বরিশাল প্রতিনিধি :
বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে অনিয়ম, টেন্ডার কারচুপি ও কমিশন বাণিজ্য যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলন, ঠিকাদার সিন্ডিকেটের প্রভাব এবং প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় দপ্তরটি এখন দুর্নীতির আতুরঘরে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে জেলার শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ব্যাহত হচ্ছে।
কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ:
সূত্র জানায়, নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম যোগসাজশের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প নিজেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কমিশনের বিনিময়ে তা বিক্রি করেন। বাবুগঞ্জ ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় কারিগরি স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) স্থাপন প্রকল্পের কাজ ‘বসুন্ধরা হাউজিং (প্রা.) লিমিটেড’-এর নামে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পরে ৭ শতাংশ কমিশনে বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি কমিশনের টাকাকে কেন্দ্র করে ঘটে নাটকীয় এক ঘটনা—এক ঠিকাদারের কাছ থেকে নেয়া ২৫ লাখ টাকার অগ্রিম কমিশন নিয়ে দপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর রাশেদ উধাও হয়ে যান। টাকা উদ্ধারের চেষ্টা ব্যর্থ হলে নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেই বিপাকে পড়েন বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
ঠিকাদার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য:
দপ্তরের ভেতরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ৭-৮ জন ঠিকাদারের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট নির্বাহী প্রকৌশলীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় বড় বড় প্রকল্প পাচ্ছে। এসব প্রকল্পের অনুমোদন, বিল ও জামানত ছাড়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিতে হয়। ফলে সাধারণ ঠিকাদাররা প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন; কেউ কেউ বাধ্য হয়ে মোটা অঙ্কে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে কাজ কিনে নিচ্ছেন।
প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়া:
অভিযোগ রয়েছে, শহিদুল ইসলাম ঢাকাস্থ প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আলতাফ হোসেনকে নিয়মিত ‘উপহার’ পাঠিয়ে তিনি এই প্রভাব বিস্তার করেছেন বলেও জানা যায়। তার ঘনিষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের সঙ্গে মিলে দপ্তরে ‘অনিয়মের রামরাজত্ব’ কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ সহকর্মীদের।
অভিযোগ অস্বীকার ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া:
নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এসব ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তারেক আনোয়ার জাহেদী বলেন, “দুর্নীতি বা অনিয়ম কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে স্থানীয়রা জানান, অভিযোগের এক সপ্তাহ পার হলেও তদন্তের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এই অনিয়ম সরকারি অবকাঠামো খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, দ্রুত কার্যকর তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা নিলেই দপ্তরটি দুর্নীতিমুক্ত হতে পারে।
এই বাংলা/এমএস
টপিক
