25.3 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

আবাসিক খাতের গ্রাহকদের জন্য দুঃসংবাদ, মিলবে না গ্যাস সংযোগ

আরও পড়ুন

নাদিরা শিমু, চট্টগ্রাম 

সরকারের নিয়ম মতো ডিমান্ড নোটের (জামানত) টাকা জমা দিয়েও সংযোগ পান নি চট্টগ্রামের অন্তত পঁচিশ হাজার গ্রাহক।  বাধ্য হয়েই অবৈধ সংযোগের দিকে ঝুঁকেছে । দশ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা আবাসিক গ্রাহকদের জন্য কোন সুখবর নেই। কারণ তারা নতুন করে গ্যাস সংযোগ পাবেন না -সেটি অনেকটাই নিশ্চিত।

এরইমধ্যে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামে আবাসিক বাসা-বাড়িতে গ্যাস-সংযোগ পাওয়ার জন্য প্রায় ২২ হাজার গ্রাহক আবেদন করে রেখেছেন । তবে তারা গ্যাস সংযোগ পাবেন না। বর্তমানে আবাসিক এবং বাণিজ্যিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। শুধু চালু আছে- শিল্পে গ্যাস সংযোগ। যারা গ্যাস সংযোগ পান নি,  তারা চাইলে আবেদন করে জমা দেওয়া টাকা ফেরত নিতে পারেন।’

আবাসিক খাতের গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগ দিতে না পারলেও সরকারি বিধি ও নিয়মকানুন নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করে সংযোগ বাণিজ্যের মাধ্যমে পকেট ভরেছেন সংস্থাটির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিল্পখাতের বকেয়া বিল পরিশোধ ও পুনঃসংযোগের নামে হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে সংস্থাটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।  মেসার্স মোস্তফা পেপার কোম্পানির শিল্প ও ক্যাপটিভ খাতে ৫ কোটি টাকার বিল বকেয়া থাকায় গত ২০২১ সালের ৭ জুন গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কেজিডিসিএল। এরপর পরীক্ষা করে কারখানাটির ক্যাপটিভ খাতের মিটারে ত্রুটি পাওয়া যায়। পরীক্ষাটি করা হয় সংযোগ বিচ্ছিন্নের আরও ছয় মাস পর, আর মিটার পরীক্ষার আগে পুনঃসংযোগের জন্য নির্ধারিত কমিটি বাতিল করা হয়। পরে পরীক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে শুধু মার্কেটিং বিভাগের লোকদের দিয়ে নতুন কমিটি করে তৎকালীন  এমডির নেতৃত্বাধীন চক্র।

অবৈধভাবে ২২টি গ্যাসের চুলা সংযোগ দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) লুটপাটের সত্যতা পায়।  তদন্তে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ সংঘটিত হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ না করে ‘পাঁচটি কারণ’ দেখিয়ে অব্যাহতি দেয় দুদক। একই সঙ্গে এফআরটি (চূড়ান্ত প্রতিবেদন সত্য) দাখিল করে, যদিও আদালত সেটি গ্রহন করে নি।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে ২০১০ সাল থেকে আবাসিক সংযোগ বন্ধ রয়েছে। ২০১৩ সালে সংযোগ চালু হয়। পরে আবার আবাসিকে নতুন সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে শুধু শিল্পে নতুন সংযোগ প্রদান চালু করা হয়।

গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকার পরও প্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে অবৈধ সংযোগ দিয়েছে  কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) একটি সংঘবদ্ধ  চক্র। চট্টগ্রামজুড়ে এমন আড়াই হাজার সংযোগের তথ্যও পেয়েছে খোদ সংস্থাটি। এই কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের তিনজনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

প্রতিটি নতুন আবাসিক সংযোগের জন্য এক থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে গ্রাহককে। ঘুষ দিলে সংযোগের আবেদনটি পেছনের তারিখে দেখিয়ে (ব্যাক ডেট) কাগজপত্র তৈরি করে দেয় কেজিডিসিএলের রাজস্ব ও আইটি বিভাগের একটি চক্র। শুধু তা-ই নয়, ঘুষের বিনিময়ে কোনো গ্রাহকের ৪ চুলা থেকে ২৭ চুলাও বর্ধিত করা হয়েছে।দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া তিনজন হলেন কেজিডিসিএলের উত্তর বিভাগের (রাজস্ব) জোন ৩ ও ৯ শাখার ব্যবস্থাপক রোকেয়া ফেরদৌসী, একই বিভাগের উপব্যবস্থাপক শাহাদাত ওসমান খান ও আইটি বিভাগের উপব্যবস্থাপক আব্দুল মবিন।অব্যাহতি পাওয়া তিনজনের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এই অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়। এ কারণে গত ১১ জুন দায়িত্ব থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

ঘুষের বিনিময়ে গ্যাস সংযোগ দিলেও ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দিয়ে সংযোগের জন্য দশ বছর অপেক্ষা করা সাধারন বাইশ হাজার গ্রাহকের কপালে সুখবরের বদলে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। গ্যাস সংযোগ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরে গড়ে উঠেছে অন্তত সাড়ে তিন হাজার আসাসিক প্রকল্প। এসব প্রকল্পে ফ্লাট কিনে বসবাস করছে পঁয়ত্রিশ হাজার পরিবার। বাড়তি দামে গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয় করে কোনভাবে জীবনযাপন করে আসছে এসব ফ্লাটের ক্রেতারা। নতুন করে আবাসিক খাতে সংযোগ না দেবার সিদ্ধান্ত ভোগাবে তাদেরও। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমন সিদ্ধান্ত আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

২০১০ সালে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডকে পুনর্বিন্যাস করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে এ কোম্পানির অধিভুক্ত এলাকাগুলো হলো- চট্টগ্রাম নগরী, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, কর্ণফুলী ও কাপ্তাই। এসব এলাকায় মোট সংযোগ রয়েছে ছয় লাখ এক হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালিতে সংযোগ আছে পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প-বাণিজ্যিকসহ অন্যান্য খাতে। চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা আছে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর