25.3 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

সরকারের পতন ছাড়া ঘরে ফিরবে না বিএনপি

আরও পড়ুন

রাহাত আহমেদ :::

মহাসমাবেশে অংশ নিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজধানী ঢাকায় জড়ো হয়েছিলেন অন্তত সমাবেশের তিন তিন আগে। মহাসমাবেশে যোগ দিতে সারাদেশের প্রতিটি উপজেলার ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীরাও ডুকেছেন ঢাকায়। নির্ধারিত সময়ের আগেই শুক্রবার বেলা এগারোটায় বিএনপির  দলীয় কার্যালয়ে সামনে শুরু হয় মহাসমাবেশ।

সমাবেশে বিএনপি নেতারা সরকার পতনের এক দফা দাবি  পুন:ব্যক্ত করেছেন। বলেন, সুষ্ঠু  ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কোনভাবেই বর্তমান অবৈধ সরকারের অধীনে  সম্ভব নয়। বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন এদেশে হতে দেবে না।

পুলিশের কাছ থেকে সমাবেশের অনুমতি নিয়ে সরকার পতন ঘটানো যাবে না- মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘আমরা তো আর অনুমতি চাইব না। এবারও চাইনি, শুধু অবহিত করেছি। আমরা জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। আমরা আর অনুমতি চাইব না। দেশের যেকোনো জায়গায় গণতান্ত্রিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করব, কেউ বাধা দিতে পারবে না। ’

আব্বাস বলেন, ‘দেশের জনগণ ক্ষেপে গেছে। তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেন। আমরা ভোটের, ভাতের জন্য আন্দোলন করেছি। এবার আমরা এক দফার আন্দোলনের কথা বলেছি।’

নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে আব্বাস বলেন, ‘আপনারা রোদে, বৃষ্টিতে ভিজে এখানে আছেন, জানি না কী খেয়েছেন। সেই খোঁজ আমি নিতে পারিনি। কিন্তু আপনাদের চেহারা দেখে আমি উদ্বেলিত। আপনাদের দেশে মনে হচ্ছে এই সরকারের সময় নেই। সরকারের সময় শেষ। ’

হোটেল থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাখিরও থাকার জায়গা আছে। কিন্তু এরা সেই মানুষগুলোকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু কী হলো? সমুদ্র থেকে একটু পানি তুলে ফেললেন তাকে কি সমাবেশ বন্ধ হয়েছে। প্রয়োজনে আরও সমাবেশ হবে। আটকে রাখতে পারবেন না। ’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা ৫০ বছরেরও বেশি আগে দেশ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব পেয়েছেন। এখন যারা দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য মাঠে যুদ্ধ করছেন, তাদের এই সময়ের মুক্তিযোদ্ধা আখ্যা দেওয়ার দাবি রাখে। ’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা বলছেন, শেখ হাসিনার পতন হওয়ার আগ পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না। থাকবেন তো মাঠে? মহাসচিব কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। আপনারা যেন মাঠে থাকেন। তাহলেই হবে সরকারের পদত্যাগ। কথা যদি রাখেন তাহলে শেখ হাসিনাকে যেতেই হবে। এখন তাকে সরাতে চাই কি না সেই সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে। ’

গয়েশ্বর বলেন, ‘অনেকেই বলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে গেলে এক লাখ লোক মানুষ মারা যাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় ১৮ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে তার খবর নেই। তারা কি এত অপরাধ করেছেন, কী পাপ করেছেন? বিএনপি সভ্য মানুষের দল। বিএনপি শেখ হাসিনার সম্পদের ভাগ চায় না। জাতির সম্পদ আত্মসাৎ করলে সরকারের কোষাগারে দিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে শান্তিতে বসবাস করুন। যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখেন। আর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার ওয়াদা করেন তাহলে হবে। ’

সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও পায়ে কামড় দিতে যাবো না। বাড়ি দখল করতে যাবো। শুধু ভোটটা দিতে চাই। জনগণের মালিকানা জনগণের কাছে ফেরত দেন। ’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বলেন, ‘আমরা ৫৩ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এবার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সবাইকে নিয়ে আমরা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করুন। ’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এখন শুধু একটি ধাক্কা মারতে হবে। সরকারকে ধাক্কা মেরে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে তারপর নির্বাচন হবে। ’

দুদু বলেন, ‘আগামী দিনের কর্মসূচি মধ্য দিয়ে আমরা বিজয় লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এরশাদকে পদত্যাগ করিয়ে নির্বাচনে গিয়েছিলেন। স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিলেন। তার সন্তান আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না হবে না। আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেব না। ’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘সরকার বাঘের পিঠে চড়ছে। তাই তারা পথ খুঁজে পাচ্ছে না। সরকারের বাঁচতে হলে খালেদা জিয়ার কাছে মাফ চাইতে হবে। না হলে বাঁচার কোনো পথ নেই। ’

বুলু বলেন, ‘আজ দেশের মানুষ এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নেতা খুঁজে পেয়েছেন। আর সে নেতা হলেন তারেক রহমান। ’

সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজ বিদেশিরা আমাদের যে গণতন্ত্রের সবক দেন, এটি আমাদের জন্য লজ্জার। দেশের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের কোনো বিকল্প নেই।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম এবং উত্তরের আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমানের সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, মীর নাছির উদ্দিন, নিতাই রায় চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ভিপি জয়নাল, মিজানুর রহমান মিনু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রবিন, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক প্রমুখ।

এইবাংলা /তুহিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর