26 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিখোঁজ

আরও পড়ুন

নিয়াজ তুহিন :::

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রতিটি আসনে বিকল্প প্রার্থী সামনে রেখে দলের মনোনয়ন ঘোষণা করেছিলেন। মনোনয়ন পেতে জোর তদবির লবিং করা সে সব বিএনপি নেতাদের অধিকাংশই বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। এমনকি গেল সংসদ নির্বাচনে  বিএনপি’র মনোনয়ন নিয়ে ভোট যুদ্ধে  অংশ নেওয়া অধিকাংশ বিএনপি নেতাই চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে আত্মগোপনে রয়েছেন। 

চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি নির্বাচনী আসনে তিনটি আসন শরিক দলকে ছেড়ে দিয়েছিলো বিএনপি। তার মধ্যে চন্দনাইশ আসনে এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, সাতকানিয়া আসনে জামায়াত ও রাঙ্গুনিয়া আসনে এলডিপির উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আলমের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছিলো।  হাটহাজারী সংসদীয় আসনে বিএনপির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চেয়ারপ্যার্সনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক ও ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এই আসনটি কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল (অব) ইব্রাহিমকে ছেড়ে দেবার কারণে দুইজনের কেউ মনোনয়ন পান নি শেষ পর্যন্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  হাটহাজারী আসনে মনোনয়ন দৌড়ে সক্রিয় থাকা সব বিএনপি নেতাই বর্তমানে আত্নগোপন রয়েছেন। তাদের অনুসারীরাও আন্দোলন থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখছেন। এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত ওয়াহিদুল আলম চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা যুক্তরাজ্য অবস্থান করলেও তার অনুসারীরা অবরোধ কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। অবরোধ কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে হাটহাজারী এলাকায় বেশ কিছু ঝটিকা মিছিল বের করেছে শাকিলার অনুসারীরা। এছাড়া বাকি মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের কোন খোঁজই নেই।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফটিকছড়ি থেকে কর্ণেল (অব) আজিমুল্লাহ বাহার, রাউজান আসন থেকে জসিম উদ্দিনকে দলের মনোনয়ন দেয়া হয়। এই দুই নেতা দলের কর্মসূচি থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখছেন। চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে তাদের দেখা মেলেনি। খোঁজ নেন নি আন্দোলনরত নেতাকর্মীদেরও। ফটিকছড়ি থেকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে নাম লেখানো ডাঃ খুরশিদ জামিল এবং মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে দলের মিছিল, সমাবেশর কালে ভাদ্রে দেখা গেলেও প্রশ্নবিদ্ধ নিরবতা দেখা গেছে  কর্ণেল (অব.) বাহারের ক্ষেত্রে। দলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,  তারুণ্যের সমাবেশ, বিভাগীয় মহাসমাবেশ থেকে শুরু করে ঢাকার রাজনৈতিক কর্মসূচি কোনখানেই নেই তিনি। 

রাউজান আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার পুত্র সামির কাদের চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বেছে নেয়া হয় জসিম উদ্দিন সরকারকে। প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সাথে বিএনপির দুরত্বের কারণে এই আসনের নেতাকর্মীদের অভিমান তৈরি হয়েছে। ফলে রুদ্ধ হয়েছে  আন্দোলনে সক্রিয় থাকার সব পথ।

রাঙ্গুনিয়া থেকে কুতুব উদ্দীন বাহার দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তবে রাঙ্গুনিয়া আসনে এলডিপিকে ছাড় দিলেও বিকল্প হিসাবে রাখা হয়েছিলো উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শওকত আলী নূরকে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দীন বাহার ২৮ শে অক্টোবরই দুবাই চলে যান। বিদেশে পাড়ি দেবার আগে তার অনুসারীদের নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের মুভমেন্ট থেকে দুরে থাকার নির্দেশনা দিয়ে যান৷

মীরসরাই আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম ইউসুফ ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দীনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান নুরুল আমিন চেয়ারম্যান। অবরোধ কর্মসূচির শুরু থেকে ছয়টি ছোটখাট ঝটিকা মিছিল করিয়ে দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন তিনিও।

সন্দ্বীপ সংসদীয় আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা ও নুরুল মোস্তাফা মনোনয়ন পান। সীতাকুণ্ড সংসদীয় আসনে উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরী ও সাবেক সচিব ও আইজিপি ওয়াই বি সিদ্দিকী মনোনয়ন চাইলেও ইসহাক কাদের চৌধুরী মনোনয়ন পান। ইসহাক চৌধুরী মৃত্যু এবং আসলাম চৌধুরীর কারাজীবন   এই আসনটিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির। চলমান অবরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে নি উপজেলা  বিএনপি। 

বোয়ালখালী সংসদীয় আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ খান ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ান। বর্তমান দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান  উপ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পান। বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে দেখা মেলেনি আবু সুফিয়ানের। সুত্রমতে, আবু সুফিয়ানের অনুসারীদের গ্রেফতার এড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে তিনি বর্তমানে আত্নগোপনে রয়েছেন। দক্ষিণ জেলা বিএনপির দলীয় কোন্দল ছাপিয়ে রাজপথে সক্রিয় করা যায় নি বিএনপি কিংবা অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের।

বাকলিয়া-কোতোয়ালী সংসদীয় আসনে ( চট্টগ্রাম ৯) মহানগর বিএনপির আহবায়ক  ডা. শাহাদাত হোসেন ও বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম মনোনয়ন পেয়েছিলেন  । শেষ পর্যন্ত চুড়ান্ত মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হওয়া শামসুল আলম রাজনীতি ছেড়ে দেন। আর কারাগারে থেকে গত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া ডাঃ শাহাদাত হোসেন ‘মেয়র নির্বাচনে ‘ বিএনপির মনোনয়ন পান। দলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে চট্টগ্রামেই দেখা যায় নি তাকেও। অবরোধের প্রথম দিন থেকে দলের মহানগর  কার্যালয় নাসিমন ভবনে  তালা দেয়া। ডাঃ শাহাদাত হোসেন কিংবা সদস্য আবুল হাসেম বক্করের কাছ কাছে  কোন নির্দেশনা না মেলায় নিষ্ক্রিয় রয়েছেন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী সংসদীয় আসনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। বয়স ও বার্ধক্যের কাছে ধরাশায়ী আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারীরা হতাশ হয়ে গুটিয়ে রেখেছেন নিজেদের।  চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে তার অনুসারীদের দেখা মেলেনি রাজপথে। 

বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট সংসদীয় আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নেন। দলের স্থায়ী কমিটির এই প্রভাবশালী সদস্য চট্টগ্রামের  বিভিন্ন উপজেলায় নিজের লোকদের বেছে বেছে পদে বসালেও, গ্রেফতার হবার পর থেকে নিষ্ক্রিয় তার লোকজনও।

পটিয়া সংসদীয় আসনে মনোনয়ন পান  দক্ষিণ জেলা বিএনপির বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম। আহবায়ক কমিটিতে নতুন করে অন্তভূক্ত হওয়া এনামও নেতাকর্মীদের মাঠে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

আনোয়ারা ও কর্ণফুলী সংসদীয় আসনে সাবেক সাংসদ সরোয়ার জামাল নিজাম ও জেলা বিএনপির সদস্য শিল্পপতি আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান মনোনয়ন পেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সরওয়ার জামাল নিজাম চুড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে  নির্বাচনে অংশ নেন। সরওয়ার জামাল নিজাম গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দক্ষিণ জেলা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। ফলে চলমান অবরোধে কোণঠাসা তার অনুসারীরাও। বাঁশখালী সংসদীয় আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এই আসনে মনোনয়নের দৌড়ে থাকা লিয়াকত আলী চেয়ারম্যানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। নিজের নেতাকর্মী, সাহস- সক্ষমতা থাকলেও মনোনয়নের গ্যাঁড়াকলে চলমান আন্দোলনে সক্রিয় থাকার পথ বন্ধ তার৷ 

বিশ্লেষকদের মতে,  চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলার  শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম  হলেও নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে মনোবল ভেঙে গেছে তৃণমূলের। অবরোধ কর্মসূচিতে সক্রিয়  নেতারা মনে করছেন, অবরোধের মতো কর্মসূচি দীর্ঘ সময় ধরে চললে একসময় তা অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। শীর্ষ নেতাদের আত্নগোপনে থাকা নিয়ে চট্টগ্রামে জনগণের সহানুভূতি হারাতে পারে বিএনপি, যা দলটি বছরের পর বছর ধরে অর্জন করেছে।

এইবাংলা /হিমেল 

 

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর