::: নাদিরা শিমু :::
চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে কার্গো পণ্য খালাস বন্ধ রাখার কারণে বেকারত্বের চাপ সহ্য করতে না পেরে রিকসা চালিয়ে পরিবার চালাচ্ছেন সিএন্ডএফ কর্মচারীদের বড় একটি অংশ। কার্গো পণ্য খালাসের সময় সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করা কর্মচারীরা এখন দিনমজুর ; কর্মকর্তারাও হারিয়েছেন চাকরি।
আটারো নং জেটি সংলগ্ন রাস্তায় ব্যাটারি চালিত রিকসা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আব্দুর সবুর জানালেন বেকার জীবনের কস্টের কথা। মাসে ১৪ হাজার টাকা বেতনে সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে পরিবার ভালোই চলছিলো। কিন্তু মে মাস থেকে সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের বেতন অনিয়মিত হয়ে যায়। কার্গো খালাস বন্ধ, নতুন কার্গো ফ্লাইট আসছে না তাই মালিকের পরামর্শ অনুযায়ী কোনভাবে দিনযাপন করছেন।
চাঁন্দপুরের সবুর জানালেন, পাঁচ সদস্যের পরিবার চালাতে রিকসা চালাতে হচ্ছে। ভিন্ন কোন উপায় নেই। মালিকের ব্যবসা বন্ধ। কার্গো কবে চালু হবে তার ঠিক ঠিকানা নেই। তাই আপাতত চাকরিও নেই। ‘
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরের পঁচিশটব সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াইশো শ্রমিক কর্মচারী এখন বেকার। সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ পনের থেকে বিশ বছর নিয়মিত কার্গো খালাসের সাথে যুক্ত ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে অফিস ভাড়াও নিয়েছেন তারা। কিন্তু দীর্ঘ আটমাস ধরে কার্গো পণ্য খালাস নিয়মিত জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় শাহ আমানত কার্যত স্থবির। শাহ আমানত বিমানবন্দর কেন্দ্রিক সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে কোন কাজ নেই।
কার্গো হাউজ কেন্দ্রিক কাজ না থাকায় অলস সময় পার করছেন বিমানবন্দরের কর্মচারীরাও। প্রবাসী যাত্রীদের আনা কার্গো পণ্য খালাস বন্ধ রাখার কারণে রাজস্ব হারাচ্ছে শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ফ্লাইট থেকে যে রাজস্ব পেতো সেটিও বন্ধ।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য মতে, ইমপোর্ট কার্গো থেকে ২০২২ সালের জুনে বিমানবন্দর কার্গো ওয়্যার হাউস থেকে ২৫,৫৪,৬৭৩ টাকা আয় হয়েছে । একই বছরের জুলাই মাসে ৩২,২২,৩৪২ টাকা, আগস্টে ২৯,৭৭,৭৬২ টাকা, সেপ্টেম্বরে ২১,৪৭,০৮৪ টাকা, অক্টোবরে ৯,৮৪,২৭১ টাকা, নভেম্বরে ১০,০৮,০৬৭ টাকা আয় হয়। বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখার পর ডিসেম্বর মাসে গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার কারনে পণ্য খালাস চালু করা হলে শুধু ডিসেম্বরেই ১,৪৪,৩৫,৬৪৪ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।আর কার্গো খালাস বন্ধ থাকার কারণে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে আয় নেমে আসে চার লাখ টাকায়। চলতি বছরের মার্চ মাসে আয় হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা।
ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন কার্গো খালাস চালু করার দাবি জানিয়ে। গেল এপ্রিল মাস থেকে কনসাইনমেন্ট খালাস বন্ধ রেখেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে কাস্টমসের দাবি নিয়ম না মেনে পণ্য আনার কারনে বন্ধ রাখা হয়েছে পণ্য খালাস। সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের দাবি ‘এ’ ফর্ম দাখিল করার পরও কাস্টমস কমিশনার গায়ের জোরে পণ্য খালাস বন্ধ রেখেছেন। এনবিআর এর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোন প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। তবে কেন প্রবাসীদের আনা কার্গো পণ্য আটকে রাখা হয়েছে এমন প্রশ্ন সিএন্ডএফ কর্মচারী কর্মকর্তাদের।
‘এসআরও ‘ পরিবর্তন করা ছাড়া কাস্টমস কমিশনারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বেচ্ছাচারিতা বলছেন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা।
ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী একজন যাত্রী পয়ষট্টি কেজি পণ্য নিজের সাথে আনতে পারেন। বাড়তি পণ্য শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে কার্গো করে আনার সুযোগ রয়েছে। প্রতিটি আইটেম সর্বোচ্চ পনের কেজি করে আনার সুযোগ রয়েছে আইনে। কিন্তু ব্যাগেজ রুলের ধার ধারেন না কাস্টমস কমিশনার ফায়জুর রহমান। কার্গো হাউজে প্রবাসীদের আনা পণ্য পড়ে থাকার কারণে বাড়তি মাসুলের বোঝাও ভারী হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেসার্স মুনির আহমদ নামের অন্য একটি সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান তাদের সব কর্মচারীদের ছাঁটাই করে দিয়েছেন কোরবানি ঈদের আগে। বিমানবন্দরে কার্গো সংক্রান্ত কোন ফাইল না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা গুটিয়ে আনার সব প্রস্তুতি নিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মচারীও বর্তমানে একটি খাবার হোটেলে কাজ করছেন।
একই অবস্থা দেরা দুবাইয়েও। দুবাই প্রতিনিধির দেয়া তথ্য অনুযায়ী কার্গো ব্যবসা বা ফরওয়ার্ডিং ব্যবসার সাথে জড়িত একশোর বেশি দেশি কার্গো হাউজ প্রতিদিন লোকসান দিচ্ছে। একারণে কর্মচারীদের ছাঁটাই করেছেন এসব প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া প্রবাসী গ্রাহকদের যারা দেশে কার্গো ফ্লাইটে পণ্য পাঠিয়েছেন তারাও পণ্য খালাস না হবার কারণে একে একে মামলা করছেন কার্গো হাউজের বিরুদ্ধে।
এইবাংলা /তুহিন