25.6 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

শোভাযাত্রায় হামলার ঘটনা, উল্টো মামলা দায়েরের চেষ্টা ভেস্তে গেছে

আরও পড়ুন

::: নিজস্ব প্রতিবেদক   :::

উত্তর ফটিকছড়ির হেঁয়াকো বাজারে বিএনপি নেতা সরওয়ার আলমগীরের মোটর শোভাযাত্রায় হামলা ও  গাড়ি ভাঙচুর করার ঘটনার নেপথ্য কারণ  আভ্যন্তরীন রাজনীতির ছন্দপতন। এই ঘটনার পর ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন মুহুরী সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার  ঘোষণা দিলেও, শেষ পর্যন্ত মামলার এজাহার নেয় নি পুলিশ। সরওয়ার আলমগীরের শোভাযাত্রায় হামলা ও গাড়ি ভাংচুর করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর মামলা করে বিষয়টি নিয়ে নতুন বিতর্ক এড়াতে চায় আওয়ামী লীগ।

সুত্রমতে, হেঁয়াকো বাজারে মঙ্গলবারের ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করে মামলা দায়ের করার প্রচেষ্টা ভেস্তে গেছে। তবে আদালতে মামলা করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা ( নাজিম মুহুরী) । বৃহস্পতিবার সকালে ফটিকছড়ি উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা রুজু করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ের নিষেধাজ্ঞা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে  বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে অহেতুক  মামলার করা নিয়ে বিতর্ক এড়াতে চায় পুলিশ।  ফটিকছড়িতে পুলিশের এমন ভুমিকা ব্যতিক্রম নজির হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক  বিশ্লেষকরা। তবে গায়েবি  মামলা, মিথ্যা মামলা নিয়ে বিএনপির চাপও রয়েছে পুলিশ প্রশাসনের উপর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় সরওয়ার আলমগীরের শোভাযাত্রায়  এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা ইসমাইল মজুমদার, সেলিম সরকার, হানিফ সরকার। এই হামলায় বিএনপি নেতা আবুল খায়ের, আবুল হাশেম, যুবদল নেতা সামশু, সেচ্ছাসেবকদল নেতা মো: জসীম উদ্দীন, আরিফ, ইউসুফসহ অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদের সবাই বিএনপি নেতা সরওয়ার আলমগীরের অনুসারী। তবে কারও আঘাতই গুরুতর নয়। এছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুঁইয়ার গাড়িও নিরাপদে একই এলাকা অতিক্রম করে হামলার ঘটনার কিছু সময় আগে।

সুত্রমতে, হামলার ঘটনায় ফটিকছড়ি  উপজেলা  বিএনপির একটি অংশের ইন্দন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর জেলা বিএনপির কমিটিতে ফটিকছড়ি বিএনপির নেতা সরওয়ার আলমগীর  যুগ্ম আহবায়কের পদ পাবার পর থেকে কার্যত কোণঠাঁসা আজিম উল্লাহ বাহার গ্রুপ। বিএনপি থেকে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া কর্ণেল বাহারের অনুসারীরা দলের নেতাকর্মীদের উপর এমন হামলার  ঘটনার পর টু শব্দও করে নি। অথচ তিনিই বর্তমানে ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহবায়কের দায়িত্বে রয়েছেন।

সুত্রমতে, ঘটনার পর বিএনপি নেতা কর্মীদের আসামি করে মামলা রুজু করার প্রচেষ্টা ভেস্তে গেছে পুলিশের উর্ধতন মহলের নির্দেশনার কারণে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিমুদ্দিন মুহুরীর সাথে বিএনপি নেতা কর্ণেল (অব) বাহারের ছোট ভাই শওকত উল্লাহর ব্যবসায়ীক অংশীদারত্বেরও কানাঘুষা রয়েছে। এছাড়া বিএনপি নেতা কর্ণেল ( অব) বাহারের আরেক ছোটভাই ‘এরশাদ উল্লাহ ‘ শিবিরের আলোচিত সন্ত্রাসী। ঘটনাস্থল  হেঁয়াকো বাজারসহ উত্তর ফটিকছড়ি কার্যত শিবির নিয়ন্ত্রিত এলাকা।

সুত্রমতে, মোটর শোভাযাত্রা করে সরওয়ার আলমগীরের রাজনৈতিক উত্থান থামাতেই এই হামলা। হামলার কাজে ব্যবহৃত ছাত্রলীগ কর্মীরাও শিবিরের সাথে সম্পর্কে রক্ষা করে চলেন। আওয়ামী লীগকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে হামলা করার নেপথ্য কারণ ভিন্ন এমন দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। জানা যায় সরওয়ার আলমগীরের সাথে শিবিরের রাজনীতির মনস্তাত্ত্বিক দুরত্ব রয়েছে। প্রায় তিন যুগ আগে তার নিজের ভাই শিবিরের হাতে নিহত হয়েছেন।

তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিমুদ্দিন মুহুরীর নেতৃত্বে  বিএনপি নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রায় হামলা করা হয়েছে- এমন  দাবি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির। ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিমুউদ্দীন মুহুরীর নির্দেশেই বিএনপির শোভাযাত্রার উপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক সরোয়ার আলমগীর।বুধবার (৫ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে  উত্তর জেলার বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সরওয়ার আলমগীর এমন অভিযোগ করেন।

জানতে চাইলে তিনি  বলেন, ‘ আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর ধরে যা করেছে, তার ব্যতিক্রম এখনও হয়নি। তারা মুখে বলে শান্তিপুর্ণ, কিন্তু তারা যে কতটা অস্থির  সেটা বর্তমান ফটিকছড়ির বিভীষিকাময় পরিস্থিতিই প্রমান করে। আমরা শান্তিপূর্নভাবে ফটিকছড়িতে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করতে রাস্তায় নেমে নীরব শোভাযাত্রা বের করেছিলাম। সেই শোভাযাত্রাকে তারা ভন্ডুল করতে চেয়েছে বিনা উস্কানিতে। ‘

দলীয় কোন্দল, ফটিকছড়ি  বিএনপির আহবায়কের নিরবতা, শিবির নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলার ঘটনার নেপথ্য কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কৌশলে দলের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি এড়িয়ে যান।

তিনি বলেন, ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি যে ব্রিফ করেছেন সেখানেই ফুটে উঠেছে তার নির্দেশে এই হামলার ঘটেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেদিন বিভিন্ন জায়গায় মহড়া দিয়েছেন যেন ফটিকছড়ির বিএনপি নেতাকর্মীরা ও সাধারণ জনগণ  চলাফেরা করতে না পারে। এতেই বুঝা যায় এই ঘটনা একটি পূর্ব পরিকল্পিত। পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আমাদের এই শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার পর এই হামলা করা হয়েছে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সেদিন হামলা করে আমাদের প্রায়ই ৫০টি মোটরসাইকেল তারা ধ্বংস করেছে এবং ১২ থেকে ১৪টি মোটরসাইকেল তারা রেখে দিয়েছে। এছাড়া ফটিকছড়ির প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের তল্লাশি চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা। তাদেরকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছে। ‘

আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুল হকের মৃত্যুর পর তিন ধারায় বিভক্ত ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আবু তৈয়ব ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  নাজিম উদ্দীন মুহুরীর দ্বন্দ্বও ওপেন সিক্রেট। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলামও ঘরের দ্বন্দ্ব থেকে দুরে থাকার নীতি অনুসরণ করছেন। বিএনপির ঘরের দ্বন্দ্বে যে মারামারির সুত্রপাত সেই ঘটনা নিয়ে নাজিম উদ্দীন মুহুরীর সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়টিও ভালো ভাবে নেয় নি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। সেকারণে পুলিশের কাছে বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে  মামলার তদবিরে ঢেঁকি গেলানো সম্ভব হচ্ছে না – এমন দাবি দুই দলের শীর্ষ নেতাদের। স্থানীয় সংসদ সদস্য নজিবুর বশর মাইজভান্ডারিও ভোটের রাজনীতির কৌশল হিসেবে মামলা ও হয়রানির  বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

ঈদের পর হঠাৎ মোটর শোভাযাত্রার আয়োজন , হামলার পর উপজেলা বিএনপির নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে জানতে উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেন নি।

এইবাংলা /হিমেল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর