Become a member

Get the best offers and updates relating to Liberty Case News.

― Advertisement ―

spot_img

অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায়

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে। দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google...
Homeআন্তর্জাতিক৪০ পেরোলেই মৃত্যুর ছায়া! অজানা রোগের আতঙ্কে বিহারের দুধ পানিয়া গ্রাম

৪০ পেরোলেই মৃত্যুর ছায়া! অজানা রোগের আতঙ্কে বিহারের দুধ পানিয়া গ্রাম

ভারতের বিহার রাজ্যের মুঙ্গের জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম দুধ পানিয়া— আজ মৃত্যুভয়ে কাঁপছে পুরো এলাকা।

এই ছোট আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, এখানে বয়স ৪০ পেরোলেই শুরু হয় এক ভয়ঙ্কর রোগ। ধীরে ধীরে শরীর পঙ্গু হয়ে যায়, আর শেষমেশ মৃত্যু অবধারিত হয়ে ওঠে।

 

পাহাড়ি সবুজের মাঝে লুকিয়ে মৃত্যু-গ্রাম

প্রায় ২৫০ জন বাসিন্দার এই দুধ পানিয়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কাঠ ও পাতা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জঙ্গলঘেরা এই এলাকার মানুষদের জীবনে বরাবরই অনটন ছিল, কিন্তু গত ১৫ বছর ধরে তারা এক অজানা রোগের অভিশাপে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

গ্রামের প্রবীণদের মতে, ৪০ বা ৫০ ছুঁতেই মানুষজন ধীরে ধীরে হাঁটার শক্তি হারাচ্ছেন, পা অসাড় হয়ে যাচ্ছে, তারপর শরীরের অন্য অংশও কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। প্রথমে হাড় ও গাঁটে ব্যথা শুরু হয়, পরে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো শরীরে। অবশেষে রোগীরা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান।

“পা নড়াতে পারি না”—গ্রামবাসীর করুণ আর্তনাদ

গ্রামের বাসিন্দা বিনোদ বেসরা (৫৬) জানান, “২০১৯ সাল থেকে আমি একদম হাঁটতে পারি না। চিকিৎসা করিয়েছি পটনা-সহ বহু জায়গায়, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। একসময় শুধু সামান্য চোট লেগেছিল, সেরে গিয়েছিল, কিন্তু কিছুদিন পর পা ও পিঠ একদম অকেজো হয়ে গেল।”

শুধু বিনোদ নন, তাঁর মতো আরও অনেকেই একই যন্ত্রণায় দিন গুনছেন। কারও পিঠ বেঁকে গেছে, কেউ বসতেও পারছেন না। বর্তমানে অন্তত ছয়জন গ্রামবাসী মৃত্যুর অপেক্ষায় রয়েছেন— বিনোদ বেসরা, কমলেশ্বরী মুর্মু, ছোটা দুর্গা, বড়া দুর্গা, রেখা ও সূর্য নারায়ণ মুর্মু।

রহস্যময় রোগের কারণ কি দূষিত জল?

গ্রামবাসীদের ধারণা, এই ভয়ংকর রোগের সূত্রপাত সরকারি নলবাহিত পানির সরবরাহের পর থেকেই। তাঁদের দাবি, সেই পানিই দূষিত এবং মারাত্মক রোগের মূল কারণ। প্রশাসনের কাছে বহুবার অভিযোগ জানানো হলেও দীর্ঘদিন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তবে সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ পেলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। বিহার রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ জানিয়েছে, দ্রুত গ্রামে জল পরীক্ষার দল পাঠানো হবে।

চিকিৎসক দল নামছে মাঠে

স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসক সুবোধ কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম ইতিমধ্যেই গ্রামটি পরিদর্শন করেছে। তিনি জানিয়েছেন—

“দুধ পানিয়া গ্রামে চিকিৎসকদের একটি প্যানেল স্থায়ীভাবে বসানো হবে। এই সমস্যা সম্ভবত খনিজ পদার্থের অভাব ও দুর্বল খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।”

এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, চিকিৎসা এবং পানির মান যাচাইয়ের সবরকম উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

মৃত্যুতে মৃত্যু যোগ হচ্ছে

এখনও পর্যন্ত এই রহস্যজনক রোগে মারা গেছেন ফুলমনি দেবী, রমেশ মুর্মু, মালতি দেবী, সালমা দেবী, রাঙালাল মারান্ডি এবং নান্দু মুর্মু। এঁদের বয়স ছিল ৩০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। গ্রামবাসীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন— “আজ আমার পাশের ঘরে মৃত্যু, কাল হয়তো আমার পালা!”

প্রশাসনের প্রতি দাবি

দুধ পানিয়া গ্রামের মানুষদের একটাই দাবি— “যত দ্রুত সম্ভব পানির উৎস পরীক্ষা করে চিকিৎসা ব্যবস্থা জোরদার করা হোক। নইলে গোটা গ্রামই হয়তো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে।”

এই ঘটনার তদন্তে এখন পুরো বিহার রাজ্যই কৌতূহলী ও উদ্বিগ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি অবহেলা করা হলে এটি হতে পারে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ গ্রামীণ স্বাস্থ্য সংকটের একটি।

এই বাংলা/এমএস

টপিক