পিরোজপুর প্রতিনিধি :
দক্ষিণের জেলা পিরোজপুর শুধু পেয়ারা নয়, এখন আমড়া উৎপাদনেও শীর্ষস্থানে রয়েছে। পেয়ারা মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমড়া তোলা, বাছাই ও পাইকারি বেচাকেনা শুরু হয়। জেলার ভান্ডারিয়া, কাউখালী, মঠবাড়িয়া ও নেছারাবাদ উপজেলায় এবার আমড়ার উৎপাদন বেড়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে নেছারাবাদে (স্বরূপকাঠী)।
দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
আকারে বড়, স্বাদে মিষ্টি ও ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় পিরোজপুরের আমড়ার সুনাম রয়েছে সারাদেশে। শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের আলো-বাতাসে যখন আমড়া সবুজ খোসা ছেড়ে তামাটে রঙ ধারণ করে, তখন খালজুড়ে শুরু হয় আমড়া তোলার উৎসব। নৌকাভর্তি আমড়া নিয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ভিড় করেন আটঘর কুড়িয়ানাসহ বিভিন্ন পাইকারি মোকামে।
ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত পাইকারি বাজারে দরদাম, পরিবহন আর লেনদেনের ব্যস্ততায় উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, এখন প্রতি মণ আমড়া বিক্রি হচ্ছে ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পিরোজপুরে ৫৭৭ হেক্টর জমিতে ১০,১২৪ মেট্রিক টন আমড়া উৎপাদিত হয়েছে — যা বরিশাল বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ভিমরুলি বাজারের আড়তদার লিটু ব্যাপারী জানান, “পিরোজপুরের আমড়া সারাদেশে পরিচিত। মান ভালো, স্বাদে মিষ্টি এবং ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। মৌসুমে প্রায় ২০ জন শ্রমিক আমার অধীনে কাজ করে, প্রতিদিন গড়ে ৪০০–৫০০ বস্তা আমড়া সরবরাহ করি।”
আটঘর বাজারের আড়তদার জসিম হাওলাদার বলেন, “চলতি মৌসুমে প্রায় ২০০–২৫০ কোটি টাকার আমড়া বেচাকেনা হয়েছে। ফলন ভালো হলে আগামী বছর এ পরিমাণ ৩০০–৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।”
কৃষকরা জানান, পেয়ারা চাষে লাভ কমে যাওয়ায় অনেকেই এখন আমড়া চাষে ঝুঁকছেন। এ মৌসুমে ভালো দাম পেয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেরেছেন তাঁরা। ফলে আমড়া এখন কৃষকদের নতুন আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
বরিশালের আমড়া জিআই (Geographical Indication) স্বীকৃতি পাওয়ার পর সারাদেশে এর চাহিদা আরও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আমড়া এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় — যেমন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী ও ময়মনসিংহে — সরবরাহ করা হচ্ছে।
কুয়াকাটা থেকে আমড়া কিনতে আসা জসিম ব্যাপারী বলেন, “এখানকার আমড়ার মান খুব ভালো। প্রতিবছর ১০–১৫ লাখ টাকার আমড়া কিনে খুচরা বিক্রি করি।”
শ্রমিক সুমন মণ্ডল বলেন, “জিআই পণ্য হওয়ার কারণে ভবিষ্যতে দেশের বাইরে আমড়া রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।”
পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৌমিত্র সরকার জানান, “৫৭৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত আমড়ার বাজারমূল্য প্রায় শত কোটি টাকা। জিআই পণ্যের স্বীকৃতির ফলে এর সুনাম ও উৎপাদন উভয়ই বাড়ছে। নতুন চাষিদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।”
এই বাংলা/এমএস
টপিক
