচতলার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় তার হাত-পা ও মুখ টেপ দিয়ে মোড়ানো এবং স্পর্শকাতর অঙ্গ কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘটনার পর বাপ্পীর বাবা আলী আহমেদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এইবাংলা /তুহিন