25 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

নির্বাচন পর্যন্ত চ্যালেঞ্জের পথ

আরও পড়ুন

বিশেষ প্রতিনিধি ::: 

সংলাপের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত রুপ ধারণ করেছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর চলমান অবরোধ, আন্দোলনের চেয়ে নির্বাচন কমিশনের জন্য মুখ্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বহিঃবিশ্ব। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই রাস্তা আরও কঠিন হলো কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা কঠিন হতে পারে কমিশনের জন্য। কারণ সরকারের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলা দলগুলো ছাড়া মাঠে দৃশ্যমান প্রতিযোগী নেই। সেকারণে ভোটার উপস্থিতি ও অতীতের উৎসবমুখর নির্বাচনের চিত্র যে থাকবে না ; সেটি সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তবে নির্বাচনের জন্য সবদলের অংশগ্রহণের বিষয়টি অত্যাবশকীয় নয়। 

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের ঊর্ধ্বগতি, ডলার সংকটের এই সময়ে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর চলমান আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে পারে বলে। বিরোধী পক্ষ ছাড়া  অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সেই নির্বাচন  অর্থনৈতিক সংকট যেমন কাটাবে না, তেমনিভাবে আন্তর্জাতিকভাবে দেশকে চাপের মুখোমুখি হতে হবে। 

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ সামনে কঠিন পথ। আপনাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে, যেসব জায়গায় তারা হামলা চালায়, সেসব জায়গায় আপনাদের উপস্থিতি জোরদার করতে হবে। প্রস্তুতি নিয়ে, জায়গা চিহ্নিত করে অবস্থান নিয়ে সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। ‘ 

তবে বিএনপি নেতাদের মতামত পৃথিবীর কোথাও প্রশাসনের রক্তচক্ষু ও দলীয় কর্মীদের পাহারা দিয়ে আন্দোলনকে কমানোর সম্ভব হয়নি।  জনসম্পৃক্ততার আন্দোলন সবসময়ই অর্থবহ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই। 

চলমান অবরোধ কর্মসূচি ডিঙিয়ে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়া নির্বাচন কমিশনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরাও। তাদের মতে, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট অস্বীকার করার উপায় নেই। এছাড়া স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিতে হয়েছে। অর্থনীতির অনেক সূচকেই বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ভালো করেছে। দারিদ্র্য, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। নারীর ক্ষমতায়নেও এগিয়েছে ব্যাপকভাবে। মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এমন আরও অনেক সূচকেই বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে ভালো করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় উন্নয়নশীল দেশ থেকে উত্তরণের একটি জায়গায় আজকের বাংলাদেশ। তবে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের ফলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। অর্থবহ নির্বাচন ও  রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা  বৃহৎ পরিসরে বিনিয়োগ আকর্ষণের সুযোগ তৈরি হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত শিক্ষক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক সাবরিনা আহমেদ মনে করেন, ‘ সব দলমতের কাছে গ্রহনযোগ্য অর্থবহ একটি নির্বাচন করতে না পারা মানেই, জনগণের অর্থের অপচয়। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জনগণের সমর্থনপুষ্ট সরকারের কোন বিকল্প নেই। ‘

বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার (ওডিএ) পরিমাণ দিন দিন কমছে। সহজ শর্তের ঋণের বদলে এখন দাতাগোষ্ঠীগুলো কঠিন শর্ত আরোপ করছে। বাংলাদেশের সামনে আরও চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে সহায়তা পাওয়া কঠিন হবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়  রাজনৈতিক সহ অবস্থান, অবকাঠামো নির্মাণ ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয়ী হয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহের মুখোমুখি হতে হয়েছে নতুন সরকারকে ।  জনগণের বিপুল ম্যান্ডেটের কারণে সে ষড়যন্ত্র বেশিদূর এগোতে পারেনি। ঠিক তেমনিভাবে বর্তমান সরকারের সামনের নির্বাচনে জনগণের সমর্থন জরুরি। বিশেষ করে, বিএনপির এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পর জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলে কঠিন সংকট তৈরি হতে পারে। ২০১৪ সালের পর থেকে জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে  ভোটারের অংশ নেবার প্রবণতা কমেছে, এই প্রবনতাকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি দেখছেন বিশ্লেষকরা। জনগণের সম্পৃক্ততাহীন সরকারে প্রাধান্য পায় স্বেচ্ছাচার, কর্তৃত্ববাদ, ঔদ্ধত্য ও দেশদশবিরুদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা।

২০১৪ ও ‘১৮ সালে একতরফা নির্বাচন হয়েছিল। পরবর্তী স্থানীয় নির্বাচনগুলো গোলযোগপূর্ণ ও ভোটার খরাকবলিত। নতুন করে দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের কাজ দিয়ে সাধারণ ভোটারদের আস্থা অর্জনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। তফসিল ঘোষণা সেই আস্থা ফেরানোর পরিকল্পনায় ভাটা পড়তে পারে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটারদের আস্থা ফেরানোর কথা ইসি মুখে বললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনার সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এমন অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার চেয়ে দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সংলাপের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।

এইবাংলা /তুহিন 

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর