নাদিরা শিমু, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের দুটি আসনে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেবার কারণে ঝুলে পড়েছে সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম ও চান্দগাঁও বোয়ালখালী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদের৷ রবিবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩২ টি আসন ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে দলের আসন সমঝোতার ‘বলি’ হলেন চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ। রাজনৈতিক সমঝোতায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, এবারও কপাল মন্দ উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামের। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে নৌকার মাঝি হলেও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের হাতে বৈঠা ছাড়তে হচ্ছে তাকে।
রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বরাবরে পাঠানো এক চিঠিতে চট্টগ্রামের দুটিসহ মোট ২৫টি আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে অনুরোধ জানান দলীয় ও মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া নির্বাচন কমিশনে এ চিঠি পৌঁছে দেন।
চট্টগ্রাম-৮ আসনের (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) সাবেক এমপি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিনের মৃত্যুতে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে সংসদে পৌঁছেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। এবারও এ আসনে মনোনয়ন দিয়ে নৌকার বহরে যুক্ত করা হয়েছিল তাঁকে। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে যাচাই-বাছাইয়েও টিকে যান। তবে সমঝোতার বলি হয়ে তাকে সরতে হচ্ছে নির্বাচন থেকে।
এই আসনে জাতীয় পার্টির হয়ে লড়বেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সোলায়মান আলম শেঠ। এর আগেও দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি ওই আসন থেকে জাপার প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে, খুব সহজেই ‘ভোটযুদ্ধে’ জয়ের স্বাদ জুটবে না এই প্রার্থীর কপালে। কারণ, এই আসনে এবার স্বতন্ত্র হিসেবে ‘ভোটযুদ্ধে’ নেমেছেন নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। তিনিও এই আসনের একজন হেভিওয়েট প্রার্থী।
এর আগে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে চট্টগ্রাম-৮ আসন শূন্য হয়। এরপর ওই আসনে উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির ঘরনার নোমান আল মাহমুদ। নির্বাচনে ৬৭ হাজার ২০৫ ভোট পেয়ে জয়ী হন এই প্রার্থী।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তবে এই আসনটি আওয়ামী লীগ এবারও ছেড়ে দিয়েছে জাতীয় পার্টিকে। আর এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ফলে মনোনয়ন পেয়েও ভোটের মাঠে যেতে পারছেন না এম এ সালাম। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী না থাকায় তিনবারের এমপি আনিসুল খুব সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পার করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন মহাজোট প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে হারিয়ে পুনরায় জয়লাভ করেন।
তবে এবার নৌকায় ঠাঁই হায়নি তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির। প্রতিবারের মতো এবারও শরীকদলের ভাগিদার হিসেবে নিজের ভাগে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন দাবি করেছিলেন তিনি। পরপর দুবার নৌকায় ঠাঁই হলেও এবার নৌকার পালে ভিড়ানো হয়নি তাকে। দফায় দফায় বৈঠক, এ দ্বার-ও দ্বার করেও মাথায় হাত পড়েছে নজিবুল বশর ভান্ডারির। ওই আসনে আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী করেছে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।