25.6 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

দলের কর্মকান্ডে অংশ নেবেন খালেদা জিয়া!

আরও পড়ুন

::: রাহাত আহমেদ :::

কারাদন্ড স্থগিত করার পর থেকে কার্যত ফিরোজায় ঘরবন্দী বেগম খালেদা জিয়া। অসুস্থতার কারণে  দলের  নেতাদের সাথেও তৈরি হয়েছে দুরত্ব । তবে সেই দুরত্ব দুর করতে গুলশান কার্যালয়ে অফিস করা শুরু করবেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম  খালেদা জিয়া। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলের কার্যালয়ে নিয়মিত বসবেন তিনি। বিএনপির ঘনিষ্ঠ সুত্র এমন তথ্য জানিয়েছেন।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হলে কারাগারে যেতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও তার সাজার রায় আসে।দেশে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। শর্ত দেওয়া হয়, তাকে দেশেই থাকতে হবে।কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ফিরোজায় ওঠেন, এখনও তিনি সেখানেই থাকছেন। অসুস্থতার কারণে কয়েক দফা তাকে এয়ারকেয়ার হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

কারাদণ্ড স্থগিত করার শর্ত হিসেবে রাজনীততে অংশগ্রহন করতে পারবেন কিনা সেটি স্পষ্ট করা হয় নি। অসুস্থ থাকাকালীন সময়ে চিকিৎসা নেবার পাশাপাশি  রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন কিনা সেই বিতর্ক থাকলেও; দলের কর্মকান্ড সক্রিয় হতে চান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপির নেতারা বলছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১/১১’র সময়ে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কানের চিকিৎসার জন্যে আমেরিকা গিয়েছিলেন। তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশেই চিকিৎসা করানোর কথা বলেছিল, বিদেশে যেতে দিতে রাজি হতে চাননি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বারবার বলেছেন, সঠিক চিকিৎসার জন্যে বিদেশে যাওয়া দরকার। প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বিদেশে গিয়ে  তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশও নিয়েছিলেন। তাহলে বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন যুক্তি কেন?

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া কী জন্য দন্ডাদেশ থেকে মুক্তি পেয়েছেন? তিনি অসুস্থ। অসুস্থ না হলে তিনি থাকতেন কোথায়? কারাগারে। তাহলে রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়? দন্ডিত ব্যক্তির রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়? দন্ডিত ব্যক্তি তো জেলে থাকবে।’

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কেউ বেগম খালেদা জিয়ার অফিসে বসার বিষয়ে মুখ খুলতে চান নি। তবে কূটনৈতিকদের পরামর্শ অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয়ে যাওয়া আসা করবেন। দলের নেতাদের সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী বৈঠকও করবেন। নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার অংশ হিসেবে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের অনেকেই বেগম জিয়ার মানবাধিকারের বিষয়ে নিয়ে সোচ্চার। তাদের মতে, বিএনপির চেয়ারপারসন চাইলে নিজের কার্যালয়ে যেতে পারবেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মনে করেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না, এ রকম কথা তো কোথাও নেই। তবে বাস্তব অবস্থা হলো অসুস্থতার কারণে তার দণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়েছে। এটা মনে রাখতে হবে। তবে খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না। কারণ তিনি দণ্ডিত। তার ভাই যে আবেদন করেছেন, সে আবেদনের মধ্যে বলা আছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ, আরও ভালো চিকিৎসা করা না হলে তার জীবন বিপন্ন হবে। তখন তাকে মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়েছেন। যিনি অসুস্থ তিনি রাজনীতি করতে পারবেন কি না, সেটা আপনারা বিবেচনা করে দেখেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘ যে দেশে প্রধান বিচারপতিকে নামিয়ে দেবার মতো কথা রাজনীতিবিদরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, সেই দেশে বিচার ব্যবস্থা ও কারাদন্ড নিয়ে প্রশ্ন আছে। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়ে বিচারবিভাগ সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছে মাত্র। ন্যায় বিচার পান নি তিনি। সুতরাং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য বেগম খালেদা জিয়ার স্বাভাবিক জীবনযাপনও পূর্বশর্ত হওয়া উচিত।   ‘

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে  বেগম খালেদা জিয়ার প্রকাশ্যে রাজনীতিতে ফেরা, কার্যালয়ে সময় দেয়া – এসব নিয়ে কানাঘুষা চলছে। সুত্রমতে চলতি মাস থেকেই ফিরোজা থেকে বের হয়ে খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে অফিস করা শুরু করবেন। তবে এমন সিদ্ধান্ত নেবার পর সরকারের প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটিও বিবেচনায় রেখেছেন তারা।

পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।  মার্চ মাসে  সপ্তম বারের মতো ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

এদিকে পাঁচ বছর আগে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তার ছেলে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। কয়েকটি মামলায় দন্ড নিয়ে লন্ডনে থাকা তারেক এখনও সেই দায়িত্বেই রয়েছেন।খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে পারা না-পারার বিষয়টি হঠাৎই গত জানুয়ারি মাসে সামনে নিয়ে আসেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

এইবাংলা /তুহিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর