24.5 C
Dhaka
Friday, October 3, 2025

৬টি খালে বাঁধ দিয়ে আওয়ামীলীগ নেতার মাছ চাষ।

আরও পড়ুন

গোপাল হালদার, পটুয়াখালী প্রতিনিধি :::

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের ৬ টি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম আকন ও তার ছেলে নাহিদ আকন। গত ৪৫ বছর ধরে এসব খালে বাঁধ মাছ চাষ করায় পানি নিষ্কাশনসহ নানা কারণে বিপাকে পড়েছেন ওই ইউনিয়নের কৃষকসহ হাজারো মানুষ। আর বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে জরিমানাসহ লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে স্থানীয়দের।

এদিকে প্রতিকার চেয়ে বৃহস্পতিবার (৩ আগষ্ট) জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন মহিপুর ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মো.আব্দুল মন্নান।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, মহিপুর ইউনিয়নের মূলামের জোয়ার-ভাটা প্রবহমান খালের শাখা, লতিফপুর মাদবার বাড়ি সংলগ্ন খাল, নিস্যিব বাড়িয়া কবরের খাল, লতিফপুর ওয়াকফ এর খাল, মোয়াজ্জেমপুর আব্দুল হক বাড়ির সংলগ্ন ওয়াকফ এর খাল এবং লতিফপুর ইন্নারজমার দুটি খালসহ ৬ টি খালে গত ৪৫ যাবত ধরে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন মহিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম আকন ও তার ছেলে মহিপুর থানা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি নাহিদ আকন। আর এ কারনে এসব খাল থেকে কৃষি কাজে কৃষকরা পানি ব্যবহার করতে পারে না ও বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে এসব খালের দুইপারের সুফলভোগীরা পানি ব্যবহার করলেও স্থানীয়দের জরিমানাসহ হতে হয় লাঞ্ছনা শিকার।

অভিযোগে আরো বলা হয়, নাহিদ আকন স্থানীয় ভাবে চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তার নামে রয়েছে হত্যাসহ একাধিক মামলা এবং অত্র এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের নেতা এবং সাধারণ মানুষ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে থাকে আর এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে নাহিদ আকন নিজেই স্থানীয়দের মারধর পর্যন্ত করে থাকেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মন্নান বলেন,‘ আমরা সাধারণ মানুষ খালের ধারে কাছেও যাইতে পারি না নাহিদ আকনের ভয়ে। আমরা এর প্রতিকার চাই।’

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে নাহিদ আকন বলেন,‘এসব খাল আমাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি। আর তারা যে অভিযোগ করছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

এদিকে সরেজমিনে মহিপুর ইউনিয়নের মূলামের খালের শাঁখা গুলোতে ঘুরে দেখা যায়, আন্ধারমানিক নদী ও শিববাড়িয়া নদীর সঙ্গে স্লুইস গেটের মাধ্যমে সংযুক্ত মূলাম খালের খাল ও এর শাঁখা খালের পানির ওপর নির্ভর করে চলে এ এলাকার কৃষকদের চাষাবাদ। তবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুস সালাম আকন ও তার ছেলে শ্রমিকলীগ নেতা নাহিদ আকন প্রতিটি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন এবং বাঁধের উপর নির্মান করেছেন মাছ পাহাড়াদারের জন্য ঘর। এতে স্থানীয় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। পানি নিষ্কাশন করতে না পারায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা হওয়ায় এরই মধ্যে পানিতে কৃষকের লাখ লাখ টাকার রবিশস্যেরও ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে ধান আবাদেও বেগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।

লতিফপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম দুয়ারী বলেন,‘তাদের জোর আছে, ক্ষমতা আছে তারা মাটি দিয়া আটকাইয়া খাল খায়। আমরা তো আর কিছু কইতে পারি না।’

এ ব্যাপারে মহিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুল মালেক আকন বলেন,‘ বহুবার চেষ্টা করেছি এই খাল গুলো উন্মুক্ত করার কিন্তু পারিনি। গ্রামবাসী অসহায় তাদের কাছে। সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, স্থানীয়দের সুবিধার্থে হলেও খাল খাল গুলো উন্মুক্ত করার।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস সালাম আকন বলেন,‘আমি শুধু লতিফপুর ওয়াকফ এর একটি খালে মাছ চাষ করি, আমি এটা কিছু অংশ ডাকে নিছি।’

আপনার ছেলে নাহিদ আকন বাকি খাল গুলোতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,’আমার ছেলে যে খালে মাছ চাষ করে সেটা রেকর্ডীয় সম্পত্তি। এছাড়া মূলামের খাল উন্মুক্ত আছে সবাই জাল দিয়ে মাছ ধরে খায় আমিও খাই, যার যার ঘরের সামনে।’

এ বিষয়ে মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন,‘প্রবাহমান খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কোনো সুযোগ নেই, এছাড়া এসব খালে দুইপারের সুফলভোগীরা মাছ আহরণ ও পানি ব্যবহার করবে। যদি কেউ জোর জবরদস্তি করে আটকে রাখে সেটা বেআইনী। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি এমনটা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও কৌশিক আহম্মেদ বলেন,‘খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কোনো সুযোগ নেই, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. নুর কুতুবুল আলম বলেন,‘ খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, এটা কোনো ভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না। অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি ইউএনও কে খোঁজ নিতে বলছি।’

এইবাংলা/প্রিন্স আচার্য্য/সিপি

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর