অযত্নে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের সাক্ষী নাসিরনগরের নবাববাড়ি

0
108
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে নাসিরনগরের গোকর্ন নবাব বাড়ী / ছবি - এই বাংলা প্রতিনিধি

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি :

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হাওড় বেষ্টিত নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক নবাববাড়ি আজ কালের বিবর্তনে অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় যেখান থেকে আলোকিত হয়েছিল জ্ঞান, রাজনীতি ও সমাজ সংস্কারের ধারা—সেই নবাববাড়ি এখন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।

দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

এই বাড়িটি ছিল নবাব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদার—যিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ধর্মীয় পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসংস্কারক। তাঁর জীবন, কর্ম এবং কীর্তি এই বাড়ির দেয়ালে-ইটে-কক্ষে এখনো লুকিয়ে আছে ইতিহাসের অমূল্য স্মৃতি।

১৮৬৩ সালে নাসিরনগরের গোকর্ণ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পূর্বপুরুষ সৈয়দ বন্দেগী শাহ ইসমাইল ছিলেন হযরত শাহজালালের (রহ.) সহচরদের অন্যতম। পিতা শাহ সৈয়দ রিয়াযাতুল্লাহ ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও ফার্সি ভাষার কবি।

স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা ১৮৮৪ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আই.এ. এবং ১৮৮৬ সালে বি.এ. পাস করেন। পরে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন এবং দ্বিতীয় মুসলিম বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। শিক্ষা, নারী উন্নয়ন ও স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে তাঁর অবদান ইতিহাসে অনন্য।

তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠাকুর আইন অধ্যাপক ছিলেন এবং “ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান পেনাল কোড” বিষয়ে তাঁর লেখা দেশজুড়ে খ্যাতি পায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কমিটির একজন সদস্য ছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর অবদান অগ্রগণ্য।
তিনি গোকর্ণে ‘গোকর্ণ ওলীউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে মুসলিম ছাত্রদের জন্য স্ত্রীর নামে “আসমাতুননিসা ছাত্রাবাস” নির্মাণ করেন।

সম্মাননা ও কৃতিত্ব : ১৯১৩ সালে তাঁকে নবাব খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯১৬ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে “নাইট কমান্ডার অব দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার (K.C.I.E.)” খেতাবে সম্মানিত করে। তিনি ছিলেন বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রথম ভারতীয় প্রেসিডেন্ট। সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

এই নবাববাড়ি একসময় ছিল জ্ঞানচর্চা ও রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু আজ এটি ভেঙে পড়া দেয়াল, ঝোপঝাড় ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় প্রবীণরা বলেন, “এ বাড়ির প্রতিটি ইটে আছে ইতিহাসের ছোঁয়া, অথচ আজ তা ধ্বংসের মুখে।”

গোকর্ণের নবাববাড়ি শুধু একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়, এটি বাংলাদেশের শিক্ষা ও রাজনীতির এক উজ্জ্বল অধ্যায়। এলাকাবাসীর দাবি— নবাববাড়িটি সংরক্ষণ করে জাদুঘর বা ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হোক।

নবাব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা ১৯২২ সালের ৭ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর রেখে যাওয়া ঐতিহ্য আজ বিলীন হওয়ার পথে, আর জনগণ অপেক্ষায় সরকারের সুদৃষ্টি ও পদক্ষেপের।

এই বাংলা/এমএস

টপিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here