স্পোর্টস ডেস্ক :::
তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছে বিশ্বকাপ ট্রফি। বুধবার শেষ দিনে এসে সোনালী রঙের এই ট্রফিটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। পান্থপথে অবস্থিত বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে সকাল ১১টা থেকে সর্বসাধারণের জন্য ট্রফিটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। রাত ৮টা পর্যন্ত সবাই বিনা টিকিটে ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ পাবেন। এমন আয়োজনের পর সকাল থেকেই বসুন্ধরার আশপাশ এলাকা লোকে লোকারণ্য। দুপুর হতেই ট্রফি ঘিরে দর্শনার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনা বিরাজ করছিল।
বসুন্ধরা সিটির প্রথম ফ্লোরে মূল প্রবেশ গেটের সামনে খোলা জায়গায় রাখা হয় বিশ্বকাপ ট্রফি। চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে চারটি অস্থায়ী গেট রেখেছেন আয়োজকরা। যাতে ছবি তোলা শেষে ক্রিকেটপ্রেমীরা এক গেট দিয়ে ঢুকে আরেক গেট দিয়ে চলে যেতে পারেন। পুলিশ ছাড়াও প্রাইভেট কোম্পানির ১০০ জন নিরাপত্তাকর্মী এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন। পাশাপাশি বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবকদেরও দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তারা ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছেন।
যদিও ছবি তুলতে হলে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। চারটি গেটে অস্থায়ী প্রবেশমুখের লম্বা লাইন লক্ষ্য করা গেছে। সময় যত গড়িয়েছে, লাইন তত লম্বা হয়েছে। অবশ্য তাতে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ ছিল না দর্শকদের। কাছ থেকে ট্রফি দেখতে পারছেন, ছবি তুলতে পারছেন, তাতেই ভীষণ খুশি তারা। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখার অপেক্ষায় ছিলেন সানজিদা কেয়া ও আফসানা রহমান নামের দুই বান্ধবী। খোশ-গল্পে সময় কাটাচ্ছিলেন তারা। বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ ট্রফি বাংলাদেশে এসেছে, এটি দেখার সুযোগ হাতছাড়া করি কীভাবে। ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলবো, সেটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করবো।’
বাঘের সাজে সজ্জিত হয়ে মিলন নামের এক ক্রিকেট ভক্ত বসুন্ধরাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুরো মুখ ও শরীরে বাঘের আকৃতিতে সেজেছেন তিনি। হাতে জাতীয় পতাকা। মজার ছলে অনেকই বলছিলেন, বসুন্ধরাতে বাঘ এসেছে বাঘ! মিলনও খুব মজা পাচ্ছিলেন। বসুন্ধরার এক কোনায় মিলনকে নিয়ে রীতিমতো জটলা হয়ে গিয়েছিল। অনেকেই তার সঙ্গে ছবি তুলেছে, সেলফি তুলেছে। সকাল ১১টার দিকে বসুন্ধরা সিটিতে পা রাখা মিলন থাকবেন পুরোটা সময়। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেছেন, ‘সকাল সকাল এসেই ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলেছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভালোবাসি। তাইতো সকাল সকাল ছুটে এসেছি। সবার আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ।’
মিলন আশাবাদী এবার ট্রফি বাংলাদেশেই আসবে, ‘গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলছে। আমি আশা করি, ভারতেও ভালো খেলবো। আমাদের সাকিব, তামিম, মুশফিকরা এবার এই ট্রফি নিয়েই ঘরে ফিরবে।’
এক দল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী লাইনে দাঁড়িয়ে বলছিল- ‘এই ট্রফিটা ফেরত দেওয়ার দরকার কী, এই ট্রফিতো আমাদের ঘরেই আসবে।’
শুধু তরুণ দর্শনার্থীদের আগমনেই বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স মুখরিত ছিল না। মধ্যবয়সী অনেক নারীকেও দেখা গেছে ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলতে। অনেক তরুণ-তরুণী তাদের মা-বাবাকে নিয়ে বসুন্ধরাতে এসেছেন ট্রফি দেখতে। আবার অনেকে শপিং করতে এসে সুযোগ বুঝে ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলেছেন। সবমিলিয়ে সময় যত গড়িয়েছে দর্শনার্থীদের আগ্রহ ততই বেড়েছে।
গত ২৭ জুন ভূপৃষ্ঠ থেকে এক লাখ ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় মহাশূন্যে বিশ্বকাপ ট্রফিটি উন্মোচন করে নামানো হয় আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এরপর ভারত থেকে যাত্রা শুরু করে একে একে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, যুক্তরাষ্ট্র, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ঘুরে বিশ্বকাপ ট্রফি বাংলাদেশে এসেছে। এখান থেকে ট্রফি যাবে কুয়েতে। সব মিলিয়ে এটি মোট ১৮টি দেশ ঘুরবে। ৪ সেপ্টেম্বর ফের ভারতে শেষ হবে ট্রফির বিশ্ব ভ্রমণ।
এইবাংলা/প্রিন্স আচার্য্য/সিপি