ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :
একসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের ছিল ব্যাপক প্রচলন ও জনপ্রিয়তা। তবে আধুনিক শিল্পের ছোঁয়ায় সেই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। বাংলার প্রাচীন এই কারুশিল্প ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির খাতায়।
দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
নাসিরনগরের শ্রীঘর, বুড়িশ্বর, ভোলাউক, সিংহগ্রাম, আলাকপুর, ফান্দাউক ও হরিপুর—ছিল মৃৎশিল্পের প্রাণকেন্দ্র। এসব গ্রামের মৃৎশিল্পীরা সুনিপুণ হাতে তৈরি করতেন হাঁড়ি, পাতিল, কলস, ফুলদানি, খেলনা, মাটির ঘটসহ নানা ধরনের তৈজসপত্র। একসময় এসব পণ্যের চাহিদা ছিল সারাবছর, বিশেষ করে ঈদ, পূজা বা বিয়ের মৌসুমে।
কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে মাটির তৈরি সামগ্রীর জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, মেলামাইন, অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের তৈজসপত্র। ফলে মৃৎশিল্পের কদর কমে যাওয়ায় এখন এসব কারিগররা প্রায় বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
স্থানীয় মৃৎশিল্পী রামচন্দ্র পাল বলেন, “একসময় মাটির হাঁড়ি-পাতিল বানিয়ে সংসার চলত। এখন সেই দিন আর নেই। মালামালের দাম বেড়েছে, কিন্তু ক্রেতা নেই।”
আরেক কারিগর কমল দাস জানান, আগে এক মন মাটি মিলত ৫০ টাকায়, এখন সেই মাটি পেতে লাগে ২০০ টাকা। জ্বালানির দামও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ফলে খরচ মিটিয়ে কোনো লাভ থাকছে না।
স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মীরা বলছেন, সরকার বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে যদি মৃৎশিল্পীদের প্রশিক্ষণ, সহজ ঋণ ও বিপণন সুবিধা দেওয়া হয়, তবে এই ঐতিহ্য আবারও টিকে থাকতে পারে।
নাসিরনগরের মৃৎশিল্প একসময় ছিল গ্রামের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু এখন তা কেবল ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিচ্ছে। তবু স্থানীয়দের আশা—একদিন হয়তো আবারও ঘরে ঘরে উঠবে মাটির হাঁড়ি-পাতিলের ধ্বনি, ফিরবে নাসিরনগরের হারানো ঐতিহ্য।
এই বাংলা/এমএস
টপিক
