25.2 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

বাহিরে বাঁশের বেড়া, ভিতরে আলিশান হেরেমখানা

আরও পড়ুন

::: নাদিরা শিমু :::

এসএসসির সহপাঠীদের এক সাথে সংযুক্ত করার  নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খোলা হয়েছে। সারাদেশে ২০০১ সালের এসএসসি ব্যাচের নামে খোলা সেই গ্রুপে সাতাশ হাজার মেম্বারও আছে। গ্রুপটির এডমিন মনির হোসেনের প্রতারণা ফাঁদে পড়ে অনেকেই ব্লাকমেইলিং এর শিকার হয়েছেন। এক ভুক্তভোগী নারীর করা অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জেনেছে মনিরের ব্ল্যাকমেইল ছকের নানা তথ্য।

সাইবার ইন্টেলিজেন্স এন্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্টের একটি টিম ঢাকার রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে  সেই ফেসবুক গ্রুপের এডমিন মোঃ মনির হোসাইনকে (৩৫)  গ্রেফতার করেছে।

জানা যায়,  মোঃ মনির হোসাইন (৩৫)  পেশায় একজন ব্যাংকার, কর্মসংস্থান ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত । কিন্তু আড়ালে তিনি একজন সাইভার ক্রিমিনাল। ব্যাচের ছেলেমেয়েদের সংযুক্ত করার ফেইজবুক গ্রুপের মাধ্যমেই পেতেছেন  মেয়েদের গোপন ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেবার ফাঁদ।

সাইবার পুলিশ সেন্টার সেই গ্রুপের এক নারী সদস্যকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের বিষয়ে তদন্তে নেমে পেয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ।  প্রথমে তাকে গ্রুপটির সদস্য করা হয় এবং পরে মডারেটর বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। তাকে ব্যাচমেটদের সেই গ্রুপে আরো ক্ষমতাবান করা হবে এবং নানাবিধ সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রলোভন দেখান এডমিন। বিভিন্ন যায়গায় এক সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় এবং খাওয়া-দাওয়া করে। বিভিন্ন ছলনা করে সেই নারীর সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং কৌশলে সেই অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবি ও ভিডিও করে রাখে। পরবর্তীতে সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে।

পুলিশ জানায়, একাধিকবার সেই নারী সদস্যের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে আসছিলো তথাকথিত এই এডমিন মোঃ মনির হোসাইন।মোঃ মনির হোসাইন (৩৫) অভিযোগকারী নারী সদস্য ছাড়াও একাধিক নারী সদস্যদের সাথে একই প্রক্রিয়ায় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। পরবর্তীতে তাদেরকেও ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন।

তদন্তে নেমে পুলিশ খোঁজ পায় রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় মনিরের গোপন হেরেমখানা । বাইরে বাঁশের বেড়া দেয়া টিনের ঘরটিকে উপভোগের সব সরঞ্জাম দিয়ে সাজিয়ে রাখা। দেখলে চোখে পড়ার মত তেমন কিছু নয়। কিন্ত ভেতরে এসি রুম, উন্নত শয়ন কক্ষ, এটাচ বাথরুম, ইয়াবা সেবন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সেই হেরেমখানায়। গোপন ক্যামেরাসহ মৌজ-মাস্তি করার সকল উপকরণ মজুদ করা আছে সেখানে।  গোপন ক্যামেরা দিয়ে সে মনির অনৈতিক  কাজের সব ছবি এবং কর্মকান্ড রেকর্ড করে রাখতো।

গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে বিভিন্ন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ও ছবি সম্বলিত দুইটি মোবাইল ফোন, তিনটি টি সিম কার্ড, এবং ২ টি মেমোরি কার্ড, ২ টি গোপন ক্যামেরা/ডিভাইস জব্দ করেছে পুলিশ।

সাইভার ক্রাইম ইউনিটের পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ জানান, ফেসবুক গ্রুপে মনিরের কর্তৃত্বপরায়ণ আচরণ এবং কর্মকান্ডের জন্য প্রতিকারে চেয়ে কয়েকজন মেম্বার সিআইডি সাইবার ক্রাইমে লিখিত অভিযোগ করেন। সিআইডি সাইবারের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযোগ এনালাইসিস এবং অনুসন্ধান করে সেই এডমিনের ব্যাপারে ভয়াবহ তথ্য পান। তদন্তে উঠে আসে ক্লাবকে ঘিরে তার নানান কুকীর্তি অনিয়ম বিশৃঙ্খলা নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত অনেক কিছু। একজন নারী সদস্যের অভিযোগে আজ তাকে বনশ্রী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ‘

পুলিশের তথ্যমতে,  এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ” গ্রুপের এডমিন হিসেবে মনির ভুক্তভোগী  নারীসহ একাধিক নারীর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। প্রথমে গ্রুপের মডারেটর বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে  ভিডিও কলে কথা বলে ও তার স্ক্রিনশট করে রাখে। পরবর্তীতে সেসব চ্যাটের স্ক্রিন রেকর্ড দিয়ে, কখনো ভিডিও চ্যাট দিয়ে  ব্ল্যাকমেইল করে বিভিন্ন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে আসছিলেন মনির।

কৌশলে তার গোপন আস্তানায় নিয়ে তাও ভিডিও করে রাখা হতো।  পরবর্তীতে আবার সেই ছবি ও ভিডিও দিয়ে পুনরায় ব্ল্যাকমেইল করে প্রতিনিয়ত তাদেরকে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতো। ভিকটিমকে জোর করে ছুরির ভয় দেখিয়ে  ধর্ষণও করতো।

পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগী নারী বিবাহিত। ভিকটিমের স্বামী অফিসে চলে গেলে কখনো কখনো মনির ভিকটিমের বাড়িতে গিয়ে হানা দিত। তার অত্যাচারে ভিকটিমের জীবন অতীষ্ট হয়ে পড়ে এবং সেই নারী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হয়।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ  বিভিন্ন মেয়েকে নিজের কব্জায় নিয়ে টাকার বিনিময়ে ধনাঢ্য লোকদের কাছে প্রেরণ করত। বিনিময় মূল্য কখনো ২০,০০০ হাজার (বিশ হাজার) টাকা ছাড়িয়ে যেত। ভিকটিমরা সামান্য টাকা পেলেও মনির পেত টাকার সিংহভাগ।

এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত হয়ে বিভিন্ন  মেয়েদের উপর জুলুম এবং অত্যাচার করে আসছিলেন ব্যাংকার মনির । কিন্তু  সিআইডির ফাঁদে তাকে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলো। গ্রেফতারকৃত মনিরের বিরুদ্ধে ডিএমপি’র রুপনগর থানায় পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এইবাংলা /  তুহিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর