কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের পাত্রখাতা গ্রামের পূর্ব চর পাত্রখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র যাতায়াতপথ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে। সরকারি বন্দোবস্তপ্রাপ্ত জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় এ পথ পুরোপুরি অচল হয়ে যায়। সমাধান না পেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে সড়কের ধারে গাছতলায় পাঠদান শুরু করেছেন।
দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬ জন শিক্ষক এবং ১০৪ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ওয়াবদা খালের বাঁধ ছিল বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা। বহু বছর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ পথ ব্যবহার করলেও এখন সেখানে বসতি স্থাপন করায় পথটি বন্ধ হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, স্কুলে প্রবেশের পথ না থাকায় খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। যেখানে আগে বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তা ছিল, সেখানে এখন বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক শাহ্ আলম জানান, প্রতিষ্ঠার শুরুতে চারজন শিক্ষক নিয়ে পাঠদান শুরু হয়েছিল। প্রথমে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচালিত হলেও ২০১৩ সালে এটি সরকারি বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ে যাওয়ার একমাত্র পথটি এখন দখল হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
জানা যায়, বিদ্যালয়ের জমিদাতা সাবেক ইউপি সদস্য মো. সেকেন্দার আলী স্কুলের জন্য ৩৫ শতাংশ জমি দান করেন। যাতায়াতের রাস্তা ছিল ৩১৩৫ ও ৩১৩৬ দাগের ওপর অবস্থিত ওয়াবদা খালের বাঁধের ওপর দিয়ে। এর মধ্যে ৩১৩৬ দাগ সরকারি খাসজমি। কিন্তু ২০১৬ সালে অষ্টমীর চরের জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে ভূমিহীন দেখিয়ে এ জমির অংশ বিশেষ বন্দোবস্ত নেন। অভিযোগ রয়েছে, শ্যালক কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ইউএনওর প্রভাব খাটিয়ে তিনি আরও জমি দখলে নিয়ে সেখানেই বসতি স্থাপন করেন, ফলে বিদ্যালয়ের পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
পথ না থাকায় নানা ভোগান্তির কথা জানায় শিক্ষার্থীরাও। চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন বলেন, “রাস্তা বন্ধ থাকায় পাশের বাড়ির ভেতর দিয়ে স্কুলে আসতে হয়। বাড়ির পাশে বড় গর্ত থাকায় ভয় লাগে।” আরেক শিক্ষার্থী সুম্মা খাতুন জানায়, “মানুষের বাড়ির মধ্যে দিয়ে আসতে গেলে বকা দেয়। আজ ম্যামরা গাছতলায় ক্লাস নিচ্ছেন, কষ্ট হলেও আসি।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ রিয়াদ বিন রানু বলেন, “প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কষ্ট করে স্কুলে আসতে হয়। বহুবার প্রশাসনকে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দ্রুত রাস্তা পুনঃস্থাপন জরুরি।”
তবে জমির দখলদার জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা রাস্তা বন্ধ করিনি। সরকার রাস্তার জন্য জমি চাইলে জায়গা দেব।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনসুর আলী জানান, সরকারি জমি বন্দোবস্ত নিয়ে বিদ্যালয়ের পথ বন্ধ করা ‘ধৃষ্টতার চেয়েও বেশি কিছু’। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনিও নানাভাবে হুমকির মুখে পড়েছেন।
চিলমারী উপজেলার ইউএনও সবুজ কুমার বসাক জানান, “রাস্তার বিষয়ে কর্মকর্তারা সরেজমিন গিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন। খুব শিগগিরই স্কুলের রাস্তা পুনরায় খোলা হবে।”
