::: নিজস্ব প্রতিবেদক :::
স্কাউটসের আড়ালে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হচ্ছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জামায়াত-শিবির ঘরানার শিক্ষকরা স্কাউট লিডার হিসেবে প্রথমে প্রশিক্ষণ নেন। পরে রোভার লিডার বা স্কাউট লিডার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিবির সমর্থিত শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করেন। পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকেও ওই সংগঠনের আদর্শে দীক্ষিত করে চলেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি নানা কৌশলে চট্টগ্রাম জেলা রোভার স্কাউটে আছেন দীর্ঘদিন। ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন জেলা স্কাউটস রোভার কমিটির কয়েকজন কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার অঞ্চলের কমিশনার এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক একটি চিঠি দেন পদাধিকার বলে চট্টগ্রাম জেলা রোভার সভাপতি ওই সময়ের জেলা প্রশাসককে। চিঠিটিতে বলা হয়, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিটির দায়িত্বে থাকা কয়েকজনের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে।’
ড. গোলাম ফারুক ওই চিঠিতে আরো লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ স্কাউটস একটি অরাজনৈতিক সেবামূলক সংস্থা। নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা ব্যক্তিদেরকে জেলা রোভারের কমিটিতে অর্ন্তভুক্তি আইন ও গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি।’
এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জড়িতদের অপসারণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদেরকে অনুরোধ করা হলেও অজ্ঞাতকারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযুক্তরা আছেন বহাল তবিয়তে। যাঁদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে মো. ফজলুল কাদের চৌধুরী, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন খান, এস এম হাবিবুল্লাহ হিরু অন্যতম। ফজলুল কাদের বতর্মানে সাতকানিয়া সরকারি কলেজের অধ্যাপক। তিনি ছাত্রশিবিরের ক্যাডার ছিলেন। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। উচ্চমাধ্যমিক পড়েছেন নাজিরহাট কলেজে। কলেজে পড়া অবস্থায় শিবিরের নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল। ওই সময় তিনি চার/পাঁচটি হত্যাসহ একডজন মামলার আসামিও ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা এখনো বিচারাধীন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে তৎকালীন সিটি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ফজলুল কাদের চট্টগ্রাম রোভার স্কাউটসের দায়িত্ব পাওয়ায় এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করে নগরের বিভিন্ন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। স্কাউটিংয়ের নামে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের সংগঠিত করছেন অভিযোগ করে একপর্যায়ে ফজলুলের শাস্তি দাবি করে কলেজে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে সিটি কলেজ থেকে বদলি হয়ে সাতকানিয়া কলেজে চলে যান তিনি। কিন্তু বহাল তবিয়তে আছেন স্কাউট কার্যক্রমে।
সংশ্লিষ্ট বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে জামাত শিবির চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা কারণে কোণঠাঁসা। স্কাউটের আড়ালে নগরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিবিরের রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন অভিযুক্ত স্কাউট লিডাররা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করার সুযোগে সংগঠিত হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র।
এইবাংলা/ তুহিন