24.3 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

সরকারি টাকায় প্রকৌশলীর বাড়ির রাস্তা

আরও পড়ুন

::: তানভীর আহমেদ :::

সড়ক ও জনপদ বিভাগের দোহাজারি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ ক্ষমতা খাটিয়ে নিজের বাড়ির রাস্তা নির্মাণ করেছেন সরকারি টাকায়। সড়কে লাগানো হয়েছে তার পিতা মাতার নামে দৃষ্টিনন্দন সাইনবোর্ড।

চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের দোহাজারির কমল মুন্সি হাট ও ভাইয়ের দিঘি নামক স্থানের মাঝামাঝি স্থানে ‘ যোগেন্দ্র মাধুরী সিংহ ‘ সড়কের দৃষ্টিনন্দন সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে। ২০০ মিটার একটি রাস্তা প্রকৌশলীর দাদা-দাদি যোগেন্দ্র-মাধুরী সিংহের নামে, আর ১৫০ মিটারের আরেকটি রাস্তায় তাঁর মা-বাবা সুহাসিনী-প্রণবের নামে ফলক বসানো হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সড়কের  ‘  স্প্রিড ব্রেকার ‘ বসানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি সাইনবোর্ড পথচারীদের দৃস্টি আকর্ষণ করে। দুরপাল্লার গাড়িগুলোকে সড়কটির কাছে এসে গতি কমাতে হয় গতিরোধকের জন্য। অবাঞ্ছিত এই গতিরোধকের কারণে দূর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ালেও সুমন সিংহের ইচ্ছায় বসেছে স্প্রিড ব্রেকারও।

২০০ মিটারের রাস্তাটি শেষ হয়েছে  সড়ক বিভাগের এই নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহের আলিশান বাড়ির গলির মুখে গিয়ে। শুধু তাই নয় গলির মুখ থেকে এই প্রকৌশলীর বাড়ির আঙিনা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে ১৫০ মিটারের আরেকটি রাস্তা। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কথাকচুয়াই গ্রামের এই দুই রাস্তাই নির্মাণ করা হয়েছে  সরকারি টাকায়। কিন্তু নামকরণ হয়েছে সেই প্রকৌশলীর মা-বাবা ও দাদা-দাদির নামে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রাস্তা দুটির উপকারভোগীও তাঁর পরিবার।একটিমাত্র পরিবারের জন্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তার প্রকল্প নেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ ছাড়া রাস্তার নামকরণ নিয়েও রয়েছে স্থানীয় মানুষের  আপত্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০ মিটারের রাস্তাটির প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৬ টাকা। এলজিইডির অর্থায়নে এটি নির্মাণ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স। গলির মুখ থেকে এই প্রকৌশলী সুমন সিংহের বাড়ির আঙিনা পর্যন্ত ১৫০ মিটারের রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৬ লাখ ৬ হাজার ৫৩৬ টাকা ব্যয়ে। এটির কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইব্রাহীম অ্যান্ড ব্রাদার্স। ১ জুলাই স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এই সড়ক উদ্বোধন করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার প্রান্ত ছুঁয়ে গড়ে তোলা প্রকৌশলীর সুরম্য বাড়িতে বসানো হয়েছে চারটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সোলার লাইট ও কয়েকটি সিসি ক্যামেরা। কয়েক কোটি টাকা খরচে চারতলার এই বাড়ি সম্প্রতি নির্মাণ করা হলেও আগের টিনশেড ঝুপড়িঘরটি এখনো বর্তমান। এই বাড়িতে যাতায়াতের জন্যই নির্মাণ করা হয় রাস্তাগুলো। এতটুকু রাস্তায় দুটি বড় নামফলকও বসানো হয়েছে।

এই রাস্তা দুটির নামকরণ নিয়ে বেশ আপত্তি আছে এলাকার লোকজনের। তাঁদের দাবি, আগে এই রাস্তার নাম ছিল তালতলা টু অলির হাট সড়ক। প্রকৌশলী প্রভাব খাটিতে নিজের রাস্তার নাম বদলিয়েছেন।

নামকরণ নিয়ে এই অভিযোগ লিখিত আকারে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লেওয়া-ই আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল আলম ফকির। তিনি বলেন, আগে এই সড়কের আরেক নাম ছিল। কিন্তু প্রকৌশলী সুমন সিংহ সেটার কোনো তোয়াক্কা করেননি। এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, স্থানীয় সংসদ সদস্য, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

সরকারি অর্থে নিজের পরিবারের জন্য রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে কথা বলতে প্রকৌশলী সুমন সিংহকে ফোন করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে বলেন, ‘অফিসে আসেন, এই বিষয়ে তখন কথা বলব।’

পরে এলজিইডি, চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সুমন তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তবে সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির নামে বর্তমানে সড়কের নামকরণ করা যায় না। মুক্তিযোদ্ধা কিংবা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম আছে মাত্র।

সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী নিজ এলাকায় কর্মক্ষেত্র বেছে নেওয়ার কোন সুযোগ না থাকলেও, পটিয়ার সুমন সিংহ বহাল তবিয়তে দোহাজারিতে নির্বাহী প্রকৌশলীর চেয়ার আছেন বেশ কয়েক বছর।

এইবাংলা/ তুহিন

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর