:::এম ইদ্রিস নিজামী :::
ঝাউবন এবং বিশাল চর দেখার জন্য সীতাকুণ্ডে নিয়মিত ভীড় করেন পর্যটকরা। কিন্তু সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের ঝাউগাছগুলো এখন জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে জর্জরিত। ঢেউয়ের আঘাতে কোথাও ঝাউগাছ উপড়ে গেছে, আবার কোথাও মাটি সরে শুধু শেকড়ের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর কিছু মাটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ঝাউগাছেরও অনেকগুলো মৃতপ্রায়। উপকূলীয় বন বিভাগ বলছে, সৈকতটি রক্ষা করতে হলে দ্রুততম সময়ে ম্যানগ্রোভ বনায়ন করতে হবে। না হলে এ ভাঙন রোধ করা যাবে না।
এই ঝাউগাছগুলো এক সময় বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়েছে পাশাপাশি সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড় ও জলের কবল থেকে উপকূলবাসীকে বাঁচানোর প্রাকৃতিক প্রাচীর হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু একের পর এক গাছ উপড়ে পড়ায় সমুদ্র সৈকত এখন গাছশূন্য প্রায়। ফলে পর্যটন সম্ভাবনা মান হওয়ার পাশাপাশি প্রাণ হারাচ্ছে প্রকৃতি।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাশবাড়িয়ায় ১৯৬৮ থেকে২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে ৩ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমিতে গাছ লাগানো হয়েছিল। বর্তমানে আর সেগুলো নেই, বিলীন হয়ে গেছে অর্ধেকেরও বেশি গাছ।
সরেজমিন বাশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে দেখা যায়, সাগরের বিশাল ঢেউ ঝাউবাগানে আছড়ে পড়ছে। বারবার আঘাত হানছে গাছগুলোর ওপর। এতে সাগরতীরে ভাঙন এর আকার ধারণ করেছে। মাটিধসে সৈকতের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ঝাউগাছ উপড়ে পড়ে আছে। যে গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোরও শেকড়ের নিচে মাটি নেই।
স্থানীরা জানান, গত দুই বছর ধরে জোয়ারের ঢেউ ও স্রোতে ভাঙতে শুরু করেছে পর্যটন ও বিনোদনের এ জনপ্রিয় সৈকত। এভাবে ভাঙতে থাকলে সৈকতের সব ঝাউগাছই বিলীন হয়ে যাবে। কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে। তারা বলেন, জোয়ারের ঢেউয়ে আঘাতে ঝাউগাছ উপড়ে পরে বিলীন হয়েছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।
উপকূলীয় বন বিভাগ বলছে, সৈকতটি রক্ষা করতে হলে দ্রুততম সময়ে ম্যানগ্রোভ বনায়ন করতে হবে।অবশিষ্টাংশ বিলীন হয়ে গেলে পর্যটকরা আর আসবে না এখানে।
আর স্থানীয় বাসিন্দারা জানান , বেরিবাঁধের বাইরে ঝাউবাগান থেকে সাগর ছিল আরও অন্তত এক কিলোমিটার দূরে। ঝাউবাগানের বাইরের অংশ মাটির ওপর ঘাসের আস্তর। এখন এক কিলোমিটার হাঁটাপথ আর নেই। তিন বছর আগে সাগর থেকে বালি উত্তোলনের কারণে ভাঙন শুরু হয়।
উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, একটি শিল্প গ্রুপ চার বছর আগে উপকূলের অদূরে বালি উত্তোলন করে। এরপর থেকে সাগরের ওই গর্ত ভরাট হতে গিয়ে উপকূলে ভাঙনের শুরু হয়।
২০১৮ সালের ২১ জুন ও জুলাই সৈকতটিতে গোসলে নেমে গর্তের চোরাবালিতে ডুবে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। অথচ সে বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বাশবাড়িয়া সাগর উপকূলকে ‘সমুদ্র সৈকত’ হিসেবে। স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সীতাকুণ্ড সমিতি চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল।
সীতাকুণ্ডের পরিবেশবাদীদের মতে, শুধু বাশবাড়িয়া নয়, পুরো সীতাকুণ্ডকে গিলে খেয়েছে শিল্প গ্রুপগুলো। বালু উত্তোলন ও কৃষিজমি গ্রাসের নেতিবাচক প্রভাব এখন পড়তে শুরু করেছে। শিল্প গ্রুপগুলো যখন সাগর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিল তখন আমরা প্রতিবাদ করেছি। পত্রপত্রিকায় অনেক রিপোর্টও হয় কিন্তু প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই চুপ ছিল।
সীতাকুণ্ডের বেশিরভাগ শিপইয়ার্ড সাগর উপকূলের ঝাউবন উজাড় করে করা হয়েছো।অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের খেসারত দিতে হচ্ছে প্রকৃতিকে।ঝাউগাছ উজাড় হওয়ায় পর্যটকরা বাশবাড়িয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
উপকূলীয় বন বিভাগের সীতাকুণ্ড অফিস সূত্রে জানা যায়, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল করার জন্য একটি প্রকল্প চাওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প অনুমোদন হলে বর্ষা শেষে সেখানে নতুন গাছের চারা লাগানো হবে। না হলে সৈকতের অবশিষ্ট গাছ রক্ষার উপায় নেই।
এই ঝাউগাছগুলো সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়ানোর পাশাপাশি সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে উপকুলবাসীকে রক্ষায় প্রাচীর হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।