তীব্র ঠান্ডায় বিপর্যস্ত উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের জনজীবন

0
34

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

 

উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কয়েক দিন ধরে সূর্যের দেখা না মিললেও শীতের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পুরো এলাকা। দিনের বেলায়ও অনেক সড়কে যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। তীব্র ঠান্ডা আর হিমেল বাতাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।

দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় কুড়িগ্রাম জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিতে দিনমজুর, নৌকার মাঝি, কৃষি শ্রমিক, রিকশা ও ভ্যানচালকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় থমকে গেছে। ভোরে কাজে বের হতে না পারায় তাদের আয় বন্ধ হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে নদী ও সড়কপথে চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নদী এলাকায় কুয়াশার ঘনত্ব বেশি থাকায় নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এতে নৌকার মাঝিরা কয়েক দিন ধরে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। একই সঙ্গে কৃষি কাজেও স্থবিরতা নেমে এসেছে।

কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের কৃষক মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, ভোরে কাজে বের হলে হাত-পা শক্ত হয়ে আসে। কাজ নেই, আয় নেই, অথচ সংসার চালাতে হয়।

এই শীতে তারা বড় বিপদে পড়েছেন। চিলমারী উপজেলার নৌ বন্দর এলাকার নৌকার মাঝি মো. কাশেম মিয়া জানান, নদীতে কুয়াশা এত বেশি যে নৌকা চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিন দিন ধরে কোনো কাজ নেই বলে তিনি জানান।

কুড়িগ্রাম জেলার পৌর শহরের বাসিন্দা মোছাঃ আমেনা বেগম বলেন, তীব্র ঠান্ডায় গবাদিপশু নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে ছাগলের গায়ে গরম কাপড় দিতে হচ্ছে।

অনেক এলাকায় মানুষ খড়কুটো ও কাঠ জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শীতের তীব্রতা বাড়লেও চরাঞ্চলে এখনো পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র পৌঁছায়নি।

সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন চরাঞ্চলের দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ।

কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ রহিম উদ্দিন হায়দার রিপন বলেন, শহর এলাকায় শীত কিছুটা সহনীয় হলেও চরাঞ্চলে পরিস্থিতি ভয়াবহ।

এখানকার মানুষ দিন এনে দিন খায়। কাজ বন্ধ মানেই না খেয়ে থাকা।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ স্বপন কুমার বিশ্বাস জানান, ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বেড়েছে।

শীতজনিত রোগ প্রতিরোধে গরম কাপড় ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন জানায়, ইতোমধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলায় ৫৪ লাখ টাকার ২২ হাজার কম্বল কিনে শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র বলেন, কুড়িগ্রাম জেলায় তাপমাত্রা আরও কমতে পারে, ফলে শীতের প্রকোপ অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

এই বাংলা/এমএস

টপিক 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here