30.7 C
Dhaka
Friday, October 3, 2025

প্রবাসীদের পণ্য খালাস বন্ধ, ক্ষোভে ফুঁসছেন প্রবাসীরা

আরও পড়ুন

নিজস্ব প্রতিবেদক :::

শাহ আমানত বিমানবন্দরে প্রবাসীদের আনা কার্গো পণ্য নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দুর হয় নি। গেল মার্চ থেকে কার্গো পণ্য খালাস বন্ধ রাখার কারণে নব্বই জন প্রবাসীর আনা ২৫ টন পণ্য কার্গো হাউজে নষ্ট হচ্ছে। এরআগে গত বছরের নভেম্বর মাসেও লাইন চালু বাবত ‘চল্লিশ লাখ’ টাকা ঘুষ না দেবার কারণে আটক রাখা হয় ৭০ জন প্রবাসীর পণ্য। গণমাধ্যম তৎপর হবার পর সেসব পণ্যের যাত্রীদের তথ্য  যাচাই বাছাই করে ছাড় করা হয়।

চার মাস ধরে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চার্জ ও কার্গো পণ্যের শুল্ক আদায় বাবত উল্লেখযোগ্য অংকের রাজস্ব ক্ষতি হলেও ; কাস্টমস কমিশনার ‘অনড়’ রয়েছেন নিজের সিদ্ধান্তে। দেশে ফিরে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা জাতীয় রাজস্ব বিভাগের কাছে চিঠি দিয়েছেন । সর্বশেষ ১৮ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত বাংলাদেশিরা অর্থনৈতিক কারণে নিয়মিত বাংলাদেশে যেতে পারেন না। এ কারণে দেশে বসবাসরত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি স্বল্প মূল্যে পাঠানোর জন্য প্রবাসীরা কার্গো ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সহায়তা নেন। কিন্তু মালামাল পাঠানোর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় তা খালাসে জটিলতা হচ্ছে। এতে প্রেরণকারীদের পাশাপাশি কার্গো এজেন্সিগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া নিয়মিত ফ্লাইটে ব্যাগেজ  এলাউয়েন্সের বাড়তি পণ্য আনতে গিয়ে ভ্রমন খরচ বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের।

চট্টগ্রামের দুবাই প্রবাসী  আকবর হোসেন বলেন, বিদেশি এয়ারলাইনসে অতিরিক্ত ব্যাগেজে চার্জ বেড়েছে।  আমারা দেশে যাবার সময়  পরিবার ও প্রিয়জনদেন জন্য জিনিস নিয়ে যেতে পারছি না। নির্ধারিত ওজনে বেশি হলে এবং ওজন চার্জ বেশি বেশি হওয়ার কারণে মালপত্র ফেলে যেতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে আমরা  ‘এ’ ফর্ম দিয়ে কার্গো করে অতিরিক্ত পণ্য আনিয়ে নিতাম।  কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের একটা অনুরোধ কার্গো ফ্লাইট  শিডিউল ঠিক রেখে এবং আগের মতো মধ্য প্রাচ্য থেকর চট্টগ্রাম রুটে  সরাসরি কার্গো  ফ্লাইট চালু করার উচিত। ‘

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের  উপ কমিশনার  বদরুদ্দোজামান মুন্সি   বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে প্রবাসীদের মালামাল ছাড় নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আটকে থাকায় প্রবাসীর সমস্যা হলেও বাণিজ্যিক পণ্য ছাড় করা হচ্ছে না । বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইপি সংগ্রহ করে আনলে ছাড় করা হবে।

জানতে চাইলে সিএন্ডএফ এসোশিয়েনের সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চু বলেন, প্রবাসীদের পণ্য খালাস বন্ধ করে দেয়া কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। প্রবাসীরা তাদের স্বজনদের জন্য উপহার সামগ্রী কিংবা পরিবারের ব্যবহার্য পণ্য ব্যাগেজ রুলে শুল্ক পরিশোধ করেই ছাড় করিয়ে থাকেন। প্রবাসীরা রাষ্ট্রের সম্পদ। তাদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের অর্থনীতি বেঁচে আছে, তাদের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক মন্ত্রণালয় থেকে আইপি সংগ্রহের মতো কঠোর শর্ত না রেখে  নমনীয়তা প্রদর্শন করা উচিত। ‘

চার মাস ধরে শাহ আমানত বিমানবন্দরে প্রবাসীদের আনা কার্গো  পণ্য খালাসে জটিলতা দূর করতে রাজস্ব বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে । ভুক্তভোগী প্রবাসীরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিবের বরাবর চিঠি দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ ‘ ইউ ব্যাগেজ ‘ ও টিআর সুবিধার অপব্যবহারের সুযোগ দিয়ে  একটি পক্ষকে চোরাচালানের রাস্তা তৈরি করে দেয়া হয়েছে।  বিদেশ থেকে পাঠানো বৈধ পণ্য আটক রেখে প্রবাসীদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায় ইউব্যাগেজে করে একজন যাত্রী ছয় হাজার কেজি পর্যন্ত পণ্য বুকিং দিতে পারেন। বন্দরের ৩নং জেটি হযে নির্বিঘ্নে এসব বাণিজ্যিক  পণ্য পৌঁছে যায় ঢাকায়। এনসিটি থেকে এসব পণ্য  খালাস করা নেয় চোরকারবারীরা। প্রতি কনটেইনার ‘টিআর’ সুবিধার ‘ ইউ ব্যাগেজ ‘ চালান খালাসে যুক্ত  সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিন লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। একারণে কাস্টমস কর্মকর্তাদের মধু ইউ ব্যাগেজ নিয়ে। সুত্রমতে, প্রতিদিন স্প্রিড মানি হিসেবে কোটি কোটি টাকা বিনিময় হয় ইউব্যাগেজ ছাড়ে। ঘুষ বাণিজ্যের সুযোগ কম থাকায়  বিমানবন্দরে প্রবাসীদের আনা  কার্গো পণ্য খালাস নিয়ে কাস্টমস হাউজের আগ্রহ কম। ‘

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী জানান, ‘ ইউ ব্যাগেজ ‘ ছাড়ে টাকার অংক নির্ধারিত। সেই ঘুষের টাকা পৌঁছে কমিশনার পর্যন্ত। ফলে বিমানবন্দরে কার্গো পণ্য খালাস বন্ধ রাখলে সুবিধাটা অসাধু কর্মকর্তাদেরই। গত চার মাসে ইউ ব্যাগেজ খালাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ছয়গুণ বেড়েছে ‘ ইউ ব্যাগেজ ‘ কনসাইনমেন্ট। নিয়মিত কার্গো ফ্লাইট বন্ধ ; এয়ার কার্গো করে আনা পণ্য গুদামে আটক রাখার কারণে বর্তমানে  প্রবাসীদের বড় একটি অংশ নিজেদের পণ্যের সাথে সিন্ডিকেটের বাণিজ্যিক পণ্যের বুকিং দিচ্ছেন। প্রবাসীদের পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন চোরা কারবারিরা।

জানা যায়, এলসিবিহীন সবচেয়ে সুলভ ও নিরাপদ বাণিজ্যিক পণ্য  আমদানির একমাত্র  রাস্তা ইউ ব্যাগেজ। কারণ একজন প্রবাসী ইউ ব্যাগেজে ২/৩ শ কেজি পণ্য বুকিং দিলেও সাড়ে পাঁচ হাজার কেজি বাণিজ্যিক পণ্য দেশে ডুকার পথ উম্মুক্ত হচ্ছে। কার্গো ফ্লাইট ও প্রবাসীদের আনা কার্গো পণ্য ছাড় বন্ধ রাখলেই ‘ইউব্যাগেজ’ এর বুকিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পাসপোর্টের সংখ্যা বাড়ে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়  রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ সারাদেশে পাইকারি বাজারে শুল্ক ফাঁকি দেয়া বিদেশি  পণ্যের ছড়াছড়ি। এসব পণ্য মধ্য প্রাচ্যের দেশ থেকে  সংগ্রহের সহজ রাস্তা ইউ ব্যাগেজ।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন বছরে কার্গোখাতে আয় হয় সাড়ে চার কোটি টাকা। কার্গো পণ্য  খালাস নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে, সেই রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে শাহ আমানত বিমানবন্দর।

অপর্যটক বা প্রবাসীদের দেশে ফেরার সময় কোন কোন জিনিস শুল্কমুক্ত এবং কোন জিনিসের উপর শুল্ক গুনতে হবে যা বিস্তারিত বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে – যাত্রী অপর্যটক ব্যাগেজ বিধিমালা ২০২৩। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যাত্রী অপর্যটক ব্যাগেজ বিধিমালা ২০১৬ বাতিলক্রম যাত্রী অপর্যটক ব্যাগেজ বিধিমালা ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। সেখানে প্রবাসীদের ব্যাগেজ রুলের পণ্যে একশো কেজির কোন সীমারেখা না থাকলেও চট্টগ্রামের কাস্টমস কমিশনার বানিয়েছেন নিজের মতো নিয়ম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর