Become a member

Get the best offers and updates relating to Liberty Case News.

― Advertisement ―

spot_img

আসন্ন নির্বাচনে সিদ্ধান্তহীন এস. এ. কে. একরামুজ্জামান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সাবেক বিএনপি নেতা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক এস. এ. কে. একরামুজ্জামান বলেছেন,...
Homeঅপরাধবঞ্চিত মেধা ও সততা: ইসলামি ফাউন্ডেশনে ১৫ মাসেও পদোন্নতির দেখা নেই

বঞ্চিত মেধা ও সততা: ইসলামি ফাউন্ডেশনে ১৫ মাসেও পদোন্নতির দেখা নেই

মোহাম্মদ মোশার্রাফ হোছাইন খান :

প্রাতিষ্ঠানিক পদোন্নতি সংক্রান্ত নীতিমালা লঙ্ঘন ‌ও দলীয় ক্ষমতায় আওয়ামী শক্তিশালী একটি কুচক্রী মহল তৎকালীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির ক্ষমতায় নিজেদের পরিচালক পদে পদোন্নতি আদায় করে নেন। এতে বঞ্চিত হয় সৎ, যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তারা। জনবল কাঠামো অনুযায়ী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মোট পরিচালক থাকার কথা ১৫ জন, বর্তমানে পরিচালক রয়েছেন মাত্র ৫ জন। শূন্য পদগুলোতে সিনিয়র উপ-পরিচালকদের চলতি দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। উপ পরিচালকের ৪৮টি পদও শূন্য রয়েছে দীর্ঘ দিন যাবৎ। প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন পদোন্নতিতে বন্ধ্যাত্ব পরিস্থিতি বিরাজ করায় প্রাতিষ্ঠানিক সকল কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ ও আক্ষেপ নিয়ে চাকুরি জীবন শেষ করে বিদায় নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকে।

দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ধর্মমন্ত্রনালয় নিয়ন্ত্রিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির বহুবিধ সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মরত সৎ, যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তাদের পরিচালক ও উপ পরিচালকের পদগুলোতে পদোন্নতি না দেয়া এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল শূন্যতা। জন বল কাঠামো অনুযায়ী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রাজস্ব খাতে পদ রয়েছে ১৬৬৮টি। এর মধ্যে ১ম শ্রেণির পদ ৩৯৮টি, ২য় শ্রেণি ১২টি, ৩য় শ্রেণি ৮৩৩টি ও ৪র্থ শ্রেণির ৪২৫টি।

বর্তমানে চার শ্রেণির পদে মোট ৯৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। ৬৮৮টি পদে জনবল শূন্য রয়েছে। বিপুল সংখ্যক জনবল শূন্য থাকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত দেশী বিদেশি পাঠক গবেষকদের ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন গবেষণাধর্মী বই পত্র পাঠকদের চাহিদা মাফিক জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ইসলামি বিশ্বকোশ ও অনুবাদ বিভাগের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে। গবেষণায় ও দালিলিক প্রয়োজোনীয় অনেক বইপত্রের সেট সমূহ না থাকায় অনেক গবেষক ও পাঠকরা অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে। যা এ ছাড়া অন্যান্য বিভাগ সমূহেও একইভাবে হ-য-ব-ল অবস্থা বিরাজ করছে।

২০০৯ সালে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সামিম মোহাম্মদ আফজালকে ইফার মহা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। সামিম মোহাম্মদ আফজাল ইসলামি ফাউনেডশনকে ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত করে রাখে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ে শামিল মোহাম্মদ আফজালের কথাই ছিলো ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আইন। বলা হয়ে থাকে দেশে জঙ্গি নাটকের রুপকারদের একজন ছিলেন শামিম মোহাম্মদ আফজাল। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিপুল অঙ্কের টাকা ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে এই খাতে খরচ করেছেন বলেও বিভিন্ন মহলে অভিযোগ রয়েছে। ২০২১ সালের সিএজির অডিটেও এর প্রমাণ পেয়েছে।

৫ আগস্ট ২০২৪ এ স্বৈরাচার হাসিনার সরকারের পতনের পর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়া হয় প্রাজ্ঞ আলেম হিসেবে পরিচিত ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনকে। সকলের আশা ছিল তিনি ইসলামি ফাউন্ডেশনের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সমূহ সমূলে উৎপাটন করে একে একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ দিবেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তিনি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সভাকক্ষে দারুল আরকাম মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনা শীর্ষক প্রকল্পের দিনব্যাপী সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোসহ ফাউন্ডেশনকে যারা ধ্বংস করেছে, সেটা তদন্তের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করবেন। মডেল মসজিদের দুর্নীতি খতিয়ে দেখার জন্য পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন ও দুর্নীতির সাথে জ‌ড়িত‌দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এবং দুর্নী‌তি ও রাজনী‌তিমুক্ত ক‌রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে প্রাণবন্ত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার ঘোষণাও দেন। তবে গত পনেরো মাসেও তার এ বক্তব্যের কোন প্রতিফলন পাওয়া যায় নি। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর অধীন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জনবল কাঠামো অনুযায়ী শূন্য থাকা পরিচালকের ১০ টি পদ ও উপ পরিচালকের ৫৮ টি পদে নিয়োগ বা পদোন্নতি দিতে পারেনি।

এদিকে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন আর্থিক বিধি-বিধান পরিপালন না করে ৩৬৪.২১কোটি টাকা ব্যয় করায় শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষার ২৯ টি আপত্তি উত্থাপিত হয়। এর মধ্যে একটি আপত্তিতে বলা হয়েছে “ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর নিয়ন্ত্রণাধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ এর ২০০৯-২০১০ হতে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে হিসাব নিরীক্ষাকালে দেখা যায় যে, অর্গানোগ্রামে উল্লিখিত পরিচালক ও সমমান পদে মঞ্জুরীকৃত সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত ৯ জন এবং হিসাব নিয়ন্ত্রক পদে ১ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছ “। এদের মধ্যে মহিউদ্দীন মজুমদার, হাজেরা খাতুন, রাশিদা আক্তার ও তৌহিদুল আনোয়ার, আনিসুজ্জামান সিকদার এখনো তাদের পদে বহাল রয়েছেন।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়োছিল, “অর্গানোগ্রামে সংস্থানকৃত পরিচালক ও সমমান পদসংখ্যা ১৫টি, যার মধ্যে শূন্য পদসংখ্যা ৯টি, কিন্তু পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে ১৮ জনকে ফলে অতিরিক্ত (১৮-৯) ৯ জন পরিচালককে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। পদোন্নতি সংক্রান্ত ১০/১০/২০১৭ খ্রি. তারিখের সভায় ধর্ম মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি/যুগ্ম সচিবগণ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কার্য বিবরণীতে তাদের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়নি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক জনাব সামীম মোহাম্মদ আফজাল এর স্বাক্ষরে ১১/১০/২০১৭ খ্রি. তারিখের স্মারক নং-১৬.০১.০০০০.০০১.১০.০৪৪.১৬-৯৪০৪ এর মাধ্যমে পদোন্নতির আদেশটি জারি করা হয়। ২০১১ সালের নন ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারী (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি) বিধিমালা ১০(১) মোতাবেক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা অনুসরণ ব্যাতীত কোনরূপ পদোন্নতি প্রদান করা যাবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে কোন জ্যেষ্ঠতা তালিকা অনুসরণ করা হয়নি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা ১৯৯৮ এর ৬(৩) ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, জ্যেষ্ঠতা ও মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতির মাধ্যমে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি ”| বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদানের কোন অবকাশ নেই বলেও অডিট আপত্তির সিদ্ধান্তে বলা হয়।

এদিকে,২০১০ সালে উপ-পরিচালক পদ ২২ টি শূন্য ছিল কিন্তু পদোন্নতি প্রদান করা হয় ৩৮ টি উক্ত পদোন্নতির বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট মামলা থাকা অবস্থায়ও ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে শর্ত সাপেক্ষে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। যার সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত ছিল। এমন তথ্যও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
পরবর্তীতে আবার ২০১৭ সালে এদেরকে আবার পরিচালক হিসেবে পদ্ধতি প্রদান করা হয়।

২০২৪ সালেতৎকালীন ধর্ম সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি রহস্যজনকভাবে কোন মন্তব্য না করে এ বিষয়টি এড়িয়ে যান। ২০২৪ এর ৫ আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশের প্রশাসনের সব জায়গায় পদোন্নতি ও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে পূর্বের অবস্থাই বিরাজ করছে। এ নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি আঃ ছালাম খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ”পদোন্নতির বিষয়টি একটু দেরি হয়েছে, তবে আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যেই পদোন্নতি ব্যবস্থা করা হবে”

এই বাংলা/এমএস

টপিক