নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়ীয়া) প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এখন আর দেখা যায় না একসময় বিয়ের শোভা বাড়ানো ঐতিহ্যবাহী পালকি। একসময় গ্রামবাংলার ছড়া— “বাক বাকুম পায়রা, মাথায় দিয়ে টায়রা, বউ সাজবে কাল কী, চড়বে সোনার পালকি”— মনে করিয়ে দিত পালকির রঙিন দিনগুলোকে। আজ সেই স্মৃতি শুধু বয়োজ্যেষ্ঠদের গল্পে বেঁচে আছে।
দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
স্থানীয় প্রবীণ ধনমিয়া, আব্দুল হাইসহ কয়েকজন জানান, তাদের ছোটবেলায় পালকি ছিল যাতায়াতের অন্যতম প্রধান বাহন। এক বা দু’জন যাত্রী নিয়ে ৪ থেকে ৮ জন বাহক দীর্ঘ পথ হেঁটে পালকি বহন করতেন। বিশেষ করে বিয়ের রাতে বর ও কনেকে ভোরবেলা পালকিতে করে আনতে বাহকরা পথে পথে ছন্দ মিলিয়ে গান গাইতেন, আর সেই আনন্দেই জমে উঠত পুরো গ্রাম।
বরযাত্রা শেষে কনের আগমন উপলক্ষে বরের বাড়িতে অপেক্ষায় থাকতেন গৃহস্থের নারী-পুরুষ। পালকি পৌঁছামাত্রই ধান ও দূর্বা ছিটিয়ে নবদম্পতিকে বরণ করা হতো। বাড়ির তরুণরা রং ও কাদামাটি ছিটিয়ে হাসি-আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠতেন। সেই রঙিন পালকির সৌন্দর্য এখন কেবল স্মৃতিতে।
পালকি শুধু বিয়ে নয়, অসুস্থ রোগী পরিবহনেও ব্যবহৃত হতো। বিভিন্ন আকারে তৈরি পালকির মধ্যে সাধারণ পালকি, আয়না পালকি ও ময়ূরপঙ্খী পালকি ছিল বিশেষ পরিচিত। কাঠের তৈরি পাখি, পুতুল ও লতাপাতার নকশায় সজ্জিত এসব পালকি বহনের জন্য অনুষ্ঠান শুরুর অনেক দিন আগে থেকেই বাহকদের বুকিং করা হতো।
ইতিহাসে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও জমিদারি পরিদর্শনে পালকি ব্যবহার করতেন। তবে ১৯৭০–এর দশকে রিকশার প্রচলন, আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার বিকাশ এবং মোটরযানের সহজলভ্যতার ফলে ধীরে ধীরে পালকির ব্যবহার পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
আজ নাসিরনগরের মানুষ কেবল স্মৃতিতেই খুঁজে ফেরে সেই প্রাচীন পালকি সংস্কৃতির রোমাঞ্চ ও সৌন্দর্য।

