25 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

আওয়ামীলীগে হেভিওয়েট প্রার্থীর ছড়াছড়ি, এককে নির্ভর বিএনপি

আরও পড়ুন

আল আমিন,নাটোর প্রতিনিধি :

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-২(সদর-নলডাঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান একগাদা হেভিওয়েট নেতা। এ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে ক্ষমতাসীন দলকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। কারণ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাই দলে পুরোনো এবং ত্যাগী নেতা। অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে একজনই মনোনয়ন চাইবেন।  সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে।

সদর উপজেলা ও নলডাঙ্গা নিয়ে গঠিত নাটোর-২ আসন। জেলার চারটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  এই আসন। এই আসনে রয়েছে ইতিহাসখ্যাত উত্তরা গণভবন, রাজবাড়ী, মিনি বিচ খ্যাত হালতি বিল, নাটোর সুগার মিল ও ঔষধি গ্রাম।

গুরুত্বপূর্ণ আসন হলেও নাটোরের এই অঞ্চলটি অবহেলিত  দীর্ঘদিন। তবে বর্তমান সরকারের আমলে রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, কৃষি খাত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। এসব উন্নয়নের পরও স্থানীয় আওয়ামী লীগে রয়েছে চরম কোন্দল। তবে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী একজনই।

অবশ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজানের মধ্যকার প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব মিটে গেলেই বিএনপির নির্ভার অবস্থা আর থাকবে না। ১৯৮৬ সালে আসনটি জাতীয় পার্টির ঘরে গেলেও ১৯৯১ সালে আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে যায় আওয়ামী লীগ নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর হাত ধরে। ১৯৯৬ আওয়ামী লীগ নেতা আহাদ আলী সরকার ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ আলী শেখকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। ২০০৮ সালে সব হিসাব-নিকাশ বদলে দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আহাদ আলী সরকার। ২০১৪ সালে নাটোর-২ আসনে দৃশ্যপট পরিবর্তন করে যুক্ত হয় শফিকুল ইসলাম শিমুলের নাম। আওয়ামী লীগের হয়ে ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে শফিকুল ইসলাম শিমুল ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আহাদ আলী সরকার, নাটোর-নওগাঁ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা মহিলা লীগের সভাপতি রত্না আহম্মেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নাটোর পৌর সভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল ইসলাম এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মালেক শেখসহ আরও কয়েকজন নেতা।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন জেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুন্নবী মৃধা।

দীর্ঘদিন ধরে দল ক্ষমতায় থাকায় এই আসনে হেভিওয়েট নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। সদর আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের সুর উঠেছে অনেক আগেই থেকেই। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে দুই ভাগ হয়ে গেছে জেলা আওয়ামী লীগ। দল এক হলেও, দলীয় সব কর্মসূচি পালন হয় আলাদাভাবে। দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের অনুসারীরা দলের কর্মসূচি পালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এবং একই কর্মসূচি সংসদ সদস্য শিমুল আলাদাভাবে পালন করেন তার নিজ বাসভবনে।

নাটোর সদর আসনে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোঃ আহাদ আলী সরকার একবার এবং শফিকুল ইসলাম শিমুল টানা দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, ‘ জনগণকে মোটিভেট করতে নানা কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে রয়েছি। আমরা আওয়ামী লীগের সব সদস্য একসঙ্গে রয়েছি, কেবল স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ছাড়া। তিনি আমাদের সঙ্গে নেই। এ আসনে দলের মনোনয়নের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল ইসলাম বলেন,আমি সভাপতি হবার পর থেকে দলীয় কোন্দল নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি।তিনি মনে করেন জাতীয় নির্বাচনের পুর্বেই সব কোন্দল নিরসন করে দলের বিজয় সুনিশ্চিত করা হবে।তিনিও এই আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। সম্প্রতি সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি প্রার্থিতার বিষয়টি ঘোষণা করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আহাদ আলী সরকার বলেন,ছাত্র জীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে রাজনীতি করে আসছি।আওয়ামীলীগ আমার রক্তে মিশে আছে।১৯৭৬ ও ১৯৮১ সালে দুইবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান,উপজেলা পরিষদ সৃষ্টির পর ১৯৮৬ ও ১৯৯০ সালে দুইবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি।১৯৯৬ সালে দল থেকে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেয়েছি।২০০৮ সালে পুনরায় দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি।বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যোগ্য মনে করে নৌকার মনোনয়ন দিলে আমি আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের নিরঙ্কুস সমর্থন নিয়ে এই আসন উপহার দিব। ‘

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মালেক শেখ বলেন, শেখ হাসিনার প্রশ্নে, নৌকার প্রশ্নে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা সবাই এক।

তবে নানা অভিযোগ পাত্তা দিতে চান না সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। তিনি বলেন, ‘ ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত সব কমিটি চমৎকারভাবে সাজিয়েছিলাম।
আমরা নাটোর থেকে জঙ্গি, সন্ত্রাস এবং বাংলাভাই দূর করেছি। আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন। বড় সংগঠনে দ্বন্দ্ব থাকাটাই স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলে জরিপের মাধ্যমে যাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষেই আমরা নৌকাকে জেতাতে কাজ করব। ‘

অন্যদিকে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের অবিসংবাদিত নেতা প্রয়াত শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীর মেয়ে উমা চৌধুরী জলি টানা দুবার পৌরসভার দায়িত্ব পালন করছেন। মনোনয়ন পেতে তিনিও এবার কেন্দ্রে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

উমা চৌধুরী জলি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দুবার মনোনয়ন দিয়েছেন। টানা দুবার পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। আমি এর আগেও মনোনয়নপত্র তুলেছিলাম। আসন্ন নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইব।প্রধানমন্ত্রী চাইলে আমাকে মনোনয়ন দেবেন, না দিলে যাকে মনোনয়ন দেবেন তার জন্যই কাজ করব। ‘

নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম ফিরোজও দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি নলডাঙ্গায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। পরবর্তী সময়ে তিনি সংগঠনের আর কোনো শক্তিশালী পদে আসীন হননি। তবে গত বারের মতো আসন্ন নির্বাচনেও তিনি নৌকার টিকেট চাইবেন বলে জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় বিএনপি এখনও নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা না দিলেও তৎপর রয়েছে জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। বিভিন্নভাবে জেলা দল গোছাতে ব্যস্ত। বছরজুড়েই নাটোরে জেলা বিএনপিকে কমবেশি দলীয় কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। বিএনপি নেতারা নানা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত এবং সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। জেলার অন্যত্র বিএনপি সেভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন না করলেও নাটোর শহরে যথাসম্ভব কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করে থাকেন। দলীয় কর্মসূচি পালনকালে বেশ কয়েকবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। দুই দলের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা, মামলা এবং পাল্টা মামলার ঘটনা ঘটেছে।

নাটোর সদর আসনে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুল। দুলুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি নাটোরে জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা সবাই মনে করেন বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসনে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলই দল থেকে মনোনয়ন পাবেন। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে চান এমন আর কোনো স্থানীয় বিএনপি নেতার নাম শোনা যায় না।

উল্লেখ্য, নাটোর-২ আসনে ১৫৬টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। আর ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭২ জন।

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর