::: অপু ইব্রাহিম :::
চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী এলাকায় কিশোর গ্যাং গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডার মামলার মূল পরিকল্পনাকারী ফয়সাল’কে আটক করেছে র্যাব-৭। বৃহস্পতিবার (১১ই মে) ভোররাতে হালিশহরের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ছদ্মবেশে থাকা ফয়সালকে আটক করে র্যাব-৭।
গেল সোমবার সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। হত্যার ঘটনায় যারা অংশ নিয়েছেন তাদের সবার বয়স ১৬ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে এবং সবাই কিশোর। স্থানীয়রা জানান , পাহাড়তলীর কথিত বড় ভাই ইলিয়াছ মিঠুর অনুসারী এসব কিশোর ও তরুণরা চলাফেরা করত বন্ধুর মত। ইলিয়াছকে সবাই বড় ভাই বলে সম্বোধন করত। সিরাজুল ইসলাম শিহাব ও বন্ধু রবিউলের মধ্যে সামান্য ব্যাপার নিয়ে কথা কাটাকাটি ও হালকা মারামারি হয়। ওই ঘটনার মীমাংসা করার কথা বলে দু’পক্ষকে ডেকে রাত আটটায় বৈঠকে বসে ‘বড় ভাই’ ইলিয়াছ। ওই বৈঠকে ইলিয়াছের সামনেই বেদড়ক পিটুনি ও ছুরিকাঘাত করে মাসুম ও সজীব নামে দুই যুবককে খুন করে ফয়সাল ও রবিউল বাহিনী।
জানা যায় সোমবার (৮ মে সন্ধ্যা) ৭ টায় চট্টগ্রামের সাগরিকা জহুর আহমদ স্টেডিয়াম এলাকায় নিহত ভিকটিম মাসুমের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম শিহাব তার বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে যায়। ওই সময় শিহাবকে উদ্দেশ্য করে ফয়সাল ও রবিউল বলে, ‘ওই মেয়ের সঙ্গে তোকে মানায়নি’ এবং মেয়েটিকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করা শুরু করে।
বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে সামান্য মারামারিও হয়। ঐসময় ফয়সাল ও রবিউলরা আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং বিষয়টি ইলিয়াছ মিঠুকে জানায়। ঐদিন রাত আটটার দিকে সিরাজুল ইসলাম শিহাবকে ফোন করে ইলিয়াস বলে, বিষয়টি মীমংসা করতে হবে এজন্য তার অফিসে যেতে বলে। ইলিয়াসের কথামত সরল বিশ্বাস নিয়ে এ সময় শিহাবের সাথে বন্ধু মাসুম, সজীব, ফাহিম, রোকন, রজিন, তুহীন, মেহেদী হাসান, ইউসুফ ও প্রান্তসহ ইলিয়াসের অফিসে যায়। সেখানে আগে থেকেই ইলিয়াসের নির্দেশে ও ফয়সালের পূর্বপরিকল্পনায় রবিউলসহ প্রায় ২০/২৫ জন উঠতি বয়সী কিশোর ছেলে দেশীয় ধাড়ালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওঁৎ পেতে থাকে; যা শিহাব ও তার সাথে থাকা বন্ধুরা জানতো না। সেখানে আসার পর উভয় পক্ষ কথা কাটাকটি এবং কথার একপর্যায়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সে সময় বড় ভাই ইলিয়াছ মিঠু, ফয়সাল এবং রবিউলকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘শালাদের মার’।
ইলিয়াসের নির্দেশে এবং ফয়সালের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রবিউল ও তার অনুসারীরা কাঠের টুকরো দিয়ে মাসুমদের বেদড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে মাসুম ও সজীবকে একাধিক ছুরিকাঘাত করে ফয়সাল, রনি ব্রো, বাবু এবং আকাশ। আহত মাসুম ও সজীবের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ইলিয়াস, ফয়সাল এবং রবিউলসহ অন্যান্যরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন মাসুম ও সজীবকে রক্তাক্ত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।
আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর জোড়ার খুনের ঘটনায় নিহত ভিকটিম সজীবের বড় ভাই বাদী হয়ে পরদিন চট্টগ্রাম মহনগগরীর পাহাড়তলী থানায় ১৮ জন নামীয় এবং ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দয়ের করেন।
মামলা হওয়ার পর পরই চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ বিশেষ অভিযানে ইলিয়াস, রবিউলসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। কিন্তু বাকী আসামীরা পলাতক থাকে। পুলিশ কর্তৃক আটককৃত ৮ জনের মধ্যে ৪ জনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। সবার জবানবন্দীতে উক্ত হত্যার ঘটনায় ফয়সালের পূর্বপরিকল্পনার কথা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
র্যাবের সহকারী পরিচালক (গণসংযোগ) নুরুল আবচার জানান, এই আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর জোড়ার খুনের ঘটনায় জড়িত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অব্যাহত রাখে। একটি বিশেষ সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, উক্ত নৃশংস হত্যা কান্ডের চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডার মামলার মূল পরিকল্পনাকারী ফয়সাল চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর এলাকার একটি বাসা বাড়িতে ছদ্মবেশে অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যে ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি বিশেষ আভিযানিক দল অদ্য বৃহস্পতিবার (১১ মে ) আনুমানিক ভোর চারটার দিকে উল্লেখিত জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ ফয়সালকে গ্রেফতার করে। সে নোয়াখালীর কবিরহাটের মো: নূর নবীর ছেলে। পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সামনে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল উল্লেখিত চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডার মামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলো বলে অকপটে স্বীকার করে।গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’
গত সোমবার (৮ মে) সন্ধ্যায় নারী সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারির এক পর্যায়ে পায়ে ছুরিকাঘাত করা হলে গুরুতর আহত হন মাসুম (৩০) ও সবুজ (২০) নামে দুই যুবক।পরে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তারা মারা যান।
এইবাংলা / তুহিন