::: নিজস্ব প্রতিবেদক :::
ফটিকছড়িতে অধ্যক্ষের মৃত্যুতে ৮ মে ফটিকছড়ি উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে পূর্নদিবস কর্মবিরতি ও উপজেলা সদরে বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি(বিটিএ)। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে মানসিক নিপিড়নকারী কলেজের গভর্নিং বডি বাতিল ও সভাপতিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আজীবন নিষিদ্ধের দাবী জানিয়েছে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিমুল মহাজন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে ফটিকছড়ির শাহনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের উপর গভর্নিং বডি সভাপতির অশালীন আচরণ এবং মানসিক নির্যাতনে মৃত্যুর প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুসছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের শিক্ষক সমাজ। শতবর্ষীয় শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) কেন্দ্রীয় কমিটি সহ চট্টগ্রাম অঞ্চল জেলা ও উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ উক্ত কলেজের গভর্নিং বডি বাতিল সহ সভাপতিকে প্রতিষ্ঠান থেকে আজীবন নিষিদ্ধের দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম এর চেয়ারম্যান সহ শিক্ষা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পাশাপাশি অধ্যক্ষ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করে মামলা গ্রহণসহ দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ বজলুর রহমান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি সৈয়দ লকিতুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অঞ্চল চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি রনজিৎ কুমার নাথ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকের হোসেন, ফটিকছড়ি (দক্ষিণ) উপজেলার সভাপতি মোঃ ইউসুফ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আজগর, ফটিকছড়ি (উত্তর ) সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম এক যুক্ত বিবৃতিতে এ দাবী জানিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ বৃহস্পতিবার (৪ মে) দুপুরে নগরীর ৪০০ আন্দরকিল্লাস্থ শিক্ষক ভবনে সংগঠনের নীতি নির্ধারণে বৈঠকে এ কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৬ মে সাংগঠনিক সভা ও উত্তর জেলার আওতাধীন সংসদীয় এলাকার সংসদ সদস্যর সাথে মতবিনিময় ৮ই মে (সোমবার) ফটিকছড়ি উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে পুর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং সকাল ১০ টায় উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ও শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের নিকট স্মারকলিপি পেশ এর কর্মসূচি রয়েছে।
প্রসঙ্গত অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর বিভিন্ন উৎস থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কল রেকর্ড ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, একজন প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে সভাপতি এবং সভাপতির আস্থাভাজন বৈধ/অবৈধ ব্যক্তিবর্গ যে সমস্ত আচরণ করেছেন তা নিতান্তই অমানবিক এবং বিধিবহির্ভূত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অডিও কল রেকর্ডে সভাপতি, কথা দিয়ে অধ্যক্ষের প্যান্ট খুলে নেয়ার হুমকি দিতে শুনা যায়। আরেকটা অডিও কল রেকর্ডে প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত নন এমন এক ব্যক্তি ওনাকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকিসহ অহেতুক বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে দেখা যায়।
ঐ ব্যক্তি ২৭ এপ্রিল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে শতশত শিক্ষার্থীর সামনে অধ্যক্ষ মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ধরনের মানহানিকর কথা-বার্তা বলতেও শুনা যায় ।
সামগ্রিক বিষয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, শাহনগর স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের স্বাধীনতা ছিল না। কারণে-অকারণে তিনি সভাপতি ও সভাপতির আশে-পাশের বিভিন্ন বৈধ-অবৈধ বক্তি দ্বারা সারাক্ষণ চাপের মধ্যে ছিলেন। আমরা মনে করি, অধ্যক্ষ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম নানাবিধ অমানবিক মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করেন এবং অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন। ২৮ এপ্রিল নগরীর একটি ক্লিনিকে তিনি মারা যান। এহেন অমানবিক ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। আমরা এহেন অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এইবাংলা/ হিমেল