জবি প্রতিনিধি :
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. এস. এম. মাসুম বিল্লাহ জুলাই সনদ সম্পর্কে কটাক্ষ করে বলেছেন, দেশকে আরেকটি মোল্লাতন্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা চলছে ‘ তিনি অভিযোগ করেন, ওই সনদে অতিমাত্রায় ড. ইউনুস বন্দনা করা হয়েছে। তার দাবি, এই সনদ ময়লার ভাগাড়ে ফেলা উচিত।
দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
গত রবিবার (১৯ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবৈধ। জুলাই সনদ প্রণয়নের এখতিয়ার তাদের নেই। অথচ তারা একে রাষ্ট্র ও জনগণের সামাজিক চুক্তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানকে ছিনিয়ে নিয়ে দেশকে আরেকটি মোল্লাতন্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। দেশের মানুষকে এই প্রচেষ্টা রুখে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার আমেরিকার সঙ্গে গোপন চুক্তি করেছে, যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী। বাণিজ্যিক কোনো চুক্তি গোপন রাখা যায় না। এই সরকার পদে পদে ৭২-এর সংবিধান লঙ্ঘন করছে। জুলাই সনদেও সংবিধান সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে।’
অধ্যাপক মাসুম বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। জনগণের ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, ডিজিটাল রেভলিউশন, ব্লু ইকোনমি—প্রতিটি খাতে তার অবদান রয়েছে। অথচ জুলাই সনদে শেখ হাসিনাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে ঘৃণার পাত্র বানানো হয়েছে, যা একধরনের বিকৃত রাজনীতি।’
এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই ফেসবুকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের হয়ে নতুন নতুন বয়ান তৈরি করছেন মাসুম বিল্লাহ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেইজে ও টকশোতে অংশ নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক ড. এস. এম. মাসুম বিল্লাহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও আইন অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি শিক্ষাছুটিতে আছেন।
এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক মাসুম বিল্লাহর এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েছি, ফ্যাসিস্টদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আমরা চাই, যারা ফ্যাসিস্টদের সহযোগিতা করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে চাকরিচ্যুত করা হোক।’
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি, যারা ফ্যাসিস্টদের সহযোগী, তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। কিন্তু প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’
আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একজন শিক্ষকের এমন অবস্থান নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির জন্য ভালো নয়। আমরা চাই, শিক্ষকরা যেন একাডেমিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকেন, রাজনৈতিক বিতর্কে নয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমি ফেসবুক ব্যবহার করি না, তাই ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত নই। তবে অভিযোগ পেলে প্রমাণের ভিত্তিতে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তবে, এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিমের কাছে জানতে চাইলে তেমন কোনো মন্তব্য পাওয়া যায় নি।
এই বাংলা/এমএস
টপিক
