::::নিজস্ব প্রতিবেদক::::
আজ ১১ জুলাই, শোকাবহ মিরসরাই ট্র্যাজেডির যুগ পূর্তি। দেখতে দেখতে কেটে গেছে ১২টি বছর। তবে সে দিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়ায় সহপাঠী ও স্বজনরা। এখনো থামেনি তাদের কান্না। ছেলের ছবি নিয়ে নিরবে-নিভৃতে কাঁদেন গর্ভধারিণী মা। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে আদরের সন্তানকে খুঁজে ফিরে পরিবার। দিনটি এলেই শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন স্বজনরা। স্মৃতি বলতে শুধুমাত্র ছবির সেই বাঁধানো ফ্রেম। পুত্রহারা বাবা-মায়েরা সেই ছবি নিয়ে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে আহাজারি করেন।
২০১১ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাই স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা শেষে একটি ট্রাকে করে আবুতোরাবে ফেরার পথে সৈদালীতে একটি ডোবায় শিক্ষার্থীদের বহনকারী মিনি ট্রাকটি উল্টে যায়। ওই সময় বাঁচানো যায়নি পিকআপের তলানিতে আটকে পড়া কোনো খুদে শিক্ষার্থীকে। একে একে নিথর দেহে পরিণত হয় আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ জন, আবুতোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার জন, আবুতোরাব ফাজিল মাদ্রাসার দুই জন, প্রফেসর কামালউদ্দিন চৌধুরী কলেজের দুই জনসহ মোট ৪৫টি তরতাজা প্রাণ।
ওই সময় নিহতদের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে ছুটে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদৌজা চৌধুরী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ দেশের বিশিষ্টজনরা। থেমে ছিল না দেশের সমাজ সেবকদের সাহায্যের হাত। মিরসরাই ট্র্যাজেডি নিয়ে ওই সময় ধারাবাহিক সংবাদ পরিবেশন করেছিল দেশের গণমাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোও।
শিক্ষার্থীদের স্মরণে ওই সময় আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত শোকসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, মিরসরাই ট্র্যাজেডির স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ ঘোষণা করা, মিরসরাই স্টেডিয়ামকে মিনি স্টেডিয়ামে পরিণত করা, আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বিআরটিসি বাস চালু করা হবে। কিন্তু একযুগ পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি। উপেক্ষিত থাকে ১১ জুলাইকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ঘোষণা করা। প্রতিশ্রুতি রাখেনি কেউ। কেউ আর নেয় না ওইসব পরিবারের খবর।
আবুতোরার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহত হওয়া শিক্ষার্থীদের স্মরণে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ এবং ‘অন্তিম’ এ পুষ্পস্তবক অর্পণ, সাড়ে ১১টায় শোক সভা ও বাদ জোহর দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ওই বছর ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণীয় করে রাখতে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ আর দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’।