আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :-
নাটেরের বাগাতিপাড়ার প্রতিবন্ধী কিশোর প্রত্যয় তৈরি করেছে এক অবাক করা কলম, যা ব্যবহার শেষে মাটিতে ফেললেই সেখান থেকে জন্ম নেবে একটি গাছ। স্বপ্ন মনে হলেও বাস্তবে এমনই একটি কাগজের তৈরি কলম উদ্ভাবন করেছে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামের প্রশু প্রতি দাসের ছেলে প্রত্যয় কুমার দাস তীর্থ।
১৭ বছর বয়সী এ কিশোর কলমটি উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে স্থানীয়দের। পরিবেশ বান্ধব কাগজের কলম উদ্ভাবনের পর মাত্র ৬টাকা করে তা বিক্রিও করছে সে।
বর্তমানে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে রয়েছে। সে জায়গা থেকে পরিবেশের জন্য সবার কাজ করার সুযোগ রয়েছে সে কথা চিন্তা করে ইন্টারনেটের সহযোগিতা নিয়ে এলাকার কয়েকজন শিশু-কিশোরকে সাথে নিয়ে ‘গ্রিন পেন’ নামের কাগজের কলম উদ্ভাবন করে প্রত্যয়। সে চলতি বছরে জামনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
কাগজের তৈরি কলমটি প্লাস্টিকের কলমের চেয়ে কোনো অংশে খারাপ নয়, তা দিয়ে একই কাজ করা যায়। বর্তমানে বিশ্বব্যাপি পরিবেশ বির্পযয়ের এমন ক্লান্তিকালে প্লাস্টিক যখন পরিবেশের ক্ষতি করছে ঠিক তখন কাগজের কলমটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কলমটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে, কাগজ, আঠা, বিভিন্ন বৃক্ষের বীজ ও কালি ভরা শীষ। কলমটি ব্যবহার শেষে মাটির সংস্পর্শে আসলেই কলমের কাগজের অংশটি জৈব প্রক্রিয়ায় মাটির সাথে মিশে যাবে। তারপর কলমটির পেছনের অংশে নানা ধরনের বৃক্ষের বীজ থেকে জন্ম নেবে গাছ।
প্রত্যয় কুমার দাস তীর্থ জানায়, ‘গ্রিন পেন তৈরির ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক কমানো হয়েছে। এটি উৎপাদন বা তৈরির মাধ্যমে ৯৫ শতাংশ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে প্রতিটি কলম থেকে একটি গাছের চারা অঙ্কুরিত হওয়ার সুযোগও রয়েছে।’ গ্রিন পেন যেহেতু হাতে তৈরি করতে হয় সেহেতু এটি উৎপাদনের মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব হবে বলে জানায় ওই শিক্ষার্থী। যে সমস্ত মহিলা বাইরের কঠিন শ্রমের কাজ করতে পারেন না অথচ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা তাদের সংসারের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি এটি সহায়ক কাজ হিসেবে করতে পারবেন।
জামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী পূজা রায় বলে, সবুজ বলপেনে সুন্দর লেখা হয়। জামনগর উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সালমান আলী জানায়, গ্রিন পেন দিয়ে সাধারণ কলমের মতোই লেখা হয়।
প্রত্যয় কুমার দাসের প্রতিবেশী মানবাধিকার কর্মী ও পরিবেশবাদী আরশাদ আলী বলেন, প্রতিবন্ধী ওই শিক্ষার্থীর তৈরি গ্রিন পেন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাইরেও রপ্তানি করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা সরকার প্রত্যয়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সবুজ কলম বা গ্রিন পেন অবশ্যই পরিবেশবান্ধব। এটি বেশি বেশি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পারি। এছাড়া এটি ব্যবহারের ফলে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
এইবাংলা / নাদিরা শিমু/ NS