নাদিরা শিমু, চট্টগ্রাম :::
চট্টগ্রামের ১৬ টি আসনের মধ্যে দুইটি আসনে নৌকার ভরাডুবি হলেও বাকি আসনগুলো ধরে রেখেছে দলের প্রার্থীরা। বাঁশখালী এবং সাতকানিয়া -লোহাগড়া আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হলেও ‘ দুই আসনে দুই শিল্পপতির ‘ টাকা’ নৌকা ডুবাতে মুল ভূমিকা রেখেছে।
এবারের নির্বাচনে সাতকানিয়া লোহাগাড়া থেকে নির্বাচন করেছেন এমএ মোতালেব সিআইপি। শিল্প প্রতিষ্ঠান বনফুল এর কর্ণধার তিনি। অন্যদিকে, বাঁশখালী থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন মুজিবুর রহমান সিআইপি। মুজিবুর রহমান সিআইপি স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মোতালেব ও মুজিব – দুইজনকেই দলে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখেন তৃণমূল। এই দুই প্রার্থীর নির্বাচনী বাজেট ছিলো শত কোটি টাকা। এ কারণে বাঁশখালী এবং সাতকানিয়া -লোহাগাড়া ; দুই আসনে চোখ ছিলো পুলিশ প্রশাসনসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের।
সুত্রমতে, এমএ মোতালেব সিআইপি ও মুজিবুর রহমান সিআইপি গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের নির্বাচনে নিজের অনুকূলে আনতে খরচ করেছেন কোটি টাকার উপরে। এরমধ্যে মুজিবুর রহমান সিআইপি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার মালিক৷ আর এমএ মোতালেবের মালিকানাধীন ‘বনফুল’ ‘কিশোয়াণ’ বিভিন্ন পত্রিকা -টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনদাতা। ফল গণমাধ্যম এই দুই আসনের নৌকার প্রার্থীদের চোখে চোখে রেখেছেন । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
সুত্রমতে, চট্টগ্রামের এ দুই ধনাঢ্য প্রার্থীর টাকা পৌঁছেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে, ঢাকার বিভিন্ন আসনের প্রার্থীদের কাছে এমনকি নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরে। সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন সবখানেই পরিচিত ছিলেন দুই সিআইপি।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনে (সাতকানিয়া- লোহাগাড়া) গত তিনবারের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী নৌকা প্রতীক নিয়েও এবার বিজয়ী হতে পারেননি। এই আসনে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মোতালেব সিআইপি ৮৫ হাজার ৬২৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন নদভী, তার প্রাপ্ত ভোট মাত্র ৩৯ হাজার ২৫২।
অন্যদিকে,বাঁশখালী আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান সিআইপি। তিনি এই আসন থেকে ৫৭ হাজার ৪৯৯ হাজার পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের মনোনয়ন বাতিলের কারণে মুজিবুর রহমান সিআইপির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ কবির লিটন (ট্রাক) পেয়েছেন ৩২ হাজার ২২০ ভোট।এ ছাড়া বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের মোহাম্মদ মহিউল আলম চৌধুরী (মোমবাতি) ১ হাজার ১২৫, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী আব্দুল মালেক পেয়েছেন ৫০৩ ভোট। মোট কেন্দ্র সংখ্যা ১১৪টি। এ আসনে ৩৬ হাজার ৯৬৮ ভোট বাতিল করা হয়।
উত্তর সরল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঈগলের সমর্থকদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। অভিযোগ, ওই কেন্দ্র ওঁত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের উপর হামলা চালালে পুলিশ তাকে উদ্ধার না করে কেন্দ্র গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। ফলে ভোটের দিন তিন টা থেকে বিকেলে সোয়া চারটা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় তাকে।
জানা যায়, সরল কেন্দ্রে ব্যালেট ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রতিবাদ করার কারণে মোস্তাফিজুর রহমানের উপর হামলা চালানো হয়। তার ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এসময় বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হলেও পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পরে ভোট শেষ হবার পর পুলিশ বিজিবির সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ওই কেন্দ্র থেকে। অবরুদ্ধ মোস্তাফিজুর রহমানের মনোনয়ন বাতিলের ঘোষণা আসে ভোট শেষ হবার পনের মিনিট আগে। পুলিশকে হুমকি দেবার কারণে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজের মনোনয়ন বাতিলের কথা বলা হলেও ; স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিপুল অর্থ বৈভব প্রাসঙ্গিক হয়েছে এই আসনের নির্বাচনের জয় পরাজয়ে।
নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মতে, পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদের প্রত্যাহার চেয়ে ৮ ই ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বরাবর অভিযোগ করেছিলেন নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। পূর্ববর্তী থানা সীতাকুণ্ডে ১৯৬ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির যৌক্তিক কারণ থাকলেও বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদকে প্রত্যাহার করা হয় নি। নেতাকর্মীদের ভাষ্য, ভোটের মাঠে পুলিশ নিরপেক্ষতার বদলে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাজ করার কারণে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।