নিজস্ব প্রতিবেদক ::
‘ থাই গেম’ নামের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নি:স্ব হচ্ছেন সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা। এরইমধ্যে এই গেম খেলতে গিয়ে নি:স্ব হয়ে অনেক প্রবাসী। ভুক্তভোগীদের পরিবারিক সূত্রে এমন তথ্য জানা যায়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, থাই গেম নামে একটি গেম চালু করেছে রংপুর জেলার মমিনপুর ১ নং ইউনিয়নের মহেশপুর উত্তরপাড়া ও খাড়–য়াবাধার কিছু কিশোর—তরুণ। এরা নিজেদের উদ্যোগে এই গেমটি মোবাইলে তৈরি করে। এরপর তারা নির্দিষ্ট অ্যাপ থেকে প্রবাসীদের কাছে এই গেম খেলার জন্য প্রস্তাব পাঠায়। তাদের খেলার প্রস্তাবে প্রবাসীরা রাজি হলে তারা নিজেরাই গ্রুপ তৈরি করে। সেই গ্রুপে নিজেরাই লিখতে থাকে যে ‘আমি এতগুলো টাকা পেয়েছি।’ আমি এই মুহুর্তে পাঁচলক্ষ টাকা জিতলাম। এই ধরণের লোভনীয় তথ্য দেখে প্রবাসীরা উদ্বুদ্ধ হয় খেলায়।
জানা যায়, যারা গেমটি তৈরি করেছে তারা নিজেরাই চারজন চারজন করে গ্রুপ তৈরি করে প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলে বিভ্রান্ত করেন । লোভে পড়ে প্রবাসীরা তাদের ফাঁদে পা দেয়। এসময় যারা খেলতে রাজি হয় তাদের লোভনীয় অফার দেয়া হয়। ‘আজ আপনি পাঁচলক্ষ টাকা দিলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই টাকা দশ লক্ষে উন্নীত হবে ‘ । এমন লোভনীয় অফারে প্রবাসী যিনি খেলছেন তিনি আগ্রহী হয়ে তার একাউন্ট থেকে পাঁচলক্ষ টাকা প্রতারক চক্রের একাউন্টে জমা করে। একজন প্রবাসী তার টাকা জমা করলেই সঙ্গে সঙ্গে চক্রটি তাদের সেই একাউন্ট বন্ধ করে দেয়। যে প্রবাসী টাকা জমা দিয়েছে সে আর ওই টাকার কোন হদিস করতে পারেনা।
মমিনপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়. প্রথম দিকে এই খেলায় শুধু ছেলেরা যুক্ত হতো। কিন্ত ধীরে ধীরে স্থানীয় মেয়েদেরও সঙ্গে নিয়ে এই চক্রটি এই খেলার নামে প্রতারণা করছে । সুত্রমতে, যেসব মেয়েরা এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তাদের কেউ স্বেচ্ছায় আসেনা। তাদের প্রথমে এই চক্রের কোন ছেলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে। এরপর সংঘবদ্ধভাবে ঐ মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী মেয়েটি বাধ্য হয় ঐ চক্রের হয়ে
কাজ করতে।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, যে ছেলেরা এই থাই গেম চক্রের সঙ্গে যুক্ত তারা কেউই চাকরি, ব্যবসার সাথে জড়িত নন। এরা অভিনব প্রতারণা করেই এলাকায় বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করছে। পাশাপাশি লাক্সারিয়াস জীবন যাপন করছে।
স্থানীয়রা জানান , অবিলম্বে ‘থাই গেম ‘ চক্রকে গ্রেফতার করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে, এদের হাতে সর্বশান্ত হবে বহু প্রবাসী ।
স্থানীয়দের অভিযোগ , এই চক্রের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছে তারা হলেন , নাজিমুল, মাহাবুর মুন্সীর ছেলে
ওসমান, মনিরের ছেলে ওমর ফারুক, গনির ছেলে কাজল, মনতাজের ছেলে লালমিয়া, মুসতাকিনের ছেলে আউয়াল, মোস্তফার ছেলে ঝন্টু, সাইফুল ইসলামের ছেলে সুমন ও স্বপন, মোশাররফ হোসেনের মেয়ে কাল্টি, মুনসুর আলীর ছেলে উস্তম, সাহেব
আলীর ছেলে রুবেল এবং এবজাল আলীর ছেলে হামিদুর।
সৌদি আরব প্রবাসী মো. আজহার এই চক্রের ফাঁদে পড়ে খুইয়েছেন বিশ লাখ টাকা। তার ছেলে মতিন জানায়, ‘ আমার আব্বা এই গেম খেলতো। পাঁচ লাখ করে চারটা ইমো নাম্বারে বিশ লাখ টাকা জমা করেন তিনি। এরপরই এই ইমো নাম্বারগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তখন আব্বা বুঝতে পারে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। এখন আমরা খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। আব্বাও অসুখে ভুগছে। টাকারও কিছু কূল-কিনারা করতে পারছি না। ‘
এ বিষয়ে রংপুর সদর থানার ওসি’র সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। তবে, তিনি এ বিষয়টির সম্পর্কে খোঁজ
নেবেন বলে জানান।
এইবাংলা/শিমু