::: নাদিরা শিমু :::
নানা কারণে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন থেকে আড়ালে থাকলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা পুনরায় নিজ নিজ আধিপত্য নিশ্চিত করতে কিশোরদের ব্যবহার করছেন। তাদের হাতেই দেয়া হচ্ছে অস্ত্র৷ এসব বিপদগামী কিশোরদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরণি পাড়ি দিতে চান ‘বড়ভাই’রা।
দুবাই ও ভারতে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরাই পৃষ্ঠপোষকতা করছে নগরের সবকটি কিশোর গ্যাং’কে। রাজনৈতিক পরিচয়ে এসব কিশোর গ্যাং দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে স্থানীয় যুবলীগ, শেখ হাসিনা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের পদধারী নেতাদের। মুলত ২০০৮ সালে রাজনীতির রঙ বদলে শিবিরের সন্ত্রাসী ক্ষমতাসীন দলের ছায়ায় লালন পালন করছে কিশোরদের। এরমধ্য দুবাই পালিয়ে থাকা এইট মার্ডারের সাজ্জাদ, মশিউর রহমান দিদার, সরোয়ার, মুন্না নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে নগরের চান্দগাঁও, বিবিরহাট, বায়েজিদ, অক্সিজেন, পাহাড়তলি, অলংকার, কসাইপাড়া, হামজার বাগ এলাকায়। অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠানের চাঁদা, জমির দখল নেয়া, বিরোধ সেটেলমেন্ট করছেন দেদারসে।
এরমধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুন – ও সরওয়ার জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে শিবিরের সাজ্জাদের সাম্রাজ্য পাহারা দিচ্ছেন। সরওয়ার জেল থেকে বের হয়েছেন সম্প্রতি। জানা যায়, পুরোনো বিরোধ মিটিয়ে মামুন আর সরওয়ার কাজ করছে একই শিবিরে। স্কুলব্যাগে রাখা অস্ত্রসহ আরমান এক যুবক গ্রেফতার হয়। ধরা পড়া সেই অস্ত্র নিয়ে যাচ্ছিলো হামজারবাগ এলাকার রবিন, বুড়ির নাতি সাজ্জাদ ও এনামের কাছে। তারা তিনটি কিশোর গ্যাং’ নিয়ন্ত্রণ করছেন। বড়ভাই হিসেবে এসব কিশোর গ্যাং দেখভাল করছেন জনৈক আবদুল্লাহ আল মামুন। তাদের আয়ত্তে বেশকিছু অস্ত্র থাকলেও, সামনের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাড়তি অস্ত্র সংগ্রহ করছেন।
ডিবি (পশ্চিম) উপ পুলিশ কমিশনার আলী হোসেন জানান, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আরমান গনি নামের এক যুবক অস্ত্রসহ আটক হবার পর বেশকিছু তথ্য দিয়েছে। সে কিশোর গ্যাং এর জন্য অস্ত্র বহন করছিলো। ‘
বহদ্দার এইট মার্ডার মামলার আসামি সাজ্জাদ দুবাই পালিয়ে থাকা অবস্থায় তার পক্ষে সন্ত্রাসী গ্রুপের দায়িত্ব নেয় আবদুল্লাহ আল মামুন, সরোয়ার এবং ম্যাক্সন নামে তিন সন্ত্রাসী। সাজ্জাদের হয়ে তারা বায়েজীদ এবং অক্সিজেন এলাকায় নির্বিচারে চাঁদাবাজী করে আসছে। দুবাই থেকে সাজ্জাদের নির্দেশনা অনুযায়ী চাঁদা না পেলে স্থানীয়দের বাড়িতে গুলি বর্ষন এবং আগুন লাগিয়ে দিতো সরোয়ার ও ম্যাক্সনসহ সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা।
এরমধ্যে ২০২০ সালে কাতার থেকে ফিরে ঢাকায় গ্রেফতার হন সরওয়ার। আর মাক্সন ভারতে রহস্যজনকভাবে মারা যান। সুত্রমতে, বর্তমানে সাজ্জাদের বাহিনীটি দেখভাল করছেন মামুন ও সরওয়ার।কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিয়ে মামুনের মদো অনেকেই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। দিন যত যাচ্ছে ততই ভয়ংকর উঠছে কিশোর গ্যাং। দিন-দুপুরে তারা ছিনতাই করছে। কথায় কথায় মারামারি ও অস্ত্রবাজি করছে। খুন করতে দ্বিধাবোধ করছে না। ১০ ই মে রাতে নারীঘটিত বিষয় নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে দুই তরুণ খুন হন। এ ঘটনার পর চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং এর অপতৎপরতার বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।এরই মধ্যে পাহাড়তলীতে এক দাড়োয়ানকে ঘোষণা দিয়ে ছুরিকাহত করে খুন করা হয়েছে। এঘটনার সাথে জড়িত চারজন র্যাব গ্রেফতার করেছে৷ গ্রেফতারকৃতরা সবাই স্থানীয় কাউন্সিলর লিটনের অনুসারী।
নগরীর ১৬ থানা জুড়ে ৫০টির বেশি কিশোর গ্যাং গ্রুপে অন্তত ৩ হাজার কিশোর সক্রিয়। এলাকার মাদক বেচা-কেনা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাতে হকার বাণিজ্য, মারামারি, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধে সক্রিয় এসব কিশোর গ্যাং সদস্যরা। কথিত বড় ভাইদের মদদে চলছে তাদের ভয়ানক সব কর্মকাণ্ড।
সুত্রমতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পেশি শক্তি বাড়াতে বিভিন্ন কিশোর গ্যাং এর বড়ভাইরা অস্ত্র সংগ্রহ করছে পার্বত্য অঞ্চল ও রাজধানী ঢাকা থেকে। মুলত নির্বাচনে জামাত বিএনপির হয়ে ভাড়া খাটার কন্ট্রাক নেবার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। উপজেলা সদরে প্রার্থীদের জেতানোর কাছে ব্যবহার করা হবে অস্ত্রধারী এসব কিশোর গ্যাং।
এইবাংলা /তুহিন