বিশেষ প্রতিনিধি :
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট থেকে আইসিটি বিভাগের পরিচালক হাজেরা খাতুনের নাম থেকে সম্মান সূচক ড. ডিগ্রি উধাও হয়েছে। কয়েক বছর নামের সাথে ইফার ওয়েবসাইটে ড. উপাধি প্রদর্শনের পর গত ২৩ অক্টোবর বৃহস্পতি বার থেকে হাজেরা খাতুনের নামের সাথে থাকা সম্মান সূচক ড. উপাধিটি বাদ দেয়া হয়। কার অনুমতি নিয়ে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে নিজ নামের সাথে সম্মান সূচক এই ড. উপাধি যুক্ত করে প্রদর্শন করলেন এবং কেন এ উপাধি ওয়েবসাইট থেকে মুছে ফেলা হল এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপার সৃষ্টি হয়েছে। তার নামের সাথে ড. শব্দ যুক্ত করা ও বাদ দেয়াকে হাজেরা খাতুনের পিএইচডি ডিগ্রি তেলেসমাতি বলেও অভিহিত করেছেন কেউ কেউ।
দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
জানা যায়, হাজেরা খাতুন ১৯৯৪ সালে ইসলামীক ফাইন্ডেশনে সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করেন। ২০১০ সালে উপ পরিচালক ও ২০১৭ সালে পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী আমেরিকান ইষ্ট কোষ্ট ইউনিভার্সিটি নামক একটি ভূয়া অনলাইন পোর্টাল থেকে সম্মান সূচক এ ডক্টরেটি ডিগ্রি কিনে ইসলামীক ফাউন্ডেশনের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই নিজের নামের সাথে ড. সম্মান সূচক এই ডিগ্রি যুক্ত করেন।
হাজেরা খাতুনের নামের সাথে সম্মান সূচক ড. শব্দটি দৈনিক এই বাংলার নজরে আসলে প্রথমে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ও কোন বিষয়ের উপর তিনি গবেষনা করে পিএইডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। আমেরিকান ইষ্ট কোষ্ট ইউনিভার্সিটি থেকে প্লানিং এন্ড অডিং বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন বলে তিনি জানান। এই ডিগ্রির বিষয়ে আর কোন প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে মোবাইল কল কেটে দেন।
হাজেরা খাতুনের দেয়া তথ্যমতে, ”আমেরিকান ইষ্ট কোষ্ট ইউনিভার্সিটি” সম্পর্কে অনুসন্ধানে আমেরিকায় এ নামের পাবলিক বা প্রাইভেট কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। এমন কি, আমেরিকার কোন ফ্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় এ নামে কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই।তবে অনলাইনে একটি প্রর্টাল রয়েছে ”আমেরিকান ইষ্ট কোষ্ট ইউনিভার্সিটি”নামে। এ ওয়েব সাইটটিতে পিএইচডি’র কোন প্রগ্রাম নেই।
দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ইসলাম প্রচার ও প্রসারে নিয়োজিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মত একটি মর্যাদা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ভুয়া ডক্টর পদ পদবিধারীকে সুযোগ দেওয়া হলে জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ অনুবাদ ও গবেষণাকর্ম প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।
এ বিষয়ে ইউজিসি দায়ীত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ধরনের ডক্টরেট ডিগ্রি আর্জনের কোন সুযোগ নেই। পিএইচডি ডিগ্রি কোন সাধারন বিষয় নয়। ডিগ্রি আর্জন না করে নিজের নামের সাথে ডক্টর ডিগ্রি যুক্ত করা বড় ধরনের আপরাধ।
পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন না করে নিজের নামের সাথে ডক্টর যোগ করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আইসিটি বিভাগের পরিচালক হাজেরা খাতুন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সরকারি ওয়েবসাইটে তার নাম ড. হাজেরা প্রদর্শন করা হয়েছে। দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনা প্রকল্প এর পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছেন এই কর্মকর্তা ।
২০১৭ সালে শামিম মোহাম্মদ আফজালের একক ক্ষমতায় এই কর্মকর্তাসহ আরো উনিশ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়া হয় ইসলামি ফাউন্ডেশনের চাকুরি বিধিমালা লঙ্ঘন করে। ২০২২ সালের সিএজির করা অডিটের ২৯ টি আপত্তির মধ্যে এই আপত্তিটি ছিল বিশেষ উল্লেখ যোগ্য। গত সাত বছরে এ অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয় নি। শামিম মোহাম্মদ আফজালের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনা প্রকল্পে বিশাল অঙ্কের অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয় সিএজির ওই প্রতিবেদনে। রহস্যজনকভাবে এ প্রকল্পেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় হাজেরা খাতুনকে।সংশ্লিস্ট একটি সূত্র জানায়, সামিম মোহাম্মদ আফজালের পছন্দের কর্মকর্তাদের মধ্যে হাজেরা খাতুনও ছিলেন অন্যতম একজন।
হাজেরা খাতুন পিএইচডি ডিগ্রির অর্জন না করে কতৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নামের সাথে কীভাবে সম্মান সূচক ডক্টর পদবী ব্যবহার করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করলেন এ বিষয়ে ইফার ডিজি আ. সালাম খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কলামিষ্ট :- মো: মনিরুজ্জামান
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
এই বাংলা/এমএস
টপিক
