25 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

বন্দর থেকে অবৈধভাবে বের করা হচ্ছিলো পণ্যভর্তি দুটি কনটেইনার

নিরাপত্তাকর্মীসহ আটক আটজন

আরও পড়ুন

::: নেওয়াজ তুহিন :::

কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বের করা হচ্ছে পণ্যভর্তি কনটেইনার। একটি চক্র দীর্ঘদিন থেকে এমন জালিয়াতির আশ্রয় নিলেও বন্দরের নিরাপত্তা দপ্তর কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে নি। বৃহস্পতিবার ভোরে এভাবেই অবৈধভাবে পণ্যের কনটেইনার বের করা হচ্ছিলো নিরাপত্তা গেট দিয়ে। এসব কনটেইনার পার করে দিতে সহযোগিতা করেছে বন্দরেরই নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মচারী, আনসার সদস্য,  নিরাপত্তা কর্মীরা। পণ্যভর্তি দুটি কনটেইনারসহ তিনটি টেইলার আটক করে বন্দরের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা  হয়েছে। এই ঘটনায় আটজনকে আটক করে ইপিজেড থানায় দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ।

কোন ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দরের সাউথ টার্মিনাল থেকে কাস্টমসের বুলেট সিলযুক্ত কনটেইনারসহ পণ্য সরিয়ে নেবার সময় এই দুটি কনটেইনার, তিনটি টেইলার  ( ৪০ ও ২০ ফিটের) আটক করেছে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ। বৃহস্পতিবার ( ৯মার্চ) সকাল আনুমানিক আটটা চল্লিশ মিনিটে টেইলারসহ কনটেইনার দুটি আটক করা হয়।  এবিষয়ে বন্দরের নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মচারী, টেইলারের ড্রাইভার, হেলপারসহ নয় জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা দপ্তরের এএসআই মারুফ হোসেন। চট্টগ্রামের  ইপিজেড ( মামলা নম্বর ৮,  ১০/০৩/২৩) থানায় পেনাল কোর্টের ৩৭৯/৪১১/১০৯ ধারার এই মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় অজ্ঞাত নামা আরও ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে সাউথ টার্মিনালের ( গুপ্তখাল) নিরাপত্তা গেইটে তিনটি টেইলারসহ কনটেইনার দুটি আটক করা হয়েছে। একটি কনটেইনারে ২৯ লক্ষ টাকার ২৫ টন প্লাস্টিক দানা অন্যটিতে পাঁচ লক্ষ টাকা মুল্যের ৩২ রোল  ফ্লিস ফ্রেবিক্স ছিলো ।  এজাহার অনুযায়ী গেইটে  নিরাপত্তার দায়িত্বে তিন শিফটে দশজন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত  ছিলেন। সকালে নিরাপত্তার শিথিলতার সুযোগে গেট দিয়ে  টেইলারে করে কনটেইনার দুটি বের করার সময় ঘটনা ফাঁস হয়। এরআগে বন্দরের আরএসটি ( হ্যান্ডেলিং যন্ত্রপাতি)  দিয়েই  এগুলো টেইলারে লোড করা হয়েছিলো।

মামলায় বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের নিম্ম বহি: সহকারী আব্দুল হাকিমকে মামলার এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামীরা হলেন,  বন্দরের নিরাপত্তাকর্মী কাজী আবু দাউদ, গাড়ি চালক জালাল উদ্দিন,গাড়ি চালক আইয়ুব আলী ( ২৩),গাড়ি চালক নাজমুল হোসেন (২৭), গাড়ির হেলপার নুরুল ইসলাম (২৭),  আনসার সদস্য অনুকুল বিশ্বাস (২৫) , আনসার সদস্য এনামুল হক (২৭), বন্দরের নিরাপত্তা দপ্তরের বহিস্কৃত  নিরাপত্তাকর্মী মোজাম্মেল হোসেন রবিন।

এজাহারে মারুফ হোসেন উল্লেখ করেন,  ঘটনার দিন বন্দরের নিরাপত্তা গেইটে এসে দেখতে পান দুটি কনটেইনার (৪০ ফিট) বোঝাই করা দুটি টেইলার এবং একটি খালি টেইলার বের হবার জন্য অপেক্ষা করছে। গোয়েন্দা  কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, অবৈধভাবে কোন ধরনের কাগজপত্র ব্যতিরেকে একটি টেইলারে চল্লিশ ফিটের কনটেইনার  (চট্ট মেট্টো-ট ৮২-১৮৬৭) ও আরেকটি টেইলারে ( মেট্টো-ট ১১-৫৪৬০) বিশ ফুটের কনটেইনার নিয়ে  সাউথ কনটেইনার থেকে বের হবার জন্য অপেক্ষা করছে। লাইনে  আরেকটি খালি টেইলারও (মেট্টো-ট ৮১-৪৫১৬) অপেক্ষায় ছিলো।  এসময় দায়িত্বরত গোয়েন্দা সদস্য নজরুল গাড়িগুলোর কাছে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস চাইলে তারা ডকুমেন্টস দেখাতে পারে নি। উল্টো ড্রাইভার ও হেলপাররা সেই গোয়েন্দা সদস্যকে লাঞ্চিত করেন। ঘটনার পর বিষয়টি সিকিউরিটি ইনচার্জ ও গোয়েন্দা শাখার ইনচার্জকে অবহিত করা হলে তারা ঘটনাস্থলে এসে কনটেইনারসহ টেইলারগুলো আটক করেন।

জানা যায়,  বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে নিরাপত্তা কর্মীদের দিকে এগিয়ে যায়  একটি টেইলার।  বাকি দুটি টেইলারকে চালক হেলপারসহ আটক করতে সক্ষম হয় গেটের নিরাপত্তাকর্মীরা।

এদিকে, ঘটনার সাইত্রিশ ঘন্টা গত হলেও মামলার অভিযোগ লুকিয়ে রেখে দফারফা করার চেষ্টা চালান একটি চক্র। বৃহস্পতিবার রাতে মামলা রুজু করার কথা থাকলেও করা হয় নি। শুক্র সন্ধ্যা পর্যন্ত বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ মামলার বাদি মারুফ হোসেন। তবে তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন বন্দরের নিরাপত্তা দপ্তরের বহিস্কৃত  নিরাপত্তাকর্মী মোজাম্মেল হোসেন রবিন চুক্তি করে এসব কনটেইনার অবৈধভাবে  পার করছিলো।

সুত্রমতে, আটক করা কনটেইনার দুটির একটি কনটেইনারে কেমিকেল এবং অন্যটিকে কাপড় ও কম্বল ভর্তি করা ছিলো। এছাড়া দুটি কনটেইনার গেট দিয়ে বের হতে সক্ষম হয়।  কিন্তু মামলার এজাহারে বের করা কনটেইনার ও পণ্যের পুর্নাঙ্গ  বিবরণ উল্লেখ করা হয় নি। নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মচারীরা বন্দরের লোডিং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে  কোন ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই  বের করছিলেন কনটেইনার দুটি।

এবিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের  পরিচালক (নিরাপত্তা) লে. কর্নেল  আরিফুর রহমান   জানান, ‘ নিরাপত্তা দপ্তরের এএসআই মারুফ হোসেন ঘটনার পরপরই ইপিজেড থানায় মামলার এজাহার জমা দিয়েছেন। যারা যারা জড়িত তাদের নামোল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে। আটক করা কনটেইনার ( কাস্টমসের বুলেট সিল যুক্ত) দুটি পুনরায় সাউথ টার্মিনালে ফেরত নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে তিনটি টেইলার  ‘

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিজ্ঞেসাবাদে এই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি আনসার সদস্য ও  নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মচারীদের তিনজন স্বীকার করেছে। বন্দর থেকে এভাবে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই নিয়মিত  কনটেইনার বের করা হচ্ছে। কখনোবা নেয়া হচ্ছে জালিয়াতির আশ্রয়। চট্টগ্রাম  কাস্টমস বা শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারি না থাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন থেকে বন্দর থেকে কোন ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই  এভাবে কনটেইনার খালাস করে আসছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর