কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রাম জেলার ১৬ নদ–নদী অববাহিকার সাড়ে চার শতাধিক চরের মধ্যে অন্তত সাড়ে তিনশ চরেই নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবার ন্যূনতম সুবিধা। এসব চরের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিতে নদীপথ ও দীর্ঘ বালুচর পাড়ি দিয়ে উপজেলা বা জেলা সদরে পৌঁছাতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও কষ্টদায়ক।
দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
চরবাসীদের অভিযোগ—কেউ অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও পান না তারা। অন্যদিকে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বড় বাধা বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার কালির আলগা চর জেগে ওঠে ৪ বছর আগে। এখানে ৪ শতাধিক পরিবারের বসবাস হলেও নেই কোনো কমিউনিটি ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। একই পরিস্থিতি ব্রহ্মপুত্রের বালাডোবা, মুসারচর, আটাশির চর, মাঝিয়ালির চর, মসলার চরসহ ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদীর বেশির ভাগ চরেও।
চরের মানুষের অভিযোগ, গুরুতর অসুস্থ রোগীকে প্রথমে ভাঁড়ে করে বালুচর পাড় হয়ে নদীর ঘাটে নিতে হয়। পরে নৌকায় দেড়–দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হয়। এরপর আবার বালুচর ও কাঁচা রাস্তায় ৮–১০ কিলোমিটার পথ অটো বা রিকশায় হাসপাতালে পৌঁছাতে লাগে পুরো একটি দিন।
কালির আলগা চরের বাসিন্দা মো. নুর আলম বলেন, “৪ বছর ধরে এখানে ৪ শত পরিবার থাকলেও সরকারি স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে যেতে পুরো দিন লেগে যায়।”
উলিপুর উপজেলার বালাডোবা চরের মোছা. রহিমা বেগম বলেন, “গর্ভবতী নারী আর জটিল রোগীরা বেশি ভোগে। ডেলিভারিতে সমস্যা হলে নদী ও বালুচর পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে নিতে আমাদের অনেক ঝুঁকি নিতে হয়।”
চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, “সবচেয়ে ঝুঁকিতে গর্ভবতী নারী ও জরুরি রোগীরা। চরবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে ‘চর মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠার দাবি তুলে আন্দোলনে নামব।”
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, “যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় চরাঞ্চলে চিকিৎসা দেওয়া চ্যালেঞ্জিং। তবুও বিভিন্নভাবে সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।”
উল্লেখ্য, কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার অববাহিকার সাড়ে চার শতাধিক চরে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। জেলার মোট ২৯৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে চরাঞ্চলে রয়েছে মাত্র ৮৪টি।
এই বাংলা/এমএস
টপিক
