25.6 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

কোরবানির দেয়নি দেশের বিপুল সংখ্যক পরিবার

আরও পড়ুন

::: বিশেষ প্রতিনিধি :::

রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিবার এবার কোরবানি দেয় নি। কোরবানি পশুর বাড়তি মুল্যর কারণে ঈদ উদযাপন করতে পারেন নি তারা। বিপুল সংখ্যক কোরবানি পশু বাজারে অবিক্রীত রয়ে গেছে। মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশে কোরবানির ঈদকে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর্থিক অনটনের কারণে বিপর্যস্ত পরিবারগুলো বাড়তি দামের কারণে এবার কিনতে পারেন নি কোরবানির পশু।

২০২২ সালে ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার পশু কোরবানি দেয়া হয়। এই সংখ্যা  ২০১৯ সালের চেয়ে সাড়ে ৬ লাখ কম। এবার কোরবানি দেয়া পশুর সংখ্যা কমে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়াবে। সরকারি হিসাবে গত বছর সারা দেশে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু কোরবানি হয়েছিল।  আগের বছর সংখ্যাটি ছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি। এই হিসাবে গত কোরবানির ঈদে সংখ্যাটি বেড়েছিলো ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫২১ ।

পশু সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে,  দেশ এখন কোরবানির পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোরবানি দেবার পর  পশু উদ্বৃত্তও থাকছে। এবার সেই সংখ্যা লাখ ছুঁবে।

■ গত তিন ঈদে কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত ছিল ৭৪ লাখের বেশি।

চট্টগ্রামের সাগরিকা, বিবিরহাট, নুর হাউজিং, মইজ্যারটেক, মদুনাঘাট, হাটহাজারী, কাটিরহাট, নাজিরহাট বাজার, নানুপুর বাজার, কাজিরহাট – এই দশটি গরু বাজারের বেপারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অবিক্রীত গরুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। কোন কোন বাজারে অর্ধেক গরুই অবিক্রীত ছিলো। একইসাথে বাজারগুলোতে ছাগল বিক্রির সংখ্যা বেড়েছে। বুধবার রাতে গরুর দামও পড়ে যায়। বিশেষ করে উত্তর বঙ্গ থেকে আনা গরু কম দামে বিক্রি করা হয়েছে। চকবাজার, বহদ্দারহাট, কাজির দেউড়ী বাজারের কসাইরা মধ্য রাতে অবিক্রীত গরু কম দামে কিনে রেখেছেন।

কোরবানির পশু অবিক্রীত থাকার একই দৃশ্য দেখা ঢাকা শহরেও। গাবতলি বাজারের বেপারিদের সাথে কথা বলে, জানা যায় বেশি সংখ্যক গরু অবিক্রীত থাকার কারণে লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। এসব অবিক্রীত গরু ফেরত নিতে গিয়ে বড় হয়েছে লোকসানের অংক।

সাতক্ষীরার কোরবানির পশুর মধ্যে অন্যতম প্রায় ৪০ মণ ওজনের ‘সম্রাট’ ও ৩৫ মণ ওজনের ‘শুভরাজ’ বিক্রি হয়নি। এবার গরু দুটি পশুর হাট মাতানোর আশা করা হলেও শেষ পর্যন্ত  তেমন কিছুই হয়নি। অস্ট্রেলিয়ান হলেস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের দুটি গরু কেনার জন্য ক্রেতা পাওয়া যায় নি।

এতে হতাশ  সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘুড্ডেরডাঙ্গী গ্রামের প্রভাষক ইয়াহিয়া তমিজী। ইয়াহিয়া তমিজী বলেন, ‘ নিজ বাড়িতেই পরম যত্নে লালন-পালন করে বড় করে তুলেছি গরু দুটি। প্রায় ৪০ মণ ওজনের সম্রাটের দাম ধরা হয়েছিল  ১৬ লাখ আর ৩৫ মণ ওজনের শুভরাজের দাম ধরা হয়েছে ১৪ লাখ টাকা। কিন্তু দশ লাখের উপরে দামই বলেনি ক্রেতারা। ‘

রংপুরের বড় পশুর হাট হচ্ছে বেতগাড়ি হাট, লালবাগ হাট, বুড়িরহাটর, তারাগঞ্জ হাট, বড়াইবাড়িহাট, নজিরেরহাট, চৌধুরানীর হাট, পাওনাটানা হাট, খানসামা হাট, কান্দিরহাট, সৈয়দপুরের হাট, বৈরাতি হাট, শঠিবাড়িহাট, ভেন্ডবাড়ি হাট, মাদারগঞ্জ হাট।  বুধ দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত  রংপুর বুড়িরহাটের বেচাকেনার তথ্য বিশ্লেষণ করে  দেখা যায়, কোরবানি ঈদ উপলক্ষে হাটে গরু ও ছাগল উঠেছে। গরুর মধ্যে দেশি, শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান এবং ছাগলের মধ্যে ব্ল্যাকবেঙ্গল, যমুনাপাড়ি, তোতাপুরি বিভিন্ন জাতের পশুতে ঠাসা গরুরহাট। হাটে ওঠা গরুগুলো ৮০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। রাত বারোটার পর হাটগুলো ক্রেতাশুন্য হয়ে পড়ে। দামও কমে যায় গরুর।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আর্থিক সংকটে পড়ে বহু মানুষ কোরবানি দিতে পারছেন না। দ্রব্য মুল্যের লাগামহীন উর্ধগতির কারণে জীবনযাপনের ব্যয় বেড়েছে – এই কারণে কোরবানিকে প্রয়োজনের তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়েছে অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবারের।

মোস্তাফা জব্বার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে জানান, ঈদের ছুটিতে গত দুইদিনে অর্থাৎ মঙ্গল ও বুধবার মোট ৫০ লাখ ৪৬ হাজার সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন। ২৮ জুন (বুধবার) ৩১ লাখ ৪১ হাজার সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন। এর আগের দিন ২৭ জুন (মঙ্গলবার) ঢাকা ছেড়েছেন ১৯ লাখ পাঁচ হাজার সিম ব্যবহারকারী। সেই হিসেবে ঢাকার বাইরে গরু বিক্রির পরিমান বাড়ার কথা থাকলেও, ঘটেছে উল্টো ঘটনা।

গত বছরের চেয়ে এবার অন্তত গরুর দাম ৩০ শতাংশ বেশি হাঁকা হয়েছে । গত বছর যে গরু এক লাখ টাকায় বিক্রয় হয়েছে, এবার সেই গরু এক লাখ ৩০-৪০ হাজার টাকা হাঁকা হয়েছে, যেটি ক্রেতাদের বাজেট অতিক্রম করেছে।

অনেক ক্রেতা মনে করছিলেন , পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গরু আসছে, হয়তো গরু কিছুটা সস্তায় পাওয়া যাবে। দিনশেষে সারাদেশে পশুপালনের সাথে জড়িত খামারি ও বিক্রেতারা গুনেছেন লোকসান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর