25 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

ক্ষমতার চূড়ান্ত রুপ দেখালেন পাঁচলাইশের ওসি

আরও পড়ুন

::: নাদিরা শিমু :::

চট্টগ্রামে রোগীর স্বজনকে নির্যাতনের ঘটনায় সরাসরি যুক্ত থাকার পরও পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম উদ্দীনের কিছুই হয় নি। একারণে একনাগাড়ে অসুস্থতার অজুহাতে  ৭৯ দিন ছুটিতে থেকে আঁকড়ে রেখেছেন চেয়ারও। তাকে মামলা থেকর সিআইডির অব্যাহতি দেয়ার আবেদনের সাথে সাথেই সুস্থ হয়ে ফিরেছেন কর্মক্ষেত্রে।

পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে নগরের পাঁচলাইশ থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ১৫ মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (তথ্যগত ভুল) জমা দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রতিবেদনে মামলার দুই আসামি পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজিম উদ্দিন এবং একই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল আজিজকে ঘটনার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং সিআইডি চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো ইউনিটের পুলিশ সুপার (এসপি) শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ‘ তদন্ত আসামির সংশ্লিষ্টতা মেলেনি। তদন্তে মুস্তাকিমকে নির্যাতনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাঁর শারীরিক পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকদের দেওয়া প্রতিবেদনেও কোনো কিছু উঠে আসেনি। তাঁর মাকে নির্যাতনের যে কথা বলা হয়েছে, তা মিথ্যা। ঘটনার সময় তাঁর মায়ের ডায়ালাইসিস চলছিল। তাই মামলাটিতে তথ্যগত ভুল রয়েছে উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আসামি দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।’

গেল ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালত সিআইডিকে তদন্ত প্রতিবেদন দেবার আদেশ দিয়েছিলেন। পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে সিএমপির পাঁচলাইশ থানার ওসি ও  এসআই আজিজের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার পর আদালত পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার নিচে নয় এমন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করে  ২৭ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ হেফাজতে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও এসআই আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিলো। মামলা দায়েরের পর অসুস্থতা দেখিয়ে ছুটিতে যান দুই কর্মকর্তা। এরপর থেকে উনআশি দিন আর থানায় আসেননি তারা।

আইনজীবীরা বলেছেন, থানায় মামলা দায়েরের সঙ্গে সঙ্গে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হয়। অথবা আসামিকে স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হয়। আসামি যদি সরকারি কর্মকর্তা হন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে হয়। তবে ওসি নাজিম এবং এসআই আজিজকে গ্রেপ্তার করেনি মামলার তদন্ত সংস্থা ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের কেউ আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি এবং কাউকে বরখাস্তও করা হয়নি। দুজন ছুটির অজুহাতে আর থানায় আসেননি। পরিশেষে সিআইডি দুজনকেই মামলা থেকে অব্যাহত দেয়ার সুপারিশ করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কিডনি রোগীদের স্বজনদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়। এদিন ওসির মারমুখী আচরণের ফুটেজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। মানবিক এ আন্দোলন থেকে একজনকে মারতে মারতে গ্রেপ্তার করেন ওসি নাজিম। এদিন ওসি নাজিম এক নারীকেও লাথি দিয়ে আলোচনায় আসেন। এরপর গ্রেপ্তার মোস্তাকিমকে পুলিশ হেফাজতে মারধরের অভিযোগ ওঠে। তারপরও অজানা কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। যদিও অতীতে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এমন নির্বিকার দেখা যায়নি।

নিয়ম হচ্ছে থানায় মামলা রেকর্ডের সঙ্গে সঙ্গে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করতে হবে। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় ওসি নাজিম ও এসআই আজিজকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। আইন অনুযায়ী তারা দুইমাসের বেশি সময়  পলাতক ছিলেন ।

পুলিশ হেফাজতে মারধরের অভিযোগে ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন চমেক হাসপাতালের আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার সৈয়দ মোহাম্মদ মুনতাকিম ওরফে মোস্তাকিম। একই পিটিশনে আসামি করা হয় এসআই আবদুল আজিজকে। আদালত পিটিশনটিকে নিয়মিত মামলা হিসেবে পাঁচলাইশ থানায় রেকর্ডের আদেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে মামলাটি পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে সিআইডিকে তদন্তের আদেশ দেন।

সিআইডির তদন্তে সাফসুতরা হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে এই প্রতিবেদন দেওয়ার পর ৮০ দিন ‘অসুস্থতাজনিত’ ছুটি শেষে থানায় যোগ দিয়েছেন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার অভিযুক্ত ওসি নাজিম উদ্দিন এবং এসআই আবদুল আজিজ।

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর