পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
মন্ত্রী পরিষদের সাবেক সচিব ও আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার বলেছেন, স্বাধীনতার ৫২ বছরে একটি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশে এরই মধ্যে জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা, মোবাইল মানি ট্রান্সফার, বিমানের টিকিট, ই-টেন্ডারিংসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আমাদের গন্তব্য স্মার্ট বাংলাদেশ। ‘স্মার্ট বাংলাদেশথ বলতে স্মার্ট নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলা হবে। যেখানে বাংলাদেশ একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণাটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত। তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে এই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ গত এক দশকে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তর করতে এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে আমাদের একটি ডিজিটাল রূপান্তর ঘটাতে হবে। এখন প্রয়োজন একটি স্মার্ট বাংলাদেশ, যেখানে সরকারি পরিষেবাগুলোর উদ্ভাবনী প্রযুক্তি সমাধানের মাধ্যমে নাগরিকদের কাছে সহজলভ্য এবং টেকসই সমৃদ্ধির পরবর্তী পর্যায় আনলক করার চাবিকাঠি রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে স্মার্ট হওয়ার জন্য, একটি স্মার্ট সরকার প্রতিষ্ঠাই প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত। একটি স্মার্ট সরকারের লক্ষ্য হলো নিরবচ্ছিন্ন আন্তঃএজেন্সি সমন্বয় অর্জন করা এবং পরিষেবা ও প্রক্রিয়াগুলোর ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে নাগরিকদের ওয়ান-স্টপ সমাধান প্রদান করা। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা-বিভাগের মধ্যে যোগাযোগ কম। লালফিতা কাটা এবং দক্ষতা উন্নত করতে, প্রাসঙ্গিক মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে রিয়েল-টাইম ডেটা এবং তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। একটি কেন্দ্রীভূত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে সমস্ত সংস্থা ন্যূনতম ব্যাঘাতসহ উন্নয়ন কাজ শুরু এবং সম্পূর্ণ করতে টেরিটরি ম্যাপ এবং পরিকল্পনা দেখতে পারে। বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে ই-গভর্নমেন্ট মাস্টারপ্ল্যানের মতো উদ্যোগ নিয়ে স্মার্ট হওয়ার অগ্রযাত্রায় শামিল হতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। আড়াই হাজারেরও বেশি সরকারি পরিষেবা এখন অনলাইনে উপলব্ধ রয়েছে। যেমন, কর প্রদান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ভূমি পরিষেবা ইত্যাদি। যাই হোক, একটি স্মার্ট রাষ্ট্রের লক্ষ্যগুলো সম্পূর্ণরূপে অর্জন করতে, আরও ডিজিটাল সংস্কার এবং মানসিকতার পরিবর্তন অপরিহার্য। সরকারি সংস্থাগুলোকে পৃথক ডিজিটালাইজেশন ড্রাইভগুলোকে একটি ইউনিফাইড সিস্টেমে সম্পূর্ণরূপে একত্রিত এবং রিয়েল-টাইমে পূর্ণাঙ্গ তথ্যসহ প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ তার ডিজিটাল যাত্রায় দ্রুত অগ্রসর হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপমতে, বাংলাদেশে এখন অর্ধেকের বেশি পরিবারে অন্তত একটি করে স্মার্টফোন আছে। ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট ব্যবহার, প্রাণবন্ত প্রযুক্তি খাত, ব্যাপকহারে স্মার্টফোন ব্যবহার আমরা এরই মধ্যে একটি সত্যিকারের ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত হয়েছি। আমাদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে এবং উন্নত অর্থনীতিতে প্রবেশ করতে এখন স্মার্ট বাংলাদেশ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রযুক্তিকে আরও কৌশলগতভাবে এবং সামগ্রিকভাবে ব্যবহার করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। স্মার্ট গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা করে, সংযোগের ফলকে গণতন্ত্রীকরণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের উদ্ভাবন প্রকাশ করে ২০৪১ সালের আগে আমাদের কাছে শুধু ডিজিটাল নয়, সত্যিকারের স্মার্ট হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি সবার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল ভবিষ্যতের দিকে সংস্কার, ভাবনা এবং অংশীদারিত্বকে প্রজ্বলিত করার একটি দৃষ্টিভঙ্গি হোক।
আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ আ্যন্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সহায়তায় চট্টগ্রামের পটিয়ায় ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে চট্টগ্রামের পটিয়ার দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন করা নিয়ে কবির বিন আনোয়ার বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটিয়ার মানুষের মনে কথা বুঝতে পেরে এবার তিনি প্রার্থী পরিবর্তন করেছেন। এবার আপনাদের দায়িত্ব মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে বিজয়ী করার। এবার পরিক্ষা দেয়ার পালা। এখন আপনাদেরকেই প্রমান করতে হবে নৌকা বিজয়ী হবে নাকি দূর্বৃত্তায়ন বিজয়ী হবে। নৌকা বিজয়ী হবে নাকি ইয়াবা ব্যাবসায়ী বিজয়ী হবে। নৌকা বিজয়ী হবে নাকি সন্ত্রাস মাদক বিজয়ী হবে। এজন্য দলের সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। যারা নৌকা প্রতিকে স্হানীয় সরকার নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে তাদেরকেও নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। সবাইকে সাথে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে আগামী ৭ জানুয়ারী নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে।
নৌকা প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সম্পর্কে কবির বিন আনোয়ার বলেন, তার রয়েছে রাজনৈতিক ঐতিহ্য, তার রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশ, তার মাথার উপর রয়েছে পৃথিবীর সফল রাষ্ট্র নায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত। তার তো হারানোর কোন ভয় নেই। তাহলে আমরা পরাজিত হবো কেন? সন্ত্রাস? আওয়ামী লীগ কখনো সন্ত্রাসের কাছে মথানত করে না। আমরা ছাত্র জীবনে স্লোগান দিয়েছিলাম ৭১ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। এবার পটিয়ায় প্রয়োজনে ৭১ এর হাতিয়ার আরেক বার গর্জে উঠবে। এবার সময় এসেছে পটিয়া থেকে সন্ত্রাস অত্যাচারী দুবৃর্ত্ত, মাটি বালু খেকো ইয়াবা ব্যাবসায়ীদের সমূলে পটিয়া থেকে বিতাড়িত করার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস পটিয়ার মানুষ তা করে দেখাতে পারবে। পটিয়ার দিকে আমাদের তীক্ষ্ণ নজর থাকবে। এবার পটিয়ায় আমাদের আর্দশিক বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। এবার সময় এসেছে গত ১৫ বছরের পটিয়ার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, অন্যান অত্যাচারের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সময়োচিত জবাব দিয়ে পটিয়ার মানুষকে মুক্তি দেয়ার।
বিএনপি জামায়াত সম্পর্কে করিব বিন আনোয়ার বলেন, আজকে সমগ্র জাতি একটা যুগসন্ধিক্ষণে। একদিকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বিএনপি জামায়াত জোট তারা নির্বাচনে আসে না। নির্বাচনে অংশ নেন না তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে। বিএনপি কোন রাজনৈতিক দলের মধ্যে পড়ে না। কারন তাদের কোন নেতৃত্ব নেই। যিনি নেতৃত্ব দিবেন তিনি জেল হাজতে। যারা নিজের পিতার নামে এতিমখানার টাকা মেরে খাই এরকম নেতৃত্ব। বিদেশে বসে দেশের ক্ষতি করার জন্য টাকা দিয়ে ক্রমাগত চক্রান্ত করে যাচ্ছে। তাদের না আছে গঠনতন্ত্র, না আছে আব্যন্তরিন গনতন্ত্র। তাদের কোন লক্ষ্য নেই, আসলেই বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল না। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, বঙ্গবন্ধু বিরোধী, অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী লোকের একটা প্লাটফর্ম।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে পটিয়া কমিউনিটি সেন্টারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোট প্রার্থনা কর্মী (ক্যাম্পেইনার) প্রশিক্ষন ও কর্মী সভা পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক আজিজুল হক মানিকের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাশ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, মেয়র আইয়ুব বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী মাহবুবুর রহমান, মেজর রবিউল ইসলাম, ট্রেইনার অধ্যাপক কামরুল হাসান, টিটু চাকমা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন ফরিদ, মোহাম্মদ ছৈয়দ চেয়ারম্যান, অভিজিৎ বড়ুয়া মানু, বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, মর্তুজা কামাল মুন্সি, ডি এম জমির উদ্দিন প্রমুখ।