::: নাদিরা শিমু :::
এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিভিন্ন তথ্যকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয়া হলেও মিলেছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঞ্চল্যকর তথ্য। র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পুরনো প্রশ্নপত্র এবং সাজেশন মিলিয়ে ‘ ভুয়া প্রশ্নপত্র’ বানানোর কথা বললেও প্রকৃত প্রশ্নপত্রের সাথে মিল পাওয়া গেছে ফাঁস হওয়া ফটোকপির।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হওয়া গনিত পরীক্ষার অন্তত পনের ঘন্টা আগে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় মিলেছে প্রশ্নপত্রের হাতে লেখা কপি। ভুয়া বলে উড়িয়ে দেয়া হলেও এসব কপির সাথেই মিলে গেছে মুল প্রশ্নপত্রের। গণিত পরিক্ষার বহুনির্বাচনী প্রশ্নের শুধুমাত্র প্রথম পাতার ১২ টি প্রশ্নের মধ্যে ১০ টির’ই মিল রয়েছে পরীক্ষার আগের দিন ফাঁস হওয়া হাতে লেখা কাগজের সাথে। ফটোকপির দোকানে একই সঙ্গে মিলেছে উত্তরও। পরীক্ষা শুরুর প্রায় ১২ ঘন্টা আগে ৬ টি হাতে লেখা কাগজে সৃজনশীল ও ১০ টি কাগজে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন ফাঁস করে একটি দুর্বৃত্ত চক্র। যা মুহুর্তেই ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপে ছড়িয়ে গিয়েছিলো।
এরই মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে প্রতারণা করে অর্থ আদায়ের অভিযোগে তিন যুবককে আটক করেছে র্যাব। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষার জাল প্রশ্নপত্র ফাঁস করে টাকা হাতিয়ে নিতো তারা।আটককৃতরা হলেন- কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার বড়খোপ এলাকার মোখলেছুর রহমানের ছেলে আহমেদ রেজা খান রিজভী (২০), চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছাবের আহমেদের ছেলে মো. রিফাত (২৩) ও আনোয়ারা উপজেলার পূর্ব কর্নারা এলাকার আবুল কালামের ছেলে মো. আরমান (২২)। রিজভী নগরের পাঁচলাইশ থানার বিবিরহাট এলাকার একটি মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং রিফাত ও আরমান পটিয়া উপজেলার একটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।
র্যাব জানায়, আটক ওই তিনজন Facebook, Whatsapp, Messenger ইত্যাদি ব্যবহার করে এসএসসি পরীক্ষার জাল প্রশ্নপত্র ফাঁস করে টাকা হাতিয়ে নিতো। এজন্য SSC CTG 2023 Prince (https://m.me/j/AbavZtJktebZeShX/) পেজ খুলে তারা নমুনার নামে জাল প্রশ্ন সেখানে দিতো। তাদের কাছে আরও প্রশ্ন আছে পোস্ট দিয়ে মেসেঞ্জারে এবং হোয়াটসএপে যোগাযোগ করতে বলত। লোভে পড়ে শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকরা যোগাযোগ করলে বিকাশ করতে বলত। তারা মোবাইলের মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আদান-প্রদান করছে বলেও মিথ্যা তথ্য-উপাত্ত দেখিয়ে ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করত। এভাবে তারা অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মাহবুব আলম মাহবুব বলেন, পুরনো প্রশ্নপত্র এবং সাজেশন মিলিয়ে তারা নিজেরাই ভুয়া প্রশ্নপত্র বানিয়ে সরবরাহ করে টাকা আদায় করেছে। প্রশ্নপত্র ভুয়া হলেও অন্তত ৩০ শতাংশ কমন এসেছে। এতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ছড়িয়েছে। অন্তত চারটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে তারা এই প্রতারণা করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
তাদের বিরুদ্ধে নগরীর বাকলিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা।
চট্টগ্রামে এসএসসির ‘ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি’র দায়ে তিনজনকে র্যাব গ্রেফতার করলেও শিক্ষার্থীদের দেয়া তথ্যমতে ভুয়া প্রশ্নপত্র নয়; বরং ফাঁস হয়েছে আসল প্রশ্ন পত্রই। পরীক্ষায় ফাঁস হওয়া কাগজ গুলোর সঙ্গে কর্ণফূলী ১ নং সেট প্রশ্নপত্রের ২, ৩ ও ৮ নম্বর প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়। এছাড়া বহুনির্বাচনী প্রশ্ন পত্রের প্রায় সবটাই মিলে যায় আগের দিনের হাতে লেখা কাগজগুলোর সঙ্গে।চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের প্রতি ফাঁস হওয়া প্রশ্নে অনুষ্ঠিত গণিত পরীক্ষা নিয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত পুনঃ বিবেচনার দাবি করেছেন অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সোমবার রাত ১০টার দিকে আমার এক স্টুডেন্ট মেসেঞ্জারে একটি প্রশ্নপত্র দিয়ে সমাধান করে দিতে অনুরোধ করে। পরে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত গণিত পরীক্ষা হওয়ার পর ছড়িয়ে পড়া প্রশ্নপত্রের ছয়টি প্রশ্নের মধ্যে তিনটি প্রশ্নের হুবহু মিল পেয়েছি।’ চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পেয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘আমরা এমন কিছু শুনিনি। কেউ আমাদের কিছু বলেনি। প্রশ্নফাঁস হলে পুরো মিলতে হয়, দুইটা-তিনটা মিললে হবে না।’
এইবাংলা / হিমেল